Powered By Blogger

Saturday, January 13, 2024

প্রবন্ধঃ বিবেকানন্দ ও তাঁর জন্মদিন পালন।

কাল স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিন গেল। তাঁর জন্মদিন পালন হ'লো সরকারী, বেসরকারিভাবে, পালন করে বিভিন্ন ক্লাব ও রাজনৈতিক দলগুলি। পালন করা হয়েছে বিভিন্ন ক্লাবে, হলঘরে, পার্কে, প্রতিষ্ঠানে, সরকারী ভবনে, রাস্তায়, মাঠে-ঘাটে, নর্দমার ধারে। পালন হয়েছে, সারা বছর পার্কে, রাস্তার ধারে খোলা আকাশের তলায় ঝড়-জল-বৃষ্টি ও পাখির গু মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা স্ট্যাচুটাকে ঐ অবস্থায় জন্মদিনের দিন গলায় মালা পড়িয়ে, তোতাপাখির মতো অন্তসারশূন্য নীতি কথার স্রোতে ভাসিয়ে, দলীয় স্লোগান তুলে, রাজনৈতিক বক্তৃতা দিয়ে। তারপর ছড়ানো ছিটানো ভাত খেয়ে-ই উড়ে যাওয়া কাকের মতো সবাই চলে যায় যে যার মতো; একলা সেই সারা বছর রোদ-জল-ঝড়ে মাথায় পাখির গু নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে আবার সেই মহান বক্তার বক্তৃতাতে কথার স্রোতে ভাসিয়ে ঝড় তোলা 'বী----র সন্ন্যাসী' সো-য়া-মি বিবেকানন্দ!

কিন্তু তিনি সারাজীবন কি কষ্ট-অপমান-লাঞ্ছনা ইত্যাদি মাথায় নিয়ে ভারত তথা বিশ্ববাসীর উদ্দেশ্যে কি ব'লে গেছিলেন যে, আমি মারা যাবার পর আমার স্ট্যাচু বানিয়ে যেখানে সেখানে খোলা আকাশের তলায় রাস্তার মোড়ে, নর্দমার ধারে, পার্কে আমার মূর্তি বসিয়ে আমার জন্মদিন পালন ক'রো? তিনি কি ঈশ্বর বিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে ঈশ্বর ও তাঁর পরমপ্রেমময় গুরু শ্রীশ্রীঠাকুর সম্পর্কে কি ব'লেছিলেন তা'কি বক্তারা জানে, জানলেও চরিত্রে তাঁর প্রতিফলন আছে কিংবা স্কুলে, কলেছে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরকারি-বেরসকারি উদ্যোগে, রাজনৈতিক দলগুলির কর্মশালায় তার চর্চা হয়? হয় না। ঐসব কল্পনা করা বিলাসিতা মাত্র।

যাই হ'ক, এটা কার ভুল বা দোষ? কাল শ্রীশ্রীরামকৃষ্ণের শিষ্য, বিবেকানন্দের অনুগামী এবং অন্যান্য যারা যারা সরকারী ও বেসরকারি উদ্যোগে বিবেকানন্দের জন্মদিন পালন করেছিল বা বিবেকানন্দকে নিয়ে আলোচনা, সেমিনার করেছিল তাঁর ফটোর সামনে মুখোমুখি কিংবা তাঁকে পিছনে রেখে, পশ্চাদদেশ দেখিয়ে দাঁড়িয়ে, বসে, কেউ কেউ চেয়ারে বসে পায়ের ওপর পা তুলে ব'সে জন্মদিন পালন করেছেন তারা কি একসময়ের ঘোরতর নাস্তিক, ঈশ্বর অবিশ্বাসী, যুক্তিবাদী, বাস্তববাদী নরেন্দ্রনাথ পরবর্তীতে স্বামী বিবেকানন্দে রূপান্তরিত ঘোরতর ঈশ্বর বিশ্বাসী সন্ন্যাসী মানুষটির গুরুদেব পুরুষোত্তম পরমপিতা শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণের জন্মদিন পালন বা তাঁকে নিয়ে আলোচনা, সেমিনার করেন? যারা ঈশ্বরবিশ্বাসী ও অবিশ্বাসী স্বামী বিবেকানন্দের সমাজ সভ্যতা নিয়ে গরুর জাবর কাটার মতো মুখস্ত বিদ্যার ওপর দাঁড়িয়ে আলোচনা সভায়, সেমিনারে তাঁর কথা নিয়ে গুরুগম্ভীর আলোচনা করেন, বক্তব্যের আড়ালে নিজেকে জাহির করে ' বিবেকানন্দকে নয় আমায় দ্যাখ' মানসিকতায় তারা কি স্বামী বিবেকানন্দের গুরুর খবর রাখেন, স্বামী বিবেকানন্দ তাঁর গুরু সম্পর্কে কি ব'লে গেছেন, কে শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ, তাঁর ওপর তাঁর গুরুদেবের কি ভয়ংকর প্রভাব তার বিন্দুমাত্র জানেন?
জানি না। কিন্তু আমরা সমাজ, সভ্যতা ধ্বংস হ'য়ে যাচ্ছে ব'লে চিন্তায় কাতর হ'য়ে বালখিল্য কবিতা, গল্প, উপন্যাস লিখছি, সিনেমা, নাটক তৈরী করছি, গান বাঁধছি, গান গাইছি, কবিতা আবৃত্তি করছি, পথেঘাটে স্লোগান তুলছি, বক্তৃতা দিচ্ছি, অন্যকে দোষ দিচ্ছি, অন্যের ত্রুটি ধরছি, সমালোচনা করছি, গালাগালি করছি, নিজে অসত্য কথা বলছি, মিথ্যা আচরণ করছি, ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে, কিশোরকিশোরী, যুবকযুবতীদের সামনে উলঙ্গ দৃষ্টান্ত স্থাপন করছি আর যুব সমাজের উদ্দেশ্যে বলছি,যুব সমাজ ধ্বংস হ'য়ে যাচ্ছে, উচ্ছৃঙ্খল, বিশৃঙ্খল আচরণ করছে। দোষ দিচ্ছি শুধু তাদের আমার গাঁয়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা মানসিকতা নিয়ে। কিন্তু নিজের চরিত্রের দিকে তাকিয়ে আমি দেখছি না যে আমার নিজের চরিত্রে কাপড় ঢাকা নেই, একেবারে উলঙ্গ চরিত্র। আর যারা আমার বক্তব্য শুনছে তারা জানে যে আমার চরিত্রে কাপড় নেই, তবুও তারা হারিয়ে ফেলেছে নিজের ভেতরের সেই ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুটিকে, যে নিসংকোচে, নির্দ্বিধায়, নির্ভয়ে বলবে, হে বক্তা, হে বিবেকানন্দ প্রেমী, তুই ল্যান্টা, তোর কাপড় কোথায়?

কেন আমরা কেউ শপথ নিচ্ছি না এই পবিত্র দিনে যে, এই শিশুটিকে আমাদের ফিরিয়ে আনতে হবে আমাদের প্রত্যেকের ঘরে ঘরে" এই নিষ্পাপ শিশুদের বাঁচাতে হবে আজকের যান্ত্রিক সভ্যতার করাল গ্রাস থেকে? কেন আওয়াজ তুলছি না বন্ধ করতে হবে পথেঘাটে, কবিতায়, গল্পে, সাহিত্যে, সিনেমায়, মোবাইলে অশ্লীল রগরগে খুল্লমখুল্লা যৌন ছবি, রীল, বিজ্ঞাপন? কি হবে বালখিল্য লোকদেখানো মহাপুরুষদের জন্মদিন পালন ক'রে? এক্কেবারে কচি অবস্থায় তো খোলামেলা যৌন দৃশ্য দেখে দেখে শেষ হ'য়ে গেছে ও যাচ্ছে কচি জীবন যৌবন বিয়ের বহু পূর্বে! যৌন বিষয় ঘরে ঢুকে পড়েছে, ঢুকে পড়েছে বেডরুমে, পড়ার টেবিলে, বইয়ের ভাঁজে শৈশব, কৈশোর, যৌবনেই মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশে। যেমন, গুরুমস্তিস্ক বা সেরিব্রাম অর্থাৎ মস্তিস্কের অগ্রে , লঘুমস্তিস্ক বা সেরিবেলাম ও সুষুম্নাশীর্ষক (যাকে মেডুলা বলে) অর্থাৎ মস্তিষ্কের পশ্চাদে। হামলে পড়েছে শিশুদের মস্তিষ্কে বিভিন্ন অংশে। মোবাইলের মাধ্যমে যৌন দৃশ্য, হিংসার দৃশ্য, ঘৃণার দৃশ্য রগড়ে, দুমড়ে মুচরে বলাৎকার ক'রে ক'রে শেষ ক'রে দেওয়া শিশু, কিশোরকিশোরী, যুবকযুবতীদের মস্তিষ্কে ঢূকবে আর মহান সন্ন্যাসীর জীবনের ত্যাগ, সংযম, আদর্শের কথা????? তাহ'লে কি লাভ এই জন্মদিন পালনের মাধ্যমে স্বামী বিবেকানন্দকে এবং সমস্ত মহান মনিষীদের অপমান করার?

তাহ'লে এ পথেই কি ভারত আবার জগত সভায় শ্রেষ্ঠ আসন লাভ করবে?
দেশ ঠিক পথেই এগোচ্ছে কি বলেন বিদ্ধজনেরা?

May be an image of 1 person, monument and text

No comments:

Post a Comment