Powered By Blogger

Thursday, July 20, 2023

কবিতাঃ মা! তুমি সাবধান!!

মা! ভবিষ্যৎ ভয়ংকর! ভয়ংকর চারপাশ!
আগুন হ'য়ে উঠছে ক্রমশ পৃথিবী!
জঞ্জালে জঞ্জালে ভরে গেছে বিশ্ব,
ভরে গেছে জঞ্জালের দুর্গন্ধে আকাশ বাতাস!
কবি সুকান্ত বলেছিলেন,
"প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি।"
জঞ্জাল সরেছে কি?
বিশ্ব শিশুর বাসযোগ্য হয়েছে কি?
সরেনি। হয়নি। আরো বেড়েছে! আরো জমেছে!
বাড়তে বাড়তে জমতে জমতে পাহাড় প্রমাণ
জঞ্জালে আজ নাভিশ্বাস উঠছে পৃথিবীর!
সেই পাহাড় প্রমাণ জঞ্জালে বিশ্বের সব শিশু
আজ চেয়ে আছে জুলজুল নিষ্পাপ চোখে পরম বিশ্বাসে
তাদের একমাত্র বিশ্বস্ত পরম আশ্রয় মায়ের মুখের দিকে!
কেন জঞ্জাল সরেনি? কেন হয়নি বাসযোগ্য? প্রশ্ন জাগে মনে!
প্রশ্ন জাগা কি অন্যায়? অপরাধ, অযৌক্তিক?
এ প্রশ্ন কাকে করবো? কে শুনবে?
শিশু জঞ্জালে জন্ম নেবে নাকি জঞ্জালে বড় হবে,
বিশ্ব শিশুর বাসযোগ্য হ'য়ে উঠবে কি উঠবে না
---কার আছে অন্তরে সেই বেদনা? সায়নাসের মত অসহ্য মাথাব্যথা?
যে বিশ্বাসে ভর ক'রে অসুস্থ কবি
দেখেছিল স্বপ্ন জঞ্জাল সরাবার
সেই বিশ্বাসের উত্তরসূরিরা কি রেখেছে
তাঁর সেই বিশ্বস্ত বিশ্বাসের মান?
সবাই নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত!
'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা'
--এই ভাবনা সবার!
কবির বিশ্বস্ত বিশ্বাস হয়েছে হচ্ছে প্রতিমুহূর্তে
ধর্ষিত বলাৎকৃত নির্ম্মম নিষ্ঠুর উল্লাসে!
কারো নেই সেই চরিত্র বিশ্বে যে চরিত্র
থামায় সেই উল্লাস বাঁচায় বিশ্বাস এই বিশ্বে।
কারো জানা নেই সেই পথ যে পথে যাবে সরে
পাহাড় প্রমাণ জঞ্জাল, হ'য়ে উঠবে বিশ্ব বাসযোগ্য
শিশু হাসি আনন্দে নিশ্চিন্তে যেথায় বাঁচেবাড়ে।
আজ যে মা শিশুর জন্ম দিল সেই শিশুর যত্নে সে বেসামাল।
তার বড় হওয়ার ভাবনায় চিন্তাময়, যত্নশীল।
কোথায় সেই পরিবেশ?
কোথায় সেই উপাদান বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার?
আজকের যে শিশু হাসি আনন্দে উঠছে বেড়ে
সে কি জানে চতুর্দিকে অপেক্ষা করছে
ঘোর আঁধার তার জন্যে ভবিষ্যতের তরে!?
সে কি জানে নিষ্পাপ হাসিমুখে টলোমলো পায়ে দিনরাত
এগিয়ে চলেছে যে সময়ের দিকে সেখানে অপেক্ষা করছে
তাকে গ্রাস করবে ব'লে গভীর ভয়ংকর এক খাদ!?
সে জানে না। সে শিশু। নিষ্পাপ এক দেব সন্তান!
কিন্তু মা!? মা কি জানে? বা জানার চেষ্টা করে?
সন্তান স্নেহে বাৎসল্যে সে ভাবে, কল্পনার রঙ্গিন বোনে জাল
প্রিয় আত্মজের জন্যে সকাল বিকাল!
সব বাবা মা-ই ভাবে, "সন্তান থাকুক মোর দুধেভাতে!"
কিন্তু বাস্তব কি বলে?
সন্তান থাকে ডুবে, সাঁতার কাটে
দুঃখের সাগরে দিনেরাতে!
মায়ের আদরের কলিজা কাঁদে
আলোহীন পথহীন আঁধারে একাকী।
কেন কাঁদে?
কাঁদে যেমনতেমনভাবে গোঁজামিলে মেলানো জীবন অঙ্কের ফলে!
কে দায়ী?
গোঁজামিলে বড় হ'য়ে ওঠা সেদিনের নিষ্পাপ শিশু
নাকি কুসংস্কারে সংস্কৃত মা?
গোঁজামিলে মেলাতে চায় শিশুর জীবন অঙ্ক মা
বাৎসল্য রসে ডুবে ডুবিয়ে সন্তানে তাবিজে মাদুলে
তুকতাক ঝাড়ফুঁকে বাবাজী মাতাজীর সাহচর্য্যে।
লাল হলুদ কালো নানা রঙের সুতো হাতে গলে
শনি রাহু কেতু জ্যোতিষ বিদ্যার হলুদ আলোর তলে
সফলতা চায় করতে হাসিল শিশুর আত্মবিশ্বাসকে পায়ে দ'লে।
আধুনিকা মা মানে না জীবন্ত ঈশ্বর মানে অমূর্ত ভগবানে!
মানে না জীবন্ত আদর্শ মানে অলীক মায়ায় ঘেরা শয়তানে!
আলোময় রুপময় রসময় বাঁচা বাড়ার
ঝলমলে পথ আছে যে জীবন্ত আদর্শে
সেই আদর্শের পথ চায় না নিতে নিষ্পাপ শিশুর মূর্খ মা
কুটকচালিতে ভরা রিপু তাড়িত অতি আধুনিকা
অতিবোদ্ধা বন্ধু ডাইনি মায়েদের কুপরামর্শে।
বাৎসল্যের নামে তাচ্ছিল্যে পালনে পোষণে থাকে মত্ত সন্তানে।
বাঁচা বাড়ার উল্টো চালে চ'লে
আনতে চায় সুন্দর সকাল শিশুর জীবনে!
আর, কবি সুকান্ত? সে কোন পথে আনতে চেয়েছিল
সুন্দর সকাল নিষ্পাপ শিশুর জন্যে?
কোন পথে চেয়েছিল সরাতে জঞ্জাল?
চেয়েছিল বাসযোগ্য ক'রে তুলতে বিশ্বকে শিশুর কোন পথে?
সে পথ কি ঈশ্বরের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা সাম্যবাদের পথ?
সে পথ কি ধর্মকে আফিম ব'লে প্রচার করা মিথ্যের পথ?
নাকি অন্য কোনও পথে? জানি না।
জানি না আমি তাঁর মনের অভ্যন্তরে
ছিল কিনা লুকিয়ে থাকা অন্য কোনও পথ।
তবে যে বাদ বা যে ইজম-ই থাকুক না কেন বিশ্বকে
ক'রে তুলতে শিশুর বাসযোগ্য
জীবন্ত ঈশ্বরের জীবনবাদ বা লাইফইজম ছাড়া
বাকী সব বাদ অসম্পূর্ণ ত্রুটিপূর্ণ উপভোগ্য।
নির্ভেজাল এই সত্য শিশুর মায়ের কাছে
মানা না মানা ব্যক্তিগত সম্পূর্ণ এক্তিয়ারভুক্ত।
কিন্তু এ-কথা রাখি যেন মনে দিন শেষে অবশেষে
ভুল আর মিথ্যে পথে বড় হ'য়ে ওঠা কালকের শিশুর
আজকের বুকের গহিনে চাপা পড়া কান্না যেন
বৃদ্ধা মায়ের বুকে না বাজে শয়নে স্বপনে জাগরণে।
কাঁচায় না নুইলে বাঁশ পাকায় ক'রে যেমন টাঁসটাঁস
ঠিক তেমনি সেদিনের ভুলের প্রায়শ্চিত্তের
আর থাকবে না সুযোগ সাথী হবে শুধু চোখে জল আর দীর্ঘশ্বাস।
মায়ের স্বপ্ন, 'মোর সন্তান থাকুক দুধেভাতে'
যেন চোখের জলে হ'য়ে একাকার অহরহ যেন
হ'য়ে হাহাকার না বাজে বুকের মাঝে দিনেরাতে
জানালার সামনে থমকে যাওয়া পৃথিবীকে
দেখতে দেখতে এ সংসার ছেড়ে যাবার আগে ।
শোনো ছোট্ট শিশুর মা!
বলি, মা! তুমি সাবধান!!
জীবন্ত ঈশ্বর দয়াল অনুকূল ডাকছে তোমায়
শোনো তুমি তাঁর কাতর আহ্বান!
জীবন খুঁজে পাবে সেথায় নিশ্চিত
তোমার আদরের প্রাণাধিক সন্তান!
( ২১শে জুলাই'২০২১)



No comments:

Post a Comment