তবে কি মহপ্রলয়, ধ্বংস আসন্ন?
যাই হ'ক আমি প্রভু রাম, প্রভু বুদ্ধ, প্রভু যীশু, প্রভু মহম্মদ-এর পরস্পর অনুগামীদের মধ্যে চলে আসা দীর্ঘ লড়াইয়ের কথা ছেড়ে দিলাম। কিন্তু The greatest phenomenon of the world SriSriThakur Anukulchandra-এর শিষ্যরা কেন এরকম পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে অপ্রেম জনিত কোন্দলে জড়িয়ে পড়েন। তিনি তো প্রেমময়! শুধু প্রেমময় নন, পরমপ্রেমময়!! তবু্ও সৎসঙ্গীদের মধ্যে এত প্রেমের অভাব কেন? শুধু তাই-ই নয়; বহু অতি উৎসাহী ইয়ং সৎসঙ্গী ফেসবুকে ধর্ম, রাজনীতি, খেলা, সিনেমা ইত্যাদি নানা বিষয়ে এমনকি অন্য সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধেও সেই সেই বিষয়ের পোষ্টের উপর আলোচনা চলাকালীন হাসিঠাট্টা মস্করার ছলে তালজ্ঞান হারিয়ে নিম্ন রুচির পরিচয় দেয়, কুৎসা করে, এমনকি ইঙ্গিতপূর্ণ অশ্লীল কথাও বলে!!!! এমনকি স্বঘোষিত বালখিল্য সনাতনী হিন্দুদের দ্বারা শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র সম্পর্কে করা কুৎসাতেও তারা প্রভাবিত হয় ; এমনি এরা সৎসঙ্গী!!!!!! তাহ'লে কি আমাকে ধ'রে নিতে এই নব্য অতি আধুনিক উৎসাহী আবেগসর্বস্ব যুবক সৎসঙ্গীরা ঠিক আর আমার মত ঠাকুরের প্রবীণ সৎসঙ্গীরা বেঠিক ও ভুল!? ঠাকুর কি বলেছিলেন এই কোন্দল সম্পর্কে? এক ভক্ত বলেছিলেন, "ঠাকুর এত দল আর দলাদলি, বিভেদ আপনি ব'লে দিন আমায় আমি কোন দল করবো।" প্রত্যুত্তরে ঠাকুর বলেছিলেন, "কোন্দল ক'রো না মণি, কোন্দল ক'রো না।"
সম্প্রতি আমরা কি দেখলাম? সাংসদ নূপুর শর্মার হজরত মহম্মদের প্রতি কটুক্তি করা নিয়ে, তার বক্তব্যে গোটা দেশ তথা মুস্লিম বিশ্ব তোলপাড়। এর পিছনে কতটা রাজনীতি আর কতটা নবির প্রতি প্রেম সেটা সহজেই অনুমেয়। তথাপি নবীর প্রতি অসম্মান অপমান আজ সুযোগসন্ধানী চক্রান্তকারীই হ'ক আর প্রেমিক অনুগামীই হ'ক সবাই আজ এক সুরে আবদ্ধ। অথচ যখন বাংলাদেশে হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি ভাঙা হয়, যখন ধর্মীয় কোন্দলে হিন্দু বিতারণের কাজ কি বাংলাদেশে, কি পাকিস্তানে, কি কাশ্মীরে হয় বা অন্য কোনও রাজ্যে বা দেশে হয় তখন মুসলমানরা মানবতার খাতিরে ক্ষোভ প্রকাশ করে না। কোনও মুসলিম কান্ট্রি প্রশ্ন তোলে না আর এক মুসলিম দেশের ওপর। ওপার বাংলায় যখন দূর্গাপুজার সময় কোরান আর হনুমান বিতর্কে মারধর হ'লো, বাড়িঘর ভাঙ্গা হ'লো, বিতাড়ন হ'লো তখন কেউ মুখ ফুটে কোনও বলিষ্ঠ প্রতিবাদ করলো না তা সে হিন্দু মুসলমান তা সে যে বুদ্ধিজীবিই হ'ক আর সরকারী প্রশাসন হ'ক।
আবার নূপুর শর্মার সমর্থনে জয় শ্রীরাম ধ্বনি তুলে বেরিয়ে পড়েছে আর এক দল। এর মধ্যে অনেক সৎসঙ্গী নূপুর শর্মা আর তার সমর্থনে নেবে পড়া দলেদের ফেসবুকের লড়াই পালটা লড়াইয়ে জড়িয়ে পড়ছে। কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছে অশ্লীল কটুক্তির মধ্যে দিয়ে!!! ভাবলেও অবাক লাগে এরা সৎসঙ্গী!? নাকি সৎসঙ্গী নামে চক্রান্তকারী!? নাকি সৎসঙ্গী নামের এরা কলঙ্ক!? আশ্চর্যের বিষয় এই সমস্ত সৎসঙ্গীরা জানেই না হজরত মহম্মদ কে এবং হজরত মহম্মদের সঙ্গে ঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের কি সম্পর্ক! কিসের ভিত্তিতে নূপুর শর্মাকে সমর্থন? দেবাদিদেব মহাদেবকে অপমান করেছে বলেই নূপুর শর্মা হজরত মহম্মদকে অপমান অশ্রদ্ধা করবে!? কটুক্তি করবে!? এই নূপুর শর্মার মহাদেব ভক্তি? এই তার রুচি" এই তার শিক্ষা"এই তার প্রতিবাদের ভাষা!? তিনি কি ভুলে গেছেন তিনি জনপ্রতিনিধি তার একটা মন্তব্যে বিশ্ব জুড়ে আগুন লেগে যেতে পারে? সেদিন কোথায় ছিলেন নূপুর শর্মা যেদিন তাঁর দেবাদিদেব মহাদেব শিবলিঙ্গে কনডোম পড়িয়ে মজা লুটেছিল এক হিন্দু নারী ও এক শ্রেণীর হিন্দুরা!? সেদিন নূপুর শর্মার ধর্মীয় বোধে ঘা লাগেনি? ব্যথা পাননি? আহত হননি নূপুর শর্মা?
যাই হ'ক আমি এখানে নূপুর শর্মাকে নিয়ে আলোচনা করতে বসিনি; আমি বসেছি সরাসরি আমার সৎসঙ্গী গুরুভাইবোনেদের সঙ্গে খোলাখুলি খোলামেলা আলোচনা করতে।
আমার সৎসঙ্গী ভাইবোন! এই স্পর্শকাতর বিষয়ে আমাদের কি করণীয়? আর এই আমি সৎসঙ্গীও কি হজরত মহম্মদকে অপমান অশ্রদ্ধা করবো? আমি কটুক্তি করবো!? এই আমি সৎসঙ্গী!? আমাদের ঠাকুর কি আমাদের এই শিক্ষা দিয়ে গেছেন!? তাঁর ২৫ হাজার বাণী আর কথোপকথন লিপিবদ্ধ বিভিন্ন গ্রন্থে এ সম্পর্কে কি করণীয় ব'লে যাননি? আচার্যদেব শ্রীশ্রীবড়দা, শ্রীশ্রীদাদা আমাদের দেখিয়ে দিয়ে যাননি এরকম সময় উপস্থিত হ'লে আমাদের কী করণীয়? বর্তমান আচার্যদেব শ্রীশ্রীবাবাইদাদা প্রতিদিন হাতে কলমে আমাদের শিখিয়ে দিয়ে যাচ্ছেন না? আর শ্রীশ্রীঅবিনদাদা প্রতিদিন আমাদের দর্শন দিয়ে কি শেখাচ্ছেন এই অল্প নবীন বয়স থেকেই তা নবীনেরা শিখছে না!? একটি ২২বছরের তরুণের কি অভূতপূর্ব জীবন আমাদের নবীন সৎসঙ্গীদের চোখের সামনে; তবুও তাঁকে দেখে শিখছে না!? তাহ'লে নবীন সৎসঙ্গীরা কি করতে দেওঘরে যায় এবং শ্রীশ্রীঅবিনদাদার সাথে দেখা করে!?
আর, বাংলাদেশে ও দেওঘরে ঠাকুরের ওপর, ঠাকুরের আশ্রমের ওপর কি প্রকার কতরকম অত্যাচার, কটুক্তি, কুৎসা, বদনাম, নিন্দা, হিংস্র আক্রমণ হয়েছে, হ'য়ে চলেছে তার ধারণা আছে এই ধরণের নবীন ও প্রবীন সৎসঙ্গীদের? এইরকম স্পর্শকাতর বিষয়ে কি করণীয় তার ধারণা আছে কি বাণের জলে ভেসে যাওয়া খড়কুটোর মত আবেগে ভেসে চলা সৎসঙ্গীদের?
এর উত্তরে বলতে হ'লে এককথায় বলতে পারি, আসুন হয় প্রকৃত সৎসঙ্গী হ'ন নতুবা সৎসঙ্গী পরিচয় থেকে বিরত থাকুন। প্রকৃত সৎসঙ্গী হ'তে গেলে প্রথমে জানুন কে শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র? আর কিই বা সম্পর্ক তাঁর সঙ্গে শ্রীরাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, মহম্মদ, মহাপ্রভু ও রামকৃষ্ণের সঙ্গে।
আর, নূপুর শর্মা এবং আরো অনেক ঘটনা যেমন হিন্দুদের প্রতি মুসলমানদের আচরণ, হিন্দু দেবদেবীর প্রতি মুসলমানদের অবমাননা, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে কটুক্তি, হানাহানি ইত্যাদি নানা বিষয়ে সৎসঙ্গীদের কি অবস্থান হওয়া উচিত এবং কেমন চরিত্রের হ'য়ে ওঠা উচিত সে সম্পর্কে উদাসীন নিষ্ক্রিয় থেকে ফেসবুকে তাত্ত্বিক আমেজে ডুবে থেকে কথার ফোয়ারা তোলা আর নিরাপদ দূরত্বে দাঁড়িয়ে নিষ্ক্রিয় আন্দোলনের নামে ডুবে ডুবে জল খাওয়া বন্ধ করুক নবীন ও প্রবীণ সৎসঙ্গীরা সঙ্গে কোনওদিন কিছু না করা ফুলবাবু সেজে ঘুরে বেড়ানো সৎসঙ্গীরা।
শেষ একটা কথায় বলবো, হে সৎসঙ্গী গুরুভাইবোন! তোমারা ভুলে যেও না একথা যে তুমি সৎসঙ্গী! তুমি হিন্দু হও, মুসলমান হও, বৌদ্ধ হও, খৃষ্টান হও, শিখ হও, জৈন হও আর যে যে সম্প্রদায়েরই হও না কেন আর যে দেশের যে নাগরিকই হও না কেন সর্বাগ্রে মনে রেখো তুমি সৎসঙ্গী! সৎসঙ্গী!! সৎসঙ্গী!!!
( ১৪ই জুন'২০২২)
No comments:
Post a Comment