আমার এই লেখা কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণের উদ্দেশ্যে লেখা নয়। অনেকেই ভুল ক'রে সেটা নিজের দিকে টেনে নিয়ে আমার বক্তব্যের ভুল অর্থ ক'রে আমাকে ভুল বুঝে থাকেন ও অপমান ক'রে বসেন। তা'তে আমি দুঃখ পাই না। যাজন করতে গিয়ে পড়াশুনা, অভিজ্ঞতা, উপলব্ধির নিরিখে মতবিরোধ হ'য়ে থাকে ও হ'তেই পারে। আমার সহ্জ সরল উপলব্ধিঃ যাজনে মতান্তর হ'তেই পারে, মনান্তর যেন না হয়। ভুল হ'লে আমরা শুধরে নিতে পারি আর অবশ্যই তা ঠাকুরের বলাকে মেনে নিয়েই। কিন্তু যেন ইগো কে স্ট্রং ক'রে আক্রমণ ক'রে না বসি একে অপরকে। কারণ আমরা সৎসঙ্গী গুরুভাইবোন।
আমি আমার সবচেয়ে বড় যে শত্রু 'দুর্বলতা' যে ঘাপটি মেরে বসে রয়েছে আমার হৃদয়ে ও মনের আনাচে কানাচে উদারতার ভঙ্গিতে ভালোমানুষের সাজে, ভক্ত মানুষের ছদ্মবেশে তাকে চিহ্নিত ক'রে একেবারে উপড়ে নিয়ে গোড়া থেকে খতম ক'রে দেওয়ার সাধনা এই জন্মে আমার আর তাই হয়তো মতবিরোধ হ'য়ে পড়ে অনিবার্যভাবেই। একে আমার জ্ঞান দান ব'লে যারা কটাক্ষ ক'রে থাকেন তারা আমার সব সন্তান সম সৎসঙ্গী। তাই দুঃখ বা কষ্ট হয় তাদের আগামীদিনের কথা ভেবে।
যাই হ'ক, আমার মূর্তি পুজো ও শ্রীশ্রীঠাকুর (১) আমি যেখানে শেষ করেছিলাম সেই লেখাটা আবার লিখেই শুরু করছি এই প্রতিবেদন।
"------------------ এবার দেখে নিই আমার দয়াল ঠাকুর কোথায় কোথায় কখন কাকে কি বলেছেন বা কি আচরণ করেছেন এই অমূর্ত ভগবান (Unseen God)-এর পুজো প্রসঙ্গে।"
(১) শ্রীশ্রীঠাকুর তাঁর সত্যানুসরণ গ্রন্থে পরিস্কারভাবে স্পষ্ট ভাষায় বললেন, "ভারতের অবনতি (degeneration) তখন থেকেই আরম্ভ হয়েছে, যখন থেকে ভারতবাসীর কাছে অমূর্ত ভগবান অসীম হ'য়ে উঠেছে------ঋষি বাদ দিয়ে ঋষিবাদের উপাসনা আরম্ভ হয়েছে।"
এখানে তিনি দু'টো বিষয় পরিষ্কার ক'রে দিয়েছেন। প্রথমতঃ ভারতের অবনতির কারণ বলতে গিয়ে তিনি ভারতবাসীর অমূর্ত ভগবান (Unseen God)-এর প্রতি সীমাহীন নির্ভরতার কথা বলেছেন। আর, মুখে মারিতং জগতের মত শুধু ঋষির কথাগুলি প্রবচনের মাধ্যমে আউড়ে আউড়ে জগৎ মাতিয়ে গেছে ভারতবাসী কিন্তু ঋষিকে জীবন থেকে মাইনাস ক'রে দিয়েছে।
(২) একবার এক মা যিনি সবসময় ঠাকুরের সেবায় লেগে থাকতেন তাঁর পুরীর জগন্নাথদেবের দর্শন লাভের ইচ্ছা হয়েছিল। ঠাকুরের কাছে সে কথা বারবার জানানোই ঠাকুর তাঁকে যাওয়ার অনুমতি দেন। পুরীর জগন্নাথ দর্শন শেষে আশ্রমে ফিরে যখন সেই মা জগন্নাথ দেবের বর্ণনা দিচ্ছেন তখন ঠাকুর কথাচ্ছলে বলেছিলেন,
"জীবননাথকে হেলায় ফেলে জগন্নাথকে দেখতে গেলি
জীবননাথই যে জগন্নাথ অহংকারে দেখতে না পেলি।"
------এইখানেই এই বাণীর মধ্যে দিয়ে দয়াল ঠাকুর অমূর্ত ভুগবানের পূজারীদের উদ্দেশ্যে তাঁর রহস্যময় পরিচয়ের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। যা সমঝদারকে লিয়ে কাফি হোতা হ্যাঁয়।
(৩) একবার শিবরাত্রির পুজোর দিন আশ্রমের মায়েরা বাবাধামে শিবের পুজো দিতে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করলে ঠাকুর সমস্ত ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। গাড়িতে ক'রে মায়েদের নিয়ে যাবার ব্যবস্থা হয়েছিল। একবারে সব মায়েদের নিয়ে যাওয়ার অসুবিধা থাকায় কয়েকবারে নিয়ে যাবার ব্যবস্থা করা হয়। এইভাবে একটা সময় গাড়ি আসতে দেরী করায় (সম্ভবত গাড়ি খারাপ হয়) পুজোর সময় উত্তীর্ণ হ'য়ে যাবার আশংকায় মায়েরা উদ্বিগ্ন হ'য়ে পড়ে। গাড়ি সময় মতো এসে না পড়ার কারণে সময় যখন প্রায় শেষ হ'য়ে যাওয়ার উপক্রম হয় তখন মায়েরা ছুটে এসে ঠাকুরের কাছে তাদের পুজো দিতে যেতে না পারার কারণ নিবেদন করেন তখন মায়েদের সারাদিন উপোস থাকা শুকনো করুণ মুখের দিকে তাকিয়ে দয়াল ঠাকুর মায়েদের দিকে তাকিয়ে শশব্যস্তে বলেছিলেন, তাড়াতাড়ি পুজোর যা কিছু আছে নিয়ে আয়। ঠাকুরের কথা শুনে মায়েরা পুজোর সামগ্রী সব এনে ঠাকুরের সামনে উপস্থিত হ'লে ঠাকুর মদু হেসে নিজের দুই হাতের তালু বাড়িয়ে বলেছিলেন, দে, দে তাড়াতাড়ি দে, তোদের যা দেবার। মায়েরা সেই দৃশ্য দেখে সবিষ্ময়ে দয়ালের দুই হাতের তালুতে জল ঢালতে লাগলেন। সে এক অপরূপ দৃশ্য! মায়েরা একে একে জল ঢেলে চলেছেন দয়ালের দুই হাতের তালুতে আর সেই জল হাতের তালু গড়িয়ে এসে পড়ছে দয়ালের চরণ যুগলে। এই অভুতপূর্ব দৃশ্য দেখে মায়েরা সেদিন স্তম্ভিত হ'য়ে গিয়েছিল। সেদিন যে মায়েরা বাবাধামে পুজো দিতে যেতে পারেনি সেই মায়েরা উপলব্ধি করলো তাদের জীবনে শ্রেষ্ঠ শিবপুজো পালন হ'লো জীবন্ত শিবের চরণ বন্দনায়। সেই মায়েদের জীবন ধন্য হয়েছিল সেদিন। সার্থক হয়েছিল জীবনে শিবব্রত পালন। সেই থেকে মায়েরা প্রতিবছর শিবপুজোর দিন শিবব্রত পালন করতো ঠাকুরের সামনে, বাবাধামে যাওয়ার আর দরকার মনে করেনি মায়েরা।
এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে আমার দয়াল ঠাকুর অমূর্ত ভগবান শিবের পূজারিদের উদেশ্যে মূর্ত ভগবান শিবের উপস্থিতি তাঁর রহস্যময় কার্যক্রমের মাধ্যমে তুলে ধ'রে এক মেসেজ দিলেন।
(৪) আমরা এটাও জানি একেবারে ছোটোবেলায় জমিদার উমেশ লাহিড়ীর ঠাকুরঘরের ঘটনা। সেদিন উমেশবাবু ঠাকুরঘরে ঢুকেই হতবাক হ'য়ে গেলেন। ছোট্ট অনুকূল ঘরে ঢুকে আসন থেকে বিগ্রহ, পট ইত্যাদি সবকিছু মাটিতে ফেলে দিয়ে নিজেই আসনে বসে আছে। জমদার উমেশবাবুকে দেখে ছোট্ট শিশু অনুকূল হাসতে থাকে। কোনও ভয়ের লেশমাত্র নেই চোখেমুখে! উমেশবাবু রাগ করলেন না। শিশু অনুকূলের মন ভোলানো প্রাণ জুড়ানো সরল মিষ্টি হাসি দেখে নিজেও হাসতে লাগলেন। মাতা মনোমোহিনী দেবী ছুটে এলেন। এ দৃশ্য দেখে ক্রূদ্ধ হ'লেন, শিশুকে মারতে উদ্যত হ'লেন। জমিদার উমেশবাবু নিষেধ করলেন শিশুকে মারতে। তিনি উপভোগ করতে লাগলেন এই অপরূপ রহস্যময় দৃশ্য!
এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে বালক অনুকূল অমূর্ত নারায়ণের (Unseen Narayana) পূজারী উমেশবাবুকে এবং সমগ্র হিন্দু সমাজের অমূর্ত ভগবান নারায়ণের Unseen God Narayana) পূজারী ভক্তদের মূর্ত নারায়ণের ( Seen Narayana) উপস্থিতির জ্বলন্ত মেসেজ দিলেন।-------প্রবি।
ক্রমশঃ
No comments:
Post a Comment