Powered By Blogger

Wednesday, January 24, 2024

প্রবন্ধ পরমপিতা শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের মন্দির প্রতিষ্ঠা ও আমরা।

আজ ২২শে জানুয়ারি'২৪ অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন হ'লো। পুরুষোত্তম, পরমপিতা, পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন ভারতবর্ষের প্রধানমন্ত্রী শ্রীনরেন্দ্র মোদীজী।

ত্রেতা যুগে পুরুষোত্তম পরমপিতা পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীরামচন্দ্র আজ থেকে প্রায় ৭০০০ হাজার বছর আগে ভারতের অযোধ্যার মাটিতে নেমে এসেছিলেন আর সারাজীবন ঘরেবাইরে তাঁর সন্তানদের হাতে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত লাঞ্ছিত অপমানিত হ'য়ে চরম দুঃখ কষ্টের মধ্যে জীবন অতিবাহিত ক'রে শুধু মানুষের মঙ্গলের জন্য, মানুষের ভালো থাকার জন্য, মানুষের বাঁচা-বাড়ার জন্য জীবন অতিবাহিত করেছিলেন।

আর, আজও তাঁর তিরোধানের ৭০০০ বছর পরও তাঁর বাস্তব উপস্থিতি নিয়ে, জীবন নিয়ে, তাঁর প্রাণ প্রতিষ্ঠা নিয়ে হ'য়ে চলেছে বিতর্ক, বাত বিতন্ডা। আর তা হ'য়ে চলেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঈশ্বরবিশ্বাসীদের পরস্পরের মধ্যে; আর অবিশ্বাসীদের কথা না-হয় ছেড়েই দিলাম। হ'য়ে চলেছে হাজার বছর ধ'রে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতাকে মূলধন ক'রে ক্ষমতাসীন মানুষের পৃষ্টপোষকতায়।

আজ ভারত স্বাধীন হয়েছে ৭৬বছর হ'য়ে গেছে, ৭৬বছর ধ'রে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রাণপুরুষের জন্মস্থানে তাঁর প্রতিষ্ঠা করতে হিমশিম খেতে হয়েছে শ্রীরামভক্তদের। কথায় আছে, লোহে লোহেকো কাটতা হ্যায়। আর সেইজন্যই বুঝি আজ দরকার হয়েছে প্রকৃতির ইশারাতেই সেই 'লোহে লোহেকো কাটতা হ্যায়' তত্ত্বেই পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের প্রাণপ্রতিষ্ঠার তাঁর জন্মভুমি জন্মস্থানে। রাজনৈতিক চরম নোংরামিকে খতম করতেই দরকার হয়েছে রাজনৈতিক দলের হাত দিয়েই সৃষ্টিকর্তা, পুরুষোত্তম, পরমপিতা, পরমকারণ, পরমসত্ত্বা, পরমাত্মা, সদগুরু, জীবন্ত ঈশ্বর পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের প্রাণ প্রতিষ্ঠার, মন্দির প্রতিষ্ঠার।

আজ আরও একবার প্রমাণিত হ'লো, ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। সত্য সত্যই। ঈশ্বরের জগতে দের হ্যাঁয় লেকিন অন্ধেরা নেহী হ্যাঁয়। শুধু সময়ের অপেক্ষা। তিনি তাঁর কাজ করিয়ে নেন যথাসময়ে। জগতে কোনও শয়তানের শক্তি নেই তা আটকায়। গোরা কেটে আগায় জল দেওয়া বিশ্বজুড়ে বহু মতবাদ গরীব মানুষ, সাধারণ মানুষের বৃত্তি-প্রবৃত্তিকে সুড়সুড়ি দিয়ে ঈশ্বরের অবস্থান অস্বীকার করিয়ে ঈশ্বরের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলে নিজের জীবনের, নিজের চরিত্রের, নিজের ঘরের ঝুল পরিষ্কার করার শিক্ষায় শিক্ষিত না ক'রে সমাজের ঝুল ঝাড়ার শিক্ষায়, অবৈজ্ঞানিক মতবাদে দীক্ষিত ক'রে আটকাতে চেয়েছিল ঈশ্বরের রথের জয়যাত্রা। কিন্তু ব্যর্থতার চোরাবালিতে সলিল সমাধি ঘটেছে তাদের। অবশিষ্ট হতাশাগ্রস্থ যারা বর্তমান তারা আজও ব্যর্থতার হাঁপর টেনে চলেছে নবীন রক্তের কাঁধে ভর ক'রে সুদিনের আশায়। আর, খন্ড খন্ড হ'য়ে বিরোধীতা ক'রে চলেছে অধর্মের নামে ধর্মের বিরুদ্ধে, মিথ্যের নামে সত্যের বিরুদ্ধে।

আমাদের নপুংশতার জন্যই সত্য লাঞ্ছিত হয়, ধর্ম কলঙ্কিত হয়, ঈশ্বর অপমানিত হয়। শয়তান আনন্দিত, উল্লসিত হয় বাঁধভাঙা জলের ঢেউয়ের মতো। কিন্তু ঈশ্বরের বিধান অপরিবর্তনীয়, অলঙ্ঘনীয়। শয়তানের জন্য শেষের সেদিন ভয়ংকর। সেদিন শয়তান ঈশ্বরের কাছে আত্মসমপর্ণ করে। আর, মূর্খ, অতি বোদ্ধা, অহংকারী, এক হাত দূরের জিনিস দেখতে না পাওয়া অতি বিজ্ঞরা ঘটনার পরম্পরায় ভাঙবে তবু মচকাবে না অহংকারী, মিথ্যে তত্ত্বে ডুবে থেকে হতাশায় জর্জরিত হ'য়ে বিদায় নেয় এই পৃথিবীকে নোংরা ক'রে রেখে।
ধর্ম বিশ্বাসী, ঈশ্বরবিশ্বাসীদের কাছে না-হয় শ্রীশ্রীরামচন্দ্র ভগবান, ঈশ্বর। কিন্তু ঈশ্বর অবিশ্বাসী, বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী শিক্ষিতদের কাছে শ্রীরামচন্দ্র কি মর্যাদা পুরুষ নন? তাঁর জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সারাজীবনের যন্ত্রণাময় নিষ্কলঙ্ক, নিখুঁত কাহিনী কি বিস্ময়কর নয়?

যাই হ'ক, নালা, ডোবা, পুকুর, খালবিল, নদনদী, সমুদ্র সবেতেই জল আছে। কোথাও জল স্থির, কোথাও চঞ্চল, কোথাও বেগবান, কোথাও বা প্রবল জলস্রোত। কোথাও জল নোংরা, কোথাও পচা দূর্গন্ধ, কোথাও বা ঘোলাটে, কোথাও পরিষ্কার, কোথাও টলটলে ঝলমলে। যে যার ধারে বা তীরে বসে, সে তার গন্ধ পায়, ঝঙ্কার শুনতে পায়। তাই এ নিয়ে বিতর্কের কিছু নেই।

তাই, আমি আমার দয়াল প্রভুর সুরে সুর মিলিয়ে আমার মতো ক'রে বলি, 'যার যা'কে লাগে ভালো সে তারে ভজুক গো, আমার লাগে ভালো ভজিতে আমার দয়াল প্রভুর পূর্বরূপ চন্দ্রমুখী শ্রীরাম গো।'

আজ আমরা প্রভু শ্রীশ্রীরামচন্দ্রের অপদার্থ সন্তান এতবছর পর যখন তাঁর জন্মস্থানে তাঁর প্রাণ প্রতিষ্ঠা, তাঁর মন্দির প্রতিষ্ঠা করছি, করছি বিশ্বজুড়ে যত শ্রীশ্রীরামচন্দ্র অনুগামী তারা যেন একথা মনে ক'রেই তাঁর প্রাণ, তাঁর নামাঙ্কিত মন্দির প্রতিষ্ঠা করি, আনন্দ উপভোগ করি, পুরুষোত্তম, পরমপিতা, পরমসত্ত্বা, পরমকারণ, পরমপুরুষ শ্রীশ্রীরামচন্দ্র শুধু হিন্দুদের জন্য, কোনও বিশেষ সম্প্রদায়ের জন্য এই ধরাধামে আবির্ভূত হননি। তিনি তাঁর সৃষ্ট এই পৃথিবী গ্রহের মানবজাতির জন্য, বিশ্বের সমস্ত সম্প্রদায়ের প্রায় ৮০০ কোটি মানুষের জন্য, তাঁদের বাঁচা-বাড়ার জন্য, তাঁদের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জটিল সমস্যাজর্জরিত জীবনে সঠিক, নিখুঁত, নির্ভুল সমাধানের পথ দেখাবার জন্য নেমে এসেছিলেন। যেমন আমরা জাগতিক জীবনের পিতামাতা আমাদের সন্তানের জন্য জন্ম থেকে শেষ জীবন পর্যন্ত আকুল হয়ে থাকি যা'তে আমাদের সন্তান ভালো থাকে, সুখে থাকে, আনন্দে থাকে, ফুর্তিতে থাকে; থাকে রোগ, শোক, গ্রহদোষ, বুদ্ধিবিপর্যয়, দরিদ্রতা মুক্ত হ'য়ে। আমার পিতা, আমার পিতার পিতা তাঁর পিতা, আমার সন্তানেরও পিতা, আমাদের সবার পিতা ত্রেতা যুগে আবির্ভূত সৃষ্টিকর্তা জীবন্ত ঈশ্বর শ্রীশ্রীরামচন্দ্রও আমাদের সবার জন্য আকুল হ'য়েই নেমে এসেছিলেন আমাদের মাঝে। আজ তাঁর প্রাণ প্রতিষ্ঠা আর মন্দির প্রতিষ্ঠার দিন জানাই তাঁর রাতুল চরণে সশ্রদ্ধ নতজানু কোটি কোটি প্রণাম। জয় শ্রীরাম।


No comments:

Post a Comment