হায়! বাংলা ও বাঙালি! বাংলার বুকে আজ বাংলা তথা দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ বিস্ময় বাঙালি বাঙালির দ্বারা লাঞ্ছিত, কলঙ্কিত, নিন্দিত, উপেক্ষিত, বঞ্চিত!!!!!!! বাংলা কি আজ তার ঐতিহ্য হারিয়ে গড্ডালিকা প্রবাহে ভেসে চলেছে? কোনোদিনই কি আর ফিরে আসবে না বাংলা ও বাঙালির সেই গৌরবময় দিনগুলি!? কোনোদিনই কি আর দেখতে পাবে না, জানতে পারবে না বাংলার আগামী প্রজন্ম বাংলার ঐতিহ্যাশালী ইতিহাসের সেই গৌরবময় অধ্যায়!? বাংলার বুকে কি আর সেই মহান জগৎ বিখ্যাত বাঙালির পদচিহ্ন পড়বে না!? দেখা কি যাবে না আর সেই সোনার দিনের সোনার বাংলার সোনার ছেলেদের মত বাংলার আকাশে সোনার মত উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক-এর ঝলক!? শোনা কি যাবে না আর তাঁদের পদধ্বনি!? আজকের প্রজন্ম কি নিয়ে বাঁচবে!? আগামী প্রজন্ম কার বা কাদের হাত ধ'রে বাঁচা-বাড়ার স্বপ্নে বিভোর হ'য়ে মহাসিন্ধুর ওপার থেকে ভেসে আসা সঙ্গীতের সুরে গেয়ে উঠবে নবজীবনের গান!? এ যে এক ঘোর অন্ধকারের ঘন মেঘ ঢেকে দিয়েছে বাংলার আকাশ, বিষ নিঃশ্বাস বিষাক্ত ক'রে তুলেছে বাংলার বাতাস!!!!! কোথায় যাবে আজ বাংলা, কি করবে বাঙালি!? আজকের প্রজন্মকে যদি বলা হয় বর্তমান বাংলার মাটিতে জন্মগ্রহণকারী বাঙালি মহামানবদের নাম স্মরণ করার, যদি বলা হয় একজনের নাম বলো, পারবে? পারবে না!!!!! সেই ঘুরে ফিরে 'থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়' করার মত রবীন্দ্রনাথ, বিবেকানন্দের নাম বলেই শেষ আজকের আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত প্রজন্ম!!!! অনেকে তাও জানে না! কেন এমন হ'লো? কেন এমন অবক্ষয়, বিপর্যয়!? যে খাঁটি আর্য্য রক্তধারা ব'য়ে চলেছিল বাঙালির রক্তে সেই রক্ত এত দূষিত, এত অপবিত্র!? এত বেইমানি আর অকৃতজ্ঞতার বদরক্ত ব'য়ে চলেছে আর্য্য কৃষ্টিতে সিক্ত, জারিত করা বাঙালীর রক্তে!? কেন এমন হ'লো!? কেন বাঙালি আজ উপেক্ষিত, অপমানিত!? কার দোষ? কে দায়ী?
আসলে এটা দেখা গেছে ব্রিটিশ পূর্ব ও পরবর্তী বিভিন্ন সময়ে যে কোন বিষয়ে বাঙ্গালীদের উত্থান অন্যদের ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাঙ্গালীদের শৌর্য, বীর্য, মেধা, মননশক্তি, লড়াকু মনোভাব হজম করতে পারেনি ব্রিটিশ শাসিত ভারতে রাজশক্তি ও স্বাধীনতার লড়াই-এ যুক্ত চালিকাশক্তি।
কিন্তু ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। যেমন সুভাষচন্দ্র বাঙ্গালী হলেও জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্ব্বিশেষে সবার নেতাজী হয়ে উঠেছিলেন। সেই উত্থান বিশ্বশক্তি মেনে নিতে পারেনি। আজও তার রেশ বয়ে চলেছে। পৃথিবীর মানচিত্রে 'বাংলাকে' রাষ্ট্র হিসাবে চিহ্নিত করার রুপকার দেশপ্রেমিক মুজিবর রহমানকে দেশপ্রেমিক মাত্রই সবাই সশ্রদ্ধ চিত্তে স্মরণ করে; কিন্তু এর চরম মূল্য দিতে হয়নি কি? রবীন্দ্রনাথ বিশ্বকবি, পৃথিবীর সমস্ত ভাষাভাষির সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ তাঁকে ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে কিন্তু তাকেও বুর্জোয়া কবি আখ্যা পেতে হয়েছে। কাজী নজরুল ইসলাম ভারতের স্বাধীনতার লড়াই, ধর্ম্ম, ঈশ্বর সমস্ত বিষয়ে 'বাংলা ও বাঙ্গালী'র প্রতীক, পৃথিবীর মানব সভ্যতার বুকে উজ্জ্বল ধ্রুবতারা সেই মানবতার পূজারি, পরিপূর্ণরুপে আত্মসমর্পণকারী ঈশ্বর প্রেমিক নজরুলকেও যবন, কাফের আখ্যা পেতে হয়েছিল।
আসলে বাঙ্গালীর অফুরান জীবনী শক্তিকে ভয় পায় না এমন শয়তান জগতে নেই আর সেই জীবনী শক্তিকে সমীহ করে, শ্রদ্ধা করে, ভালোবাসে, পুজা করে জগতের সমস্ত ভগবান। বাঙ্গালীকে বুঝতে হবে বাঙ্গালীর রক্তে বয়ে যাচ্ছে আজও পবিত্র আর্য্য রক্তধারা। বাঙ্গালী সহনশীল, বাঙ্গালী উদার; বাঙ্গালী প্রেমিক, বাঙ্গালী মজাদার। বাঙ্গালী দুরন্ত, বাঙ্গালী যোদ্ধা; বাঙ্গালী বীর, বাঙ্গালী বোদ্ধা। বাঙ্গালী পরাক্রমী, বাঙ্গালী শক্তিমান; বাঙ্গালী বরেণ্য, বাঙ্গালী রুচিবান। এই-ই তো বাংলা ও বাঙ্গালীর বৈশিষ্ট্য।
এই কথা ভুলে গেল কি ক'রে বাঙালি!! কি ক'রে পদস্খলন হ'লো এমন ঐতিহ্যের গরিমা থেকে!? এখনকি ভাবার সময় আসেনি!? এখনও কি ঘুরে দাঁড়াবার সময় আসেনি!? এখনও কি সময় আসেনি স্মৃতিবাহী চেতনা শক্তিকে জাগাবার!? এখনও কি বাঙালী তার কাঁকড়ার চরিত্র ত্যাগ ক'রে উঠে দাঁড়াবে না!? এখনও কি বাঙালী নিজেদের অতীত উজ্জ্বল গৌরবকে ফিরিয়ে আনতে নিজের বিবেকের আয়নায় মুখ দেখবে না!? দেখবে না নিজের ক্ষতবিক্ষত দগদগে পুঁজ রক্তে ভরা ঘিনঘিনে ঘায়ে ভরা চরিত্রের দিকে!? আদর্শহীন বৃত্তি-প্রবৃত্তির রসে ডুবে থাকা দলদলে জীবন থেকে কি আর কোনোদিনই ফিরে আসবে না বাঙালী!! তাহ'লে কি এটাই ধ'রে নিতে হবে যে গোটা বাঙালী জাতি আজ বায়োলজিক্যালি ডিফেক্টের শিকার!? জন্মবিজ্ঞানে গলদ ঢুকে গ্যাছে!?
তাই বাংলা ও বাঙ্গালীর কুৎসা, নিন্দা, অপবাদ, সমালোচনার একটাই জবাব, আরো আরো দুরন্ত দুর্দমনীয় বেগে বাংলা ও বাঙ্গালীর বৈশিষ্ট্য অক্ষুন্ন রেখে জগৎ সভায় ধর্ম্ম, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, কৃষি, শিল্প, বিজ্ঞান, রাজনীতি, সমাজনীতি ইত্যাদি সমস্ত দিক দিয়ে বিধির বিধান মেনে বাংলা ও বাঙ্গালীর উত্থান তীব্র হ'ক, মজবুত হোক, দৃঢ় হোক। আসুক আরো আরো আরো জয়, জয়, জয়!!!!!!!!!!!
(লেখা ১৭ই জুলাই ২০১৯)
No comments:
Post a Comment