Powered By Blogger

Monday, July 10, 2023

প্রবন্ধঃ নির্ভর করুন, নির্ভর করুন, নির্ভর করুন!

সৎসঙ্গ ঠিকমত হয় না, একঘেঁয়ে গান, অল্প সময় ঠাকুরের কথা হয় তাও ঘুরে ফিরে একই কথা, থোড় বড়ি খাড়া খাড়া বড়ি থোড়! যারা ঠাকুরের কথা শুনতে যায় তাদের তৃপ্তি হয় না! প্রতি সৎসঙ্গে গাইতে পারুক আর না পারুক, বলতে পারুক আর না পারুক তাদের গাইতে দেবার, বলতে দেবার কোনও মানে হয় না ইত্যাদি ইত্যাদি কথাগুলি শুনতে হয় সৎসঙ্গী বন্ধুদের কাছে, দাদা ও মায়েদের কাছে! তারা যারপরনাই বিরক্ত কিন্তু কিছু বলতে পারে না। তাই তারা আমার নানা লেখা পড়ে আমাকে মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে তাদের ক্ষোভ জানায়। তাই তাদের উদ্দেশ্যে আমার আজকের এই লেখা।
বক্তাদের এই অভিজ্ঞতা ও উপলব্ধি একেবারে সঠিক। সৎসঙ্গ আজ আখড়া বাজিতে পরিণত হয়েছে। ব্যাপারটা 'পড়েছো মোগলের হাতে খানা খেতে হবে একসাথে' এরকম হ'য়ে দাঁড়িয়েছে। কিছুই উপায় নেই। সৎসঙ্গ করার উদ্দেশ্য কি, না জানে যারা সৎসঙ্গ দেয় তারা, না জানে সৎসঙ্গ পরিচালনা করে যারা তারা! যদিও আমি সবার কথা বলছি না; ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে তবে তা ঐ 'ব্যতিক্রম'! 'সৎসঙ্গ' বাড়ির সত্য নারায়ণ পুজো আর শনিপুজার মত হ'য়ে দাঁড়িয়েছে। সৎসঙ্গ দিলে বাড়ির মঙ্গল হয় অতএব বাড়িতে একটা সৎসঙ্গ দাও আর হাঁউ মাউ কাউ ক'রে কোনরকমে ১ঘন্টা খুব বেশী হ'লে ১-৩০ঘন্টা টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাও, ব্যাস তাহ'লেই বাড়ির মঙ্গল হ'য়ে যাবে!!!! তারপরে প্রসাদ নিয়ে বাড়ি যাও! সেই সৎসঙ্গে আমরা পুরুষ যারা সাদা জামা কাপড় পড়ে সামনে আলো ক'রে বসেছিলাম সেইসমস্ত সৎসঙ্গ জগতের স্বঘোষিত কেউকেটারা সামনে বসে থাকা মায়েদের সামনে, পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা দাদাদের সামনে, ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের সামনে যাজনের নামে আধ খেঁচড়া, ভাঙা ভাঙা, ভুলভাল, অসম্পূর্ণ পরস্পর সম্পর্কহীন কথা আউড়ে নিজেকে বড় ভক্ত সাজিয়ে হামবড়াই চালে ছক্কা চালিয়ে দিলাম ভেবে মনে মনে মনকলা খেয়ে সাথে প্রণাম, প্রণামী আর প্রসাদ (p3) নিয়ে বেরিয়ে এলাম! কাল যে দীক্ষা নিয়েছে আজ সে বড় ভক্তের ভূমিকা পালন করছে আর মনে মনে ভাবছে বিরাট সৎসঙ্গ করে এলাম! আবার কেউ কেউ ভাবছে এ তো বেশ বড়ো কমিউনিটি এখানে ব্যবসা বাড়াবার বিরাট সুযোগ! একবারও ভেবে দেখবার প্রয়োজন মনে করি না যে,
সৎসঙ্গ অধিবেশন ঠাকুর কেন চালু করেছিলেন!?
সৎসঙ্গ করে এলাম নাকি বটতলার কীর্ত্তন পার্টি ক'রে এলাম!?
সৎসঙ্গে কারা ছিল!?
মায়েদের সংখ্যা বেশী ছিল নাকি দাদাদের সংখ্যা!?
মায়েদের সংখ্যা যদি বেশী থাকে তাহ'লে কেন বেশী!?
দাদাদের সংখ্যা যদি কম থাকে তাহ'লে কেন কম!?
মায়েরা বা দাদারা যারা ছিল তারাই বা কি পেল!?
তারা কি সত্যি সত্যিই আনন্দ পেল!?
পথ পেল!? সমাধান পেল!?
ইয়ং জেনারেশন কি ছিল!?
বাড়ির ইয়ং ছেলে বা মেয়েটা কি ছিল!?
বাড়ির কর্তা বা কর্ত্রী কি ছিল!?
কেন বাড়ির ছেলে বা মেয়েরা সৎসঙ্গে উপস্থিত থাকে না!?
তাদের কাছে কেন সৎসঙ্গ ভালো লাগে না!? উপভোগ্য নয়!?
বাড়ির মা কি সৎসঙ্গ উপভোগ করতে পেরেছে!?
নাকি সৎসঙ্গী দাদাদের আপ্যায়নের ঠেলায় ঘেমেনেয়ে অস্থির হ'য়ে বাড়ির মঙ্গল কামনায় পরিশ্রমকে হাসিমুখে বাড়ির 'শনিপুজো, সত্যনারায়ণ পুজো, লক্ষীপুজো, বিপদতারিণী পুজো, মনসা পুজো, সন্তোষী পুজো, মুশকিল আসান পুজো ইত্যাদি ইত্যাদি ব্রত পালনের মত ধর্মানুষ্ঠান ভেবে নিয়ে মুখ বুজে সহ্য করেছে!?
অদীক্ষিতরা (যদি কেউ এসে থাকে) সৎসঙ্গ সম্পর্কে কি ধারণা নিয়ে ফিরে গেল!?
দীক্ষিত-অদীক্ষিত সৎসঙ্গ শেষে সৎসঙ্গ অধিবেশন ও অন্যান্য ধর্মানুষ্ঠানের মধ্যে কোনও ফারাক খুঁজে পেল!?
কাল দীক্ষা নিয়ে আজ খুব উদ্দীপিত ও উত্তেজিত আবার কাল নিষ্প্রভ ও অনুত্তেজিত! কেন!?
এইসব বিষয় কি আমরা ভেবে দেখি!?
দেখি না! কেন দেখি না!?
কেন ভেবে দেখি না সৎসঙ্গ কি মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হ'য়ে উঠছে!? সৎসঙ্গ কি প্রাণবন্ত হচ্ছে!?
সৎসঙ্গের মধ্যে দিয়ে কি ঠাকুরের ইচ্ছা, স্বপ্ন, মিশন পূরণ হচ্ছে!?
আমরা কি ভেবে দেখি, কেন যোগ্য ও দক্ষ ঠাকুর অনুগামীরা পিছনের সারিতে চলে যাচ্ছে!?
কাদের জন্য যোগ্য ও দক্ষ অনুগামীরা সৎসঙ্গ থেকে উচ্ছেদ হ'য়ে যাচ্ছে!?
যাদের জন্য উচ্ছেদ হ'চ্ছে তারা কি ভেবে দেখে তাদের এই অপরাধ, অন্যায়-এর কথা ও এর পরিণতি!?
তারা কি ভেবে দেখে তাদের এই নোংরা ও ঘৃণ্য পদক্ষেপের জন্য সৎসঙ্গের কি বিরাট ক্ষতি হচ্ছে ও ঠাকুর কি পরিমান ব্যাথা পাচ্ছে!?
এই উচ্ছেদ হওয়ার জন্য কি যোগ্য ও দক্ষ অনুগামীরা নিজেরা কি দায়ী!?
নিজেরা দায়ী হ'লে কেন দায়ী, কি জন্যে দায়ী তা কি তারা ভেবে দেখে নাকি অন্যকে দায়ী করে!? কিংবা নিজেদের কি শুধরে নিই বা নেবার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করি!?
এরকম অনেক কিছু আমরা ভেবে দেখি না!
আমরা কি ভেবে দেখি,
গান যে গাইছে তার গান মানুষের ভালো লাগছে কিনা!?
আমরা কি ভেবে দেখি আমরা যারা ঠাকুরের কথা বলছি তা ঠাকুরকে মানুষের কাছে ঠিকঠিক পৌঁছে দিচ্ছে কিনা!?
আমরা কি ভেবে দেখি যারা গান বা বক্তৃতা শুনছে তারা কি গান শুনে বা বক্তৃতা শুনে তৃপ্তি পাচ্ছে কিনা!?
এছাড়াও আরও অনেক কিছু আছে!
সৎসঙ্গে বসে ঠাকুরের সামনেই পাশের জনের সঙ্গে গল্প করছি!
সৎসঙ্গে ফোন আসছে, ফোন রিসিভ করছি, ফোনে নির্দ্বিধায় কথা বলে যাচ্ছি!
সৎসঙ্গে বসে বসেই 'একে বলতে দেবো না, ওকে গাইতে দেবো না' প্ল্যান করছি!
সৎসঙ্গ এক ঘন্টা থেকে দেড় ঘন্টা হ'তে না হতেই ঘড়ি দেখা শুরু হ'য়ে যাবে সে যতই কেউ ভালো গান করুক আর বক্তৃতা করুক না কেন!
কেউ একটু ভালো গাইলেই বা ভালো বললেই তাকে ঘড়ি দেখে সময়ের দোহাই দিয়ে নিষ্ঠাবান ভক্তের ভক্তির আতিশয্যে থামিয়ে দিই!
আজকের প্রজন্ম বলে সৎসঙ্গ ১ঘন্টা থেকে খুব বেশি হ'লে ১-৩০ঘন্টা! এর বেশী হ'লে সেটা সৎসঙ্গ নয়, জলসা! এরা জানেই না শ্রীশ্রীবড়দা সৎসঙ্গ দেড় ঘন্টা থেকে দু'ঘন্টার কথা বলেছেন!
তাই কেউ যদি একটু অন্যরকম কিছু ভাবে বা ভাবতে চায় তাহ'লে তাকে পিছনে ঠেলে দাও! পিছনে ঠেলে দাও পাঞ্জার জোরে কিম্বা টাকার জোরে! যদি থাকতে চাও তাহ'লে পিছনে পিছনে ঘুরতে থাকো! আর যদি আত্মসম্মান বা আত্মমর্যাদাবোধ বেশী থাকে তাহ'লে দরজা খোলা আছে সোজা রাস্তা দেখে নিতে পারো! নিজে থেকে যদি রাস্তা দেখে নিতে পারো তো ভালো নাহ'লে রাস্তা দেখিয়ে দেওয়ারও চ্যালা চামুন্ডা মজুত আছে! সৎসঙ্গ পতাকার তলায় থেকে ব্যবসা বাড়ানো, পাঞ্জার ধান্ধায় ব্যস্ত থাকা অদক্ষ, অযোগ্য চ্যালা চামুন্ডারা দক্ষ ও যোগ্য লোককে দেবে খেদিয়ে!
প্রশ্ন হচ্ছে যারা গুণী মানুষ, শিক্ষিত ভদ্র মানুষ তারা এইসব আহাম্মকি কি মেনে নেবে!? গুণী মানুষ, শিক্ষিত মানুষ পরিবেশ খোঁজে! তারা শান্ত, স্নিগ্ধ পরিবেশ চায়! তাঁরা সবার সামনে যে কোনও পরিবেশে অদক্ষ, অযোগ্য পরিচালকের হাতে অসম্মানিত হ'তে চাইবেন কি!? চাইবেন না! এমন গুণী মানুষ সৎসঙ্গে কোনভাবে যদি এসে উপস্থিত হয় আর তাঁকে গান, বক্তৃতা পরিবেশনের সময় স্থান, কাল, পাত্র হিসাবে চলতে না শেখা অযোগ্য, অদক্ষ পরিচালক যদি ঘড়ি ধ'রে চলতে শেখায় তখন স্বাভাবিকভাবেই সেই গুণী মানুষটি ছন্দ হারিয়ে বসে এবং পরবর্তীতে তাঁর আর আসার ইচ্ছা থাকে না!
তাই সবার স্থান সব জায়গায় নয়! গভীর জলের মাছ গভীর জলে আর কম জলের মাছ কম জলে স্বাভাবিক থাকে আর এর উল্টো হ'লেই অস্বাভাবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
এইজন্য স্থান, কাল, পাত্র অনুযায়ী সৎসঙ্গও বিশেষ হ'য়ে ওঠে! ঘরে ঘরে ছোট ছোট সৎসঙ্গের সঙ্গে সঙ্গে বাইরে প্রকাশ্যে বিশেষ বিশেষ স্থানে বিশেষ সৎসঙ্গ আয়োজনের প্রয়োজন হয়! সেই প্রয়োজন মাথায় রেখে 'বিশেষ সৎসঙ্গ'-এর আয়োজন শুরু করি বিভিন্ন স্থানে!
বেশ কয়েক বছর এইভাবে চলার পর ২০১৫ সালের ১০ই অক্টোবর সকালবেলায় শ্রীশ্রীবাবাইদাদার কাছে নিবেদন করি বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে এই 'বিশেষ সৎসঙ্গ' আয়োজনের কথা! নিবেদন করি শেষ আয়োজিত 'বিশেষ সৎসঙ্গ'-এর প্রণামী জমা করার কথা! এর আগে আয়োজিত 'বিশেষ সৎসঙ্গ'-এর প্রণামী কখনো 'সৎসঙ্গ সংগীত সন্ধ্যা', কখনো বা সেই অঞ্চলের কোনো গুরুভাইয়ের নামে জমা পড়েছিল। ১০ই সেপ্টেম্বর সকালবেলায় বাবাইদাদার শ্রীচরণে নিবেদন করলে তিনি ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন জায়গায় প্রকাশ্যে এই বিশেষ সৎসঙ্গ আয়োজনের কথা শুনে খুশী হ'য়ে বলেন, "বিশেষ সৎসঙ্গ ব'লে কোনও কথা নেই! প্রতিটি সৎসঙ্গ-ই যেন বিশেষ হ'য়ে ওঠে! এই অল্প কথার মধ্যে দিয়ে বাবাইদাদা অনেক কথায় বলে দিয়েছিলেন সেদিন! বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার! বাবাইদাদাকে সেদিন আরও বলেছিলাম, এই বিশেষ সৎসঙ্গ কখনো কখনো দু'ঘন্টারও অনেক বেশী হ'য়ে যায়! আমি কি কিছু ভুল করছি, দোষ করছি? সেই কথা শুনে তিনি বলেছিলেন, কি হয় সেখানে? দু'ঘন্টার উপরে কি করেন? আমি চুপ ক'রে থাকি। কিছুক্ষন পর তিনি নিজেই ব'লে উঠলেন, গান হয়, কীর্ত্তন হয়, ঠাকুরের কথা আলোচনা হয়; আর কি হয়! কিসের দোষ? দোষ কিসের? কোনও দোষ হয়নি! তবে ঠাকুরের নির্দেশমত চলা উচিত। আর সৎসঙ্গ যাতে প্রাণবন্ত হয় সেদিকে নজর রাখবেন।আমি বললাম, সৎসঙ্গে প্রচুর লোকের সমাগম হয়! ভালো শিল্পী, বক্তা সেখানে সঙ্গীত, ঠাকুরের কথা পরিবেশন করে। তখন তিনি হাসি মুখে বললেন, খুব ভালো! সবসময় লক্ষ্য রাখবেন সৎসঙ্গ শেষে মানুষ যেন আনন্দ নিয়ে বাড়ি ফিরে যায়! তারপরে আরো অনেক কথা বললেন। প্রণামী ফিল্যান্ট্রোফি অফিসে জমা করে দিতে বললেন। আর তখনই আশীর্বাদ নেবে এলো ভদ্রকালীর উপর! জন্ম হ'লো ভদ্রকালী সৎসঙ্গ কেন্দ্রের! তারপরে 'সৎসঙ্গ, দীক্ষা, ইষ্টভৃতি' এই তিন বিষয়ের ওপর দাঁড়িয়ে চলার নির্দেশ দিলেন। এই তিন বিষয়ে তিনি বিস্তারিত আলোচনা ক'রে বুঝিয়ে দিলেন আমায় কি করতে হবে!
সেই থেকে আজও চলে আসছে বাবাইদাদার নির্দেশ মত ভদ্রকালী সৎসঙ্গ কেন্দ্রের পথ পরিক্রমা! প্রতি মাসের শেষ রবিবার বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে প্রকাশ্যে বিভিন্ন ক্লাবের হলঘরে, পুজো মণ্ডপে, মাঠে হ'য়ে আসছে 'বিশেষ সৎসঙ্গ'! প্রচুর দীক্ষিত-অদিক্ষিতদের আগমনে জমে ওঠে সৎসঙ্গ! সৎসঙ্গ শেষে চা-সিঙ্গাড়া সঙ্গে মিষ্টি, কচুড়ি, আলুরদম দিয়ে প্যাকেট পরিবেশন করা হয় উপস্থিত ভক্তমণ্ডলীর মধ্যে! সবচেয়ে ভালো লাগে যখন সৎসঙ্গ শেষে আশপাশের বাড়ি থেকে দৌড়ে দৌড়ে আসে বাচ্চা বাচ্চা ছেলেমেয়েরা! তাদের চিৎকার আর হাসিতে খিলখিলিয়ে ওঠে সৎসঙ্গ পরিবেশ! বড় আনন্দ দেয় মনে শিশুদের নির্মল উপস্থিতি!
এই 'বিশেষ সৎসঙ্গ' অনুষ্ঠান এগিয়ে চলে ঠাকুরের "মানুষ আপন টাকা পর, যত পারিস মানুষ ধর" এই বাণীর উপর দাঁড়িয়ে! কারও কাছ থেকে অর্ঘ্য সংগ্রহ করা হয় না! স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে যদি কেউ এগিয়ে এসে ঠাকুরের অনুষ্ঠানের জন্য অর্ঘ্য দেয় সশ্রদ্ধ চিত্তে তা গ্রহণ করা হয়।
এর সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে এই পথ পরিক্রমার সঙ্গে যুক্ত উদ্যোক্তাদের ঘরে ঘরে মাসে একদিন ঠাকুর নিয়ে ও বাবাইদাদার নির্দেশ 'সৎসঙ্গ, দীক্ষা, ইষ্টভৃতি' নিয়ে আলোচনার জন্য 'সান্ধ্য বৈঠকি আড্ডা!' প্রার্থনা দিয়ে শুরু হয় আড্ডা তারপর গানে-গানে, আলোচনায় জমে ওঠে 'বৈঠকি আড্ডা'! সঙ্গে থাকে কোলড্রিঙ্কস, চা, নমকিন, সিঙ্গাড়া, মিষ্টি, কচুড়ি, আলুরদম, ছোলার ডাল, লুচি, গুগনী, পায়েস ইত্যাদি ইত্যাদি যেদিন যেমন!!!!!
ঠিক এমনিভাবেই হবে সামনে বড়মার জন্মমাস উপলক্ষে শ্রাবণ মাসে সন্ধ্যাবেলায় কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত উদ্যোক্তা মায়েদের শ্রাবনী আড্ডা!
এর সঙ্গে আরও একটা জিনিস হয় তাহ'লো মাঝে মাঝে উদ্যোক্তা কর্মীদের জন্মদিনে ঠাকুর স্মরণ ও মনন!
একইরকম ভাবে একই প্রক্রিয়ায় শ্রীশ্রীবাবাইদাদার আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে জন্ম হয় 'খড়দা সৎসঙ্গ কেন্দ্র'! কেন্দ্রের পরিচালনায় এই 'বিশেষ সৎসঙ্গ'-এর আয়োজন হ'য়ে চলেছে ২০১৭সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে গঙ্গার ওপারে উত্তর ২৪পরগণা জেলার খড়দহ অঞ্চলে। বাবাইদাদার আশীর্বাদ মাথায় নিয়ে তাঁর নির্দেশ মত খড়দা অঞ্চলে অনুষ্ঠিত প্রথম 'বিশেষ সৎসঙ্গ'-এর প্রণামী জমা দিয়ে সেই অর্ঘ্য প্রশস্তি বাবাইদাদাকে দেখালে তিনি আমাকে খড়দা অঞ্চলের সকল গুরুভাইবোনেদের ওই পবিত্র অর্ঘ্য প্রশস্তি দেখাতে বলেন এবং সকলকে নিয়ে মিলেমিশে চলার নির্দেশ দেন! খড়দার মাটি পবিত্র মাটি! সেই মাটিতে গড়ে উঠেছে বহু মন্দির! বহু বছরের প্রাচীন সেই মন্দিরগুলি ইতিহাসের বহু ঐতিহ্যের স্বাক্ষর বহণ ক'রে চলেছে! খড়দার সেই পবিত্র মাটিতে স্থাপিত মন্দিরগুলিতে ঘুরে ঘুরে হ'য়ে চলেছে প্রতি মাসের তৃতীয় রবিবার পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের সৎসঙ্গ। এ এক অদ্ভুত অনুভূতি
সকলের জ্ঞাতার্থে জানাই যে, ভদ্রকালী সৎসঙ্গ কেন্দ্র আর খড়দা সৎসঙ্গ কেন্দ্র একই সঙ্গে একই পদ্ধতিতে ঠাকুরের কাজ ক'রে চলেছে! প্রতি মাসের শেষ রবিবার ভদ্রকালীতে এবং খড়দায় তৃতীয় রবিবার 'বিশেষ সৎসঙ্গ'অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন স্থানে। দুই পারে ঠাকুরের প্রতিটি রূপের জন্মদিন পালন করা হয় এবং 'পুরুষোত্তম বন্দনা' নামে বিশেষ সৎসঙ্গের আয়োজন করা হয় বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে! সেখানে তাঁর প্রতিটি রূপের ফটো সুদৃশ্য রূপে সজ্জিত করা হয় এবং পুরুষোত্তম বন্দনা পাঠের মধ্যে দিয়ে 'বিশেষ সৎসঙ্গ' অনুষ্ঠিত হয়! দুই কেন্দ্রের যৌথ উদ্যোগে শ্রীশ্রীঠাকুরের 'বনভোজন' উৎসব পালন হয় ২০১৮ সালে খড়দা লক্ষী নারায়ণ জিউ-এর মন্দিরে তথা 'সোনার মন্দিরে'! এ ছাড়া বাবাইদাদার শুভ জন্মদিনও পালিত হয় মহা ধুমধামে!!
প্রচুর বাধা বিপত্তির মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চলেছে তাঁর মিশন রথ শ্রীশ্রীবাবাইদাদার উৎসাহে, প্রেরণায়, আশীর্বাদে ও পরামর্শে! বাধা আসতে থাকে বিভিন্ন দিক দিয়ে বিভিন্নভাবে! বাধা আসতে থাকে গুরুভাইদের কাছ থেকে!!!!!! সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিদ্রুপ মিশ্রিত খোঁচামারা প্রশ্ন তোলে অদীক্ষিত মানুষ! বাধা সামনে এসে পাহাড় হ'য়ে দাঁড়ায়!
যেমন,
১) 'বিশেষ সৎসঙ্গ' শব্দ ব্যবহার নিয়ে গুরুভাইদের বিদ্রুপ ও কটূক্তি!
২) প্রকাশ্যে সৎসঙ্গ কখনো হয়নি, সৎসঙ্গের নামে জলসা হচ্ছে!
৩) ১ ঘন্টা থেকে ১-৩০ঘন্টার সৎসঙ্গের পরিবর্তে ২ ঘন্টা, ২-৩০ ঘন্টা,
৩ ঘন্টার ফাংশন হচ্ছে!
৪) ঋত্বিক বিহীন সৎসঙ্গ হচ্ছে!
৫) ঋত্বিক বা পাঞ্জাছাড়া সৎসঙ্গ পরিচালনা অবৈধ ও পাপ!
৬) পরিবার নিয়ে ব্যবসা ফেঁদে বসেছে!
৭) ভদ্রকালী ও খড়দা অঞ্চলে পাল্টা সৎসঙ্গের আয়োজন!
৮) অন্য কেন্দ্রের সহায়তায় সৎসঙ্গের বিরোধীতা!
৯) গুরুভাইবোনদের, শিল্পী, বক্তা ও পাঞ্জাধারীদের আসতে বাধা
দান!
১০) কোথায় এত টাকা পাচ্ছে?
ইত্যাদি ইত্যাদি.........
শ্রীশ্রীবাবাইদাদাকে সমস্ত বিষয় নিবেদন করলে তিনি বলেন,
১) যে কোনও মানুষ যদি কোনও প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয় আর সে যদি চেষ্টা করে তার দ্বারা মহৎ কাজ হয়।
২) বাধা যদি না থাকলো তাহ'লে আপনি কর্ম করলেন না। কর্ম করা মানেই হচ্ছে আপনি কিছু না কিছু বাধার মুখোমুখী হবেন। যখন দেখবেন বাধাহীন কাজ হচ্ছে তার মানে কর্ম আর ঠিকঠাক হচ্ছে না।
৩) সবার সাথে ভালো ব্যবহার রাখবেন।
৪) কারোর কোনও অভিযোগের উত্তর দেবেন না, কোনও সাড়া দেবেন না।
৫) আপনার কিন্তু অভিযোগকে খণ্ডন করা আর উত্তর দেওয়া কাজ নয়।
৬) আমি যদি উপযুক্ত হ'ই এবং তিনি যখন আমাকে উপযুক্ত মনে করেছেন তাঁর বিষয়ে কথা বলার জন্য, কাজ করার জন্য তাহ'লে আমার ওটাই লক্ষ্য। আগে ঠাকুরের কাজ শেষ ক'রে নি তারপর যদি সময় থাকে তখন আমি অন্য বিষয়ে মাথা ঘামাবো।
৭) সবাইকে encourage করবেন। যারা আপনাকে বাধা দিচ্ছে তাদের সাথে নিত্য সম্পর্ক রাখবেন। কখনোই তাদেরকে তাচ্ছিল্য করবেন না। তাদের বিপদকালে প্রয়োজনের সময় সবসময় পাশে দাঁড়াবেন।
৮) ঠাকুরকে নিজে যখন নাজেহাল হ'তে হয়েছে আর আমরা তার সন্তান হ'য়ে আমাদের নাজেহাল হ'যে হবে না!?
৯) সবার সাথে যোগাযোগ রাখবেন। আপনার দিক থেকে যেন কোনও অন্যায্য কিছু উৎপাদন না হয়।
১০) সাধন চক্রবর্তীদার (হুগলি জেলার প্রাক্তন সেক্রেটারি) সাথে কথা বলতে হয় যে এইক্ষেত্রে আমরা কি করতে পারি। বলেন যে একটা মানসিক দ্বন্দ্ব তৈরী হচ্ছে।। একজনের বোধ আরেকজন নিতে পারছে না। কথা ব'লে মিমাংস ক'রে নেন। তাদেরকে আমন্ত্রণ করুন যাতে তারা এসে সবার সাথে যুক্ত হ'য়ে বুঝতে পারেন সমস্যাটা কোথায়! যতক্ষণ না জলে নামছি বুঝতে পারি না যে তলায় পাঁক আছে! ওপর থেকে দেখে বোঝা যায় না যে তলায় পাঁক হ'য়ে আছে! দেখে মনে হয় ওপর থেকে জল টলটল করছে, নামলে বুঝতে পারবেন যে পাঁকের মধ্যে পড়েছেন।
আজ চার বছর হ'তে চললো শ্রীশ্রীবাবাইদাদার অমৃত পরামর্শ মাথায় নিয়ে প্রতি মুহূর্তে তাঁর নির্দেশ স্মরণে ও মননে ঠাকুরের স্বপ্ন পূরণে আমরা এগিয়ে চলেছি। সৎসঙ্গ যাতে প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয় হয় ও সমাজ পরিবর্তনের মাধ্যম হ'য়ে ওঠে সেইজন্য আমি ঠাকুরের ওপর নির্ভর ক'রে আছি।
পূজ্যপাদ শ্রীশ্রীবাবাইদাদা আমাকে বলেছিলেন, তাঁর ওপর নির্ভর করুন, নির্ভর করুন, নির্ভর করুন।
শেষ। প্রবি।
( লেখা ১১ই জুলাই'২০১৯ )

No comments:

Post a Comment