রাজ্য জুড়ে পঞ্চায়েত ভোট আগত। শুরু হয়েছে প্রচার। শুরু হয়েছে দেওয়াল লিখন। ভোটের দামামা বাজার সঙ্গে সঙ্গে আরও একটা দামামা বাজার শব্দ ভেসে আসছে কানে সঙ্গে ভেসে আসছে গানের কয়েক কলি।
ওরে বাবা দেখ চেয়ে
যম রাজা চলেছে সমরে!
যম রাজা চলেছে সমরে!
যম সেনা! যম সেনা!
হাজারে হাজারে
হাতিয়ার বুঝি
কাটাকুটি করে!
কাটাকুটি কাটাকুটি
হাজারে হাজারে
হাতিয়ার বুঝি
কাটাকুটি করে
আহা রে, আহা রে!
আহা রে!
যৌবনে ও কয়েক বছর আগেও দেওয়াল লিখন কর্মযজ্ঞের সঙ্গে সক্রিয়ভাবেই যুক্ত ছিলাম। দেখেছি দেওয়াল লিখনের সুন্দর ও কদর্য ভাষা এবং শিল্পনৈপুণ্য। ৭০ দশকের হঠকারী নকশাল আন্দোলনের সমাপ্তির পর একটা অদ্ভুত দেওয়াল লিখন দেখেছিলাম। একজন অবসাদগ্রস্ত, হতাশ, ক্লান্ত, বিধ্বস্ত, রাজনৈতিক কর্ম্মকান্ডে বীতশ্রদ্ধ, জীবনযুদ্ধে পরাজিত মানসিকভাবে ক্ষতবিক্ষত নকশাল বন্ধুর দেওয়াল লিখন দেখেছিলাম। নকশাল আন্দোলনের ভয়ংকর পরিণতি দেখে সে লিখেছিলঃ
"চার অক্ষর জনগণ
রইলো তোদের নির্বাচন,
চললাম আমি বৃন্দাবন।"
তারপর কোথায় কোন বৃন্দাবনে যে সে হারিয়ে গেল তা আর জানা যায়নি। সমাজ ও সমাজের তার বন্ধুবান্ধব, তার রাজনৈতিক সাথী, নেতা, পরিবার-পরিজন ইত্যাদি কেউ তার খোঁজ রাখেনি, রাখবার প্রয়োজন মনে করেনি। কেউ প্রয়োজন মনে করে না। এটাই জ্বলন্ত সত্য, নির্ম্মম অপ্রিয় নগ্ন সত্য। আর প্রয়োজন মনে ক'রে তাকে খুঁজে ফিরিয়ে আনতে, সমাজের মূল স্রোতে কিম্বা পরিবারে ফিরিয়ে দিতে বাড়ির খেয়ে বনের মোষ তাড়ানো এমন সরল বেকুব মহাপ্রাণ কেউ উদ্যোগ নিলেও সমাজ ও সমাজের প্রশাসন তা প্রয়োজন মনে করেনি। করে না। প্রয়োজন মনে করেনি, করে না ভোট পরবর্তী সময়ে নেতা-অভিনেতা-বুদ্ধিজীবি ইত্যাদি জমিদার থেকে জমাদার সমস্ত স্তরের মানুষ। কারণ তখন ক্ষমতা দখল ও আপন ঐশ্বর্যের সাম্রাজ্য বিস্তারে জয়ীরা ও ধান্দাবাজেরা মত্ত-উন্মত্ত। কারও সময় নেই আর পিছন ফিরে তাকাবার। কে কাকে ডিঙিয়ে কত দ্রুত কত তাড়াতাড়ি তড়িৎ গতিতে জয়ী নেতার বশংবদ দাস হ'য়ে কোলে চড়ে বসে ডুদু তামাক খাবে চলে তার নগ্ন প্রতিযোগিতা। ভাঁড় মে যায় নির্বাচনে প্রাণ উজার করা এবং প্রাণ হারানো কর্মী ও কর্মীর হতদরিদ্র পরিবার। এ নগ্ন উলঙ্গ সত্য যেন মনে রাখে সমস্ত দলের কর্মীরা।
আর, আজ আর একটা অদ্ভুত ভালোলাগা পোষ্টার দেখলাম। শরীরে শিহরণ জাগলো। ছলাৎ ছলাৎ শব্দে শরীরে ব'য়ে যাওয়া রক্ততরঙ্গ মাঝে দাঁড় টানার শব্দ শুনতে পেলাম! এমন পোষ্টারে পোষ্টারে ছেয়ে যাক বাংলার গ্রামগঞ্জের, শহরবন্দরের, পাহাড় থেকে সমতলের সমস্ত ঘর-বাড়ির ছোটোবড় দেওয়াল-দেওয়াল-দেওয়াল। এই আহ্বান ছড়িয়ে পড়ুক দিক থেকে দিগন্তে কাগজের পাতায় পাতায়, লিফলেটে, ব্যানারে, হোডিং-এ সর্বত্র। ছড়িয়ে পড়ুক মিডিয়ায়, ফেসবুকের ওয়ালে ওয়ালে খেয়ালে বে-খেয়ালে।
ভোট হ'ক, মানুষ বাঁচুক। সঙ্গে স্লোগান উঠুক শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের,
"নিজে বাঁচো এবং অন্যকে বাঁচাও ও বাঁচতে দাও। ম'রো না, মেরো না, পারো তো মৃত্যুকে অবলুপ্ত করো।"
( লেখা ২০শে জুন'২০২৩)
No comments:
Post a Comment