আর একজন লেখকের নাম এই মুহূর্তে মনে করতে পারছি না; তিনি রামায়ণ মহাভারতের বিভিন্ন চরিত্র ও কাহিনীর বিশ্লেষণ করেছিলেন। পরে যখন সেই সব বিষয়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ পড়েছিলেন তখন স্তব্ধবাক্ হ'য়ে গিয়েছিলেন। বিস্ময়ে হতবাক হ'য়ে দুঃখ ক'রে শুধু বলেছিলেন, আমার সমস্ত রচনা বই ছাপা হ'য়ে বেরিয়ে গেছে এখন আমি কি করবো ঠাকুর! আমি কখনো এমনভাবে ভাবিইনি আপনি যে অ্যাঙ্গেল থেকে বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা করেছেন। এখন আর ফিরাবো কি ক'রে? এতে অনেক ক্ষতি হ'য়ে যাবে সমাজের। নিজের সাহিত্যকর্মে নিজেই লজ্জিত হ'য়েছিলেন।
তাই বন্ধু! হয়তো আমি আপনার বন্ধু না; তবুও ফেসবুক বন্ধু হিসেবেই বলছি, আপনি যেদিন শ্রীশ্রীঠাকুরের অমৃত সৃষ্টির স্বাদ পাবেন সেদিন আপনি আমাকে না ভালোবেসে পারবেন না। আমি সেদিনের অপেক্ষায় থাকবো।
যাই হ'ক, আর কত উদাহরণ দেব?
১) কেন নেতাজীর ব্রিটিশ আমলের দোর্দন্ডপ্রাতাপ ব্যরিষ্টার বাবা ও অসামান্য প্রতিভাময়ী মা ও বড়ভাই, বড়ভাইয়ের স্ত্রী ঠাকুরের দীক্ষা নিয়েছিলেন? কেন নেতাজী দেশের স্বাধীনতার উত্তাল ডামাডোলের মাঝে বিরাট দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে বারবার তিনবার ঠাকুরের কাছে ছুটে এসেছিলেন? এসে কেন দেশের স্বাধীনতার বিষয়ে আলোচনা করতেন? কেন তিনি সময়ের অভাবে ঠাকুরের কাছে এসে থাকতে পারেন না ব'লে গভীর দুঃখ প্রকাশ করতেন, আফসোস করতেন। কেন ভারতের শ্রেষ্ঠ রাজনীতিবিদ নেতাজী তাঁর বুঝ্রুকি ধরতে পারলেন না?
২) কেন হিন্দু মহাসভার প্রতিষ্ঠাতা ও হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল ভারতীয় জন সংঘ-এর প্রতিষ্ঠাতা ( ভারতের শক্তিশালী সংগঠন RSS তথা একক বৃহৎ রাজনৈতিক বর্তমান সরকারে আসীন দল বিজেপি) ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় দেশভাগের আগে ১৯৩৯ সালে একজন সাধারণ ধর্মগুরু আপনার মতে 'বুজ্রুক, বোগাস' ঠাকুরের কাছে সর্বনাশা ভারত বিভাগের পরিকল্পনা কিভাবে আটকানো যায় তার পরমার্শ করতে এসেছিলেন? এবং শ্রীশ্রীঠাকুর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে ভারত ভাগ বানচালের যে অভ্রান্ত তুক, যে পরামর্শ দিয়েছিলেন তা তিনি পালন করতে ব্যর্থ হ'য়েছিলেন এবং দেশভাগের পর আবার দেওঘরে এসে লজ্জায় অশ্রুসজল চোখে অনুতপ্ত কন্ঠে স্বীকার করেছিলেন ঠাকুরের নিখুঁত দূরদর্শিতার কথা এবং তা পালনে ব্যর্থ হওয়ার কথা। কেন? কেন ভারতীয় পন্ডিত ও নেতা ভারত কেশরী ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ঠাকুরের বুজরুকি ধরতে পারলেন না, যা আপনি পারলেন!?
৩) কেন বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী উপন্যাসিক 'পথের পাঁচালি'-র স্রষ্টা বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় ১৯৩৯ সালের ৩০শে জুলাই পাবনা হিমাইতপুর আসেন এবং ঠাকুরের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন এবং ঠাকুরের বিজ্ঞান ভিত্তিক মতাদর্শ দেখে, শুনে তিনি আপ্লূত হৃদয়ে ঠাকুরের দীক্ষা প্রার্থনা করেন এবং দীক্ষা নেন? বিজ্ঞানী শ্রীকৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য তাঁকে ঠাকুরের 'কথাপ্রসঙ্গে, চলার সাথী, নারীর নীতি ইত্যাদি থেকে কিছু কিছু অংশ পড়ে শোনালে কেন আবেগ আপ্লূত হ'য়ে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বলেছিলেন,
"বহু মানুষের সাধনার কথা শুনেছি কিন্তু এমন অভূতপূর্ব অনুভূতির সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বর্ণনা জীবনে কখনো শুনিনি। চেষ্টা ক'রে এ ভাব ও ভাষা আয়ত্ব করা যায় না। আপনারা ঠাকুরের এই অপূর্ব সাহিত্য জনসমক্ষে তুলে ধরেন না কেন? এর স্বাদ অনন্য।"
হে সাহিত্যিক ফেসবুক বন্ধু! আপনি একজন উচ্চমার্গের সাহিত্যিক বলেই ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের জীবন সাধনার মধ্যে বুজরুকি ধরতে পেরেছিলেন ২০ বছর বয়সে যে কৃতিত্ব এখনও ব'য়ে চলেছে আপনার জীবনে। তাঁর সমস্ত কিছু 'বোগাস বো' ব'লে উড়িয়ে দিলেন। আর মূর্খ নিম্নমার্গের সাহিত্যিক বলেই বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায় ঠাকুরের বুজরুকি ধরতে পারেননি। এতে আশ্চর্যের কিছুই নেই। আপনি মহান! আপনি শ্রেষ্ঠ!!
৪) কেন কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ১৯২৬ সালে শ্রীশ্রীঠাকুরের সাথে সাহিত্য নিয়ে দীর্ঘ আলোচনায় সাহিত্য রচনায় নিজের ভুল বুঝতে পেরে দুঃখ ক'রে বলেছিলেন, আমি তো এমন ক'রে সাহিত্য রচনার কথা আগে কোনোদিন ভেবে দেখিনি। ঠাকুর এই বয়সে আপনার বলা মতন মিলনাত্মক ও জীবনমুখী সাহিত্য কি আর রচনা করতে পারবো? অশ্রুসজল চোখে ভেজা গলায় আরো বললেন, ঠাকুর আমার জীবনের প্রথম উপন্যাস লেখার আগে কেন আপনার কাছে এলাম না?
আশ্রম থেকে ফিরে যাবার পর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত হ'য়ে মিলনাত্মক উপন্যাস 'বিপ্রদাস' রচনা করেছিলেন। আর এই উপন্যাসই ছিল শরৎচন্দ্রের জীবনের শেষ উপন্যাস।
হে সাহিত্যিক বন্ধু! শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কি মুর্খ ও পাগল ছিলেন যে তিনি শ্রীশ্রীঠাকুর দর্শন ক'রে ও তাঁর সঙ্গে সাহিত্য নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা শেষে নিজের ভুলের স্বীকারোক্তি ক'রে নিজের সমগ্র জীবন দর্শন বদলে ফেলে শেষ উপন্যাস 'বিপ্রদাস' রচনা ক'রে শ্রীশ্রীঠাকুরকেই জীবনের অন্তিম শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছিলেন? কেন তিনি আপনার মতো ঠাকুরকে 'বোগাস বো, যত্তসব বুজরুকি' ব'লে উড়িয়ে দিয়ে চলে গেলেন না এবং নিজস্ব চিন্তা ভাবনা অনুযায়ী সাহিত্য রচনায় রত রইলেন না? বলতে পারেন এর কারণ কি?
৫) দেশবন্ধুর মতো মানুষ কেন শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে জীবনে ইষ্টপদে গ্রহণ করেছেন সেই কৌতুহলেই ১৯২৫ সালের ২৩শে মে মহাত্মাজী পাবনা আশ্রমে পরিদর্শনে এসে আশ্রমের সমস্ত বিভাগ ঘুরে দেখে বিস্ময়ে স্তম্বিত হ'য়ে বলেছিলেন আমি স্বপ্নে যে ভারতবর্ষের ছবি দেখি সেই ভারত ইতিমধ্যেই এই আশ্রমের বুকে গড়ে উঠেছে! তারপর শ্রীশ্রীঠাকুরের মায়ের গভীর ভালোবাসায়, স্নেহে ও প্রখর ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হ'য়ে শ্রীশ্রীঠাকুরের মা সম্পর্কে মহাত্মাজী বলেছিলেন, 'I have never seen such a masterful woman of such wonderful personality in my life' (এমন বিষ্ময়কর ব্যক্তিত্ব-সম্পন্না মহীয়সী নারী জীবনে আমি কখনও দেখি নাই।)। কেন বলেছিলেন তিনি এই কথা? কেন মহাত্মাজীর মতো মানুষ শ্রীশ্রীঠাকুরের বুজ্ররুকি ধরতে পারলেন না? যা আপনি পারলেন!
হে সাহিত্যিক মহোদয়! এমন বিষ্ময়কর ব্যক্তিত্ব-সম্পন্না মহীয়সী নারী্র সন্তান শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রকে কেন The greatest phenomenon of the world বলা হয় তা তাঁকে বুঝরুক বোগাস বলার আগে মহাত্মাজীর মতো কৌতূহল ভরে একবার ভেবে দেখবেন না?
এরপর আর একবার মহাত্মাজী শ্রীশ্রীঠাকুর অসুস্থ শুনে কলকাতায় তাঁকে দেখতে এসেছিলেন। কথা প্রসঙ্গে হাসতে হাসতে মহাত্মাজী শ্রীশ্রীঠাকুরকে বলেছিলেন, "আপনার আশ্রম থেকে ফিরে আসার পর একদল লোক এসে আপনার খুব নিন্দা করল, আবার একদল লোক খুব প্রশংসা করল। অথচ উভয় দলেই বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ রয়েছেন"।
হে সাহিত্যিক! আপনি বিশিষ্ট ( যেহেতু আপনি লেখালেখি করেন ) ধ'রে নিয়েই বলছি, আপনি মহাত্মাজীর দ্বিতীয় দলের সদস্যদের মধ্যে পড়েন। খুব আনন্দ পাবো এবং আপনিও সীমাহীন স্বর্গীয় আনন্দ পাবেন যেদিন আপনি মহাত্মাজীর বলা প্রথম দলের বিশিষ্টদের মতো একজন বিশিষ্ট সদস্য হবেন।
ইতি,
প্রকাশ বিশ্বাস।
পশ্চিমবঙ্গ, ভারত।
ক্রমশঃ
No comments:
Post a Comment