Powered By Blogger

Sunday, April 30, 2023

প্রবন্ধঃ আমার সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য।

ফেসবুকে একটা লেখা পড়লাম। লেখাটা পড়ে মনটা ভারাক্রান্ত হ'য়ে গেল। আহত মনে ভেসে উঠলো কয়েকটা কথা। তাই লিখলাম এখানে। এখানে লেখার আরও একটা কারণ আছে। যখনই অপ্রিয় সত্য তুলে ধরি, নিজেদের ত্রুটিকে তুলে ধরি কারও লেখায় কমেন্টের মধ্যে দিয়ে তখনি দেখি হয় লেখাটা ডিলিট ক'রে দিয়েছে নতুবা ফিল্টারে চলে গেছে। সত্য জানতে দিতে চায় না। তা এরা কারা? এরা আবার নাকি সৎসঙ্গী!!!!!!!!! এরাই আবার দয়ালের জয়ঢাক পেটায় দিনরাত!! সত্যি সৎসঙ্গী! কি বিচিত্র এই সৎসঙ্গ সমাজ!!

যাই হ'ক, ফেসবুকে এক অল্প বয়সী সৎসঙ্গী মায়ের ক্যান্সারে মৃত্যুর খবর পড়ে মনটা ভূমিকম্পের মতো একটু দুলে উঠলো। সেখানে সেই মায়ের উদ্দেশ্যে লেখা কথাগুলি ছুঁয়ে গেল অন্তরকে। ব্যথায় ভরে উঠলো মনটা। ভারাক্রান্ত মনে ব্যথাহত হৃদয়ে কম্পিউটারে কি বোর্ডে আঙ্গুল রাখলাম। তারপর লিখে চললাম মনে যা যা ভেসে উঠলো শব্দ রূপে তাই।

সেই ফেসবুকে লেখা "তোর সব যন্ত্রণা হয়তো কমে গেছে" সম্পর্কে বলতে চাই সত্যিই কি ইহকাল ছেড়ে চলে গেলেই সব যন্ত্রণা কমে যায়? কত অতৃপ্তি, কত যন্ত্রণা নিয়ে চলে যাওয়া! আর "ভয় পাবিনা ঠাকুর আছেন তো" সম্পর্কে বলতে ইচ্ছে করে, ইহকালেই যখন ভয়ে ভয়ে কাটিয়ে চলে গেলাম, ঠাকুর ছিলেন কিনা তার প্রমাণ পেলাম না তখন পরকালেও ভয় তো থাকবেই আর ঠাকুর আছেন এ বিশ্বাস কি করে করি?

আর, সেই মায়ের করুণ আর্তি সৎসঙ্গী দাদা ও মায়েদের উদ্দেশ্যে লেখা থেকে বলি, "আমি বেঁচে থাকতে চাই দাদা। আমার জন্য একটু ঠাকুরের কাছে প্রার্থনা করবেন তো"---- এই লেখার মধ্যে বাঁচার আকুতি, আকুল প্রার্থনা আর সৎসঙ্গীদের কাছে সাহায্যের তীব্র প্রত্যাশা ফুটে ওঠে। তা সেই মায়ের বাঁচার তীব্র আশা ঠাকুর পূরণ করলেন না কেন? ঠাকুর তো অকাল মৃত্যু অনুমোদন করেননি। ঠাকুর তো নিজেই বলেছেন, "আমি ইচ্ছে করলে কুষ্টি ওলোটপালোট ক'রে দিতে পারি।" তা ঠাকুর কি ৪২০ কথা বলেছিলেন? দয়াল কি তাঁর সোনার সৎসঙ্গীদের সাথে চিটিংবাজি কথাবার্তা বলেছিলেন?
আর, ঐ মা'টি নিয়মিত সৎসঙ্গে, মাতৃ সম্মেলনে যোগদান করতো। তা' সৎসঙ্গী দাদারা ও মায়েরা কি ঐ ক্যান্সার আক্রান্ত মায়ের জন্য দয়ালের কাছে অকপট আকুল প্রার্থনা জানিয়েছিল? জানিয়েছিল কি সৎসঙ্গে, কি মাতৃ সম্মেলনে সমবেতভাবে কিম্বা প্রত্যেকেই বাড়িতে ব্যক্তিগতভাবে? মা'টি নিজে এবং মা'টির আপনজন কি দয়ালের কাছে আকুল প্রার্থনায় আত্মসমর্পণ করেছিল সম্পূর্ণরূপে এবং বান্ধব তৈরি করেছিল পরিবেশে?

এমন অনেক প্রশ্ন মনে এসে মনটাকে ঝুঁটি ধ'রে নাড়া দিয়ে গেল। তাই একজন গোঁড়া সৎসঙ্গী হিসেবে কথাগুলি তুলে ধরলাম। কেউ অন্যরকম কিছু মনে করবেন না। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এ আমার একান্তই নিজের সঙ্গে নিজের লড়াই। নিজের চরিত্রটিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে উলটে পালটে দেখে নেবার লড়াই।

এখানে শুধু ঘটনাটাকে সামনে রেখে মনের ভাব শেয়ার করলাম মাত্র। ভালো খারাপ দুই-ই লাগতে পারে। ভালো লাগলে খুশি হবো আর খারাপ লাগলে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন।

"ক্যান্সার রোগের ওষুধ আবিস্কার হয়নি তাই কিছু করার নেই"--এ ধরণের কথা পড়ে মনটা যেমন বিষন্নতায় আচ্ছন্ন হ'লো ঠিক তেমনি বিদ্রোহী হ'য়ে উঠলো। এ প্রসঙ্গে বলতে চাই, অনেক রোগেরই তো উন্নত চিকিৎসা ও মেডিসিন আছে, আবিস্কার হয়েছে তা সেই সেই রোগের রোগী কি সবাই বাঁচে না বেঁচেছে? কোনও রোগের মেডিসিন থাকলেও রোগী যে বাঁচে তার কোনও গ্যারান্টি আছে? শুধু চিকিৎসা আর মেডিসিনে রোগী বাঁচে না। ঠাকুর থাকাকালীন দুরারোগ্য ক্যান্সারও সেরে গেছে সৎসঙ্গ আশ্রমে তার ইতিহাসও আছে। সেই রোগীর জন্য ঠাকুর নিজের ফর্মূলায় প্যারিমোহনদাকে ওষুধ তৈরীর নির্দেশ দিয়েছিলেন এবং সেই ওষুধ সেবন ক'রে ক্যান্সার রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হ'য়ে গিয়েছিলেন। তখন হাউজারম্যানদা ঠাকুরকে প্রশ্ন করেছিলেন, ঠাকুর আপনি বলুন, এই দুরারোগ্য ক্যান্সার যার কোনও ওষুধ আজ পর্যন্ত আবিস্কার হয়নি সেই দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে কেমন ক'রে ক্যান্সার রোগী মুক্তি লাভ করলো? এই মুক্তি কি আপনার ওষুধের গুণে নাকি আপনার একান্ত অজচ্ছল দয়ায়? দয়াল ঠাকুর হেসে বলেছিলেন, তা আমি জানি না। আপনারাই নিরখ পরখ ক'রে দেখেন কেমন ক'রে কিভাবে কিসে কি হ'লো, এই অসম্ভব সম্ভব হ'লো। তাঁর দয়ায় আজও কত যে অঘটন ঘটে তার ঠিক ঠিকানা নেই।

আর, তখনি মনে পড়ে গেল শেক্সপিয়রের হ্যামলেট নাটকের সংলাপ; যা দয়াল প্রায় সময়ই আওড়াতেন।
"There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy." এর ভাবার্থ হ'লো, "স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরেশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও অতীত।"

আর "তাঁর মনের মতো ভক্ত আমরা হ'তে পারিনি" এই কথা ঐ পোষ্টটিতে পড়ে মনে হ'লো এ কথা সত্য হ'লেও দয়াল ঠাকুর নিজের ত্রুটিকে ঢেকে রেখে পাশ কাটানো এসব অপৌরুষেয় কথা পছন্দ করতেন না। তিনি সবসময় বলতেন, আমি যদি জানতেম সমস্যা নিরাময়ের উপায় নেই তাহ'লে আমার কোনও দুঃখ হ'তো না। কিন্তু আমি যখন জানি মানুষকে এই নিশ্চিত বিপদ থেকে উদ্ধার করবার উপায় আছে আর তা জানা সত্বেও যখন তাকে বাঁচাতে পারি না, উদ্ধার করতে পারি না তখন আমি ভাবি এর জন্যে আমিই দায়ী, আমি ব্যর্থ পিতা।

দয়াল আমাদের বাঁচাবার জন্যেই তো মানুষ রূপে আমাদের মাঝে এসেছিলেন কিন্তু আমরা তাঁকে সন্দেহমুক্ত মনে জীবনে গ্রহণ করেছি? যারা আমরা তাঁকে মানিনি, মানিনা, ঈশ্বরের জীবন্ত রূপ তো দূরের কথা তাঁর অস্তিত্বকেই মানি না তাঁদের কথা ছেড়ে দিলাম। কিন্তু আমরা যারা আকাশের ঈশ্বর বা অমূর্ত ঈশ্বরে বিশ্বাসী তারা কি সত্যি সত্যিই ঈশ্বরকে বিশ্বাস করি? নাকি ভয় আর give & take policy-তে বিশ্বাস করি? আর আমরা যারা ঈশ্বরের জীবন্ত রক্তমাংসের রূপকে বিশ্বাস করি তাঁরা কি তাঁর জীবন্ত উপস্থিতিকে সত্যিই বিশ্বাস করি যে রক্তমাংসের রূপে উপস্থিত তিনিই এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্তা নিরাকারের সাকার রূপ? আর যারা আমরা তাঁর নিরাকারের সাকার রূপকে মানি বিশ্বাস করি তারা কি তাঁর পরবর্তী রূপকে মানি, স্বীকার করি, তাঁর চরণাশ্রিত হ'ই? আর যারা আমরা নানা গুরুর চরণাশ্রিত সেই গুরুরা কি কখনো বলেছেন তাঁর শিষ্যদের যে আমি সেই 'এক ও অদ্বিতীয়' নই? আর যেদিন সেই 'এক ও অদ্বিতীয়' নিরাকার ঈশ্বর সাকার রূপে নেবে আসবেন, নেবে আসবেন এই ধরাধামে মানুষ রূপে সেইদিন আমরা সবাই সেই জীবন্ত রক্তমাংসের 'এক ও অদ্বিতীয়' রূপের কাছে গুরু শিষ্য সবাই আশ্রয় গ্রহণ করবো; এই কথা কি বলেছেন? আর, সেই সৃষ্টিকর্তা পরমকারুণিক, পরম সত্ত্বা, পরম অস্তিত্ব, পরম উৎস মানুষ রূপে নেবে আসার পর এত হাজার বার, লক্ষ বার, কোটি বার বলা সত্ত্বেও কি সমস্ত ঈশ্বর বিশ্বাসী নারীপুরুষ তাঁদের কথা কর্ণপাত করেছে? তাঁদের ব'লে যাওয়া কথা, বিধান মানা তো দূরের কথা বিশ্বাসই করেনি তাঁদের কথা। আর বিশ্বাস করলেও ভয়ে, দূর্বলতায় আধা বিশ্বাস করেছে জোর ক'রে দ্রৌপদীর মতো। ফলস্বরূপ যা হবার তাই-ই হয়েছে।

অমূর্ত-মূর্ত ঈশ্বরকে নিয়ে আমাদের নারীপুরুষের প্রতিদিনের আচার আচরণ, আমাদের জীবনে, আমাদের ঘরে ঘরে ধর্মীয় কার্যকলাপ, ঈশ্বর পূজার ধরণ ধারণ, বিকৃত বীভৎস পূজা পদ্ধতি, আমাদের ঠাকুর ঘর ইত্যাদি বলে দেয় আমি কেমন ঈশ্বর বিশ্বাসী ও ঈশ্বর পূজারী! আমার জীবনই, আমার চলনই সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের প্রকাশ, অভিব্যক্তি। আর প্রকাশ অনুযায়ী পাওয়াও তেমনি। তাই বাঁচা-মরা আমার হাতে। দয়া্দুমার'হাত উজাড় ক'রে দিয়েই রেখেছেন। দয়ালের কাছ থেকে আমার নেওয়ার অক্ষমতা, দয়ালের উপর আমার অবিশ্বাস, আমার অনির্ভরতা, আমার স্বার্থপর মানসিকতা, দয়ালের সঙ্গে আমার ভণ্ডামি, আমার চালাকি, আমার মিথ্যাচার, আমার ঠগবাজি, দয়ালের সঙ্গে আমার বেইমানি, নেমকহারামী, ঠাকুরকে আয়ের উপকরণ ক'রে আমার রোজগারের ধান্দা, ইষ্টপ্রতিষ্ঠার অছিলায় আমার আত্মপ্রতিষ্ঠা, আমার না-ক'রে পাওয়ার বুদ্ধি, আমার দুর্ব্যবহার, অন্যকে ঠকিয়ে বোকা বানিয়ে নিজের আখের গোছানো, আমার দুশ্চরিত্র, আমার উগ্রতা, আমার অনিয়ন্ত্রিত রিপু ইত্যাদি আমার দুর্ভাগ্যকে ডেকে আনে। তখন দয়াল আমাকে বাঁচাতে পারেন না তাঁর ইচ্ছা থাকলেও। কারণ তিনি প্রকৃতি। দয়ালের বলায় আছে, "তুমি যেমন প্রকৃত হবে, প্রকৃতি তোমায় তেমনতর উপাধি নিশ্চয় দেবেন এবং নিজের ভেতরে তেমন অধিকারও দেবেন।"

তাই পরিশেষে বলি, সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য আমার হাতে।

No comments:

Post a Comment