আর তাই আপনাকে এই খোলা চিঠি লিখলাম।
দাদা, বটগাছের ঝুরি থেকে যে বটগাছের জন্ম সেই গাছ বটগাছ হ'লেও বীজ থেকে জন্ম হওয়া গাছের সঙ্গে তার সামান্য হ'লেও তফাৎ থেকে যায়। যদিও কোনটা মূল গাছ তা চেনা যায় না। ভারত ভাগ হ'য়ে পাকিস্থান, বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে; ভবিষ্যতে আরও কত হবে তা ভবিষ্যতই জানে। তবুও সেই ইসলামিক দেশে যতই সাম্প্রদায়িকতা মাথা চারা দিয়ে উঠুক না কেন সামান্য হ'লেও মাঝে মাঝে দেখি সেই পাকিস্থানেও ধর্ম নিরপেক্ষতার দাবীর পক্ষে কথা হয়, সংসদে সংখ্যালঘুদের পক্ষে সওয়াল জবাব ওঠে, এই একই জিনিস দেখতে পাই বাংলাদেশেও। বাংলাদেশে আজ হিন্দুদের অবস্থান কোথায় আর স্বাধীনতার পূর্বে ছিল কোথায় তা একটু ভাবলেই সহজেই ধরা যায়। এই যে ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে কমজোরি হ'লেও দুই দেশেই যে সওয়াল জবাব ওঠে তার কারণ ঐ একটাই; সেই কারণ হ'লো দুটো দেশের জন্মই ভারত মায়ের গর্ভ থেকে। নাড়ির টান কি সহজে ভোলা যায় নাকি কেউ ছিঁড়তে পেরেছে? পাকিস্থান ও বাংলাদেশকে যদি এখনও সাম্প্রদায়িকতার ভূত পুরোপুরি গ্রাস করতে না পেরে থাকে তাহ'লে যে দেশের পেট থেকে এই দুই দেশের জন্ম হয়েছে সেই দেশ ভারতে সাম্প্রদায়িকতা মাথা চাড়া দেবে, সেই দেশে গনতন্ত্র হত্যা হবে, সেই দেশে শয়তান কিলবিশ সন্ত্রাসের রুপ ধ'রে আত্মপ্রকাশ করবে এটা কি ক'রে ভাবলেন!? হয়তো শয়তান মাঝে মাঝে তার রুপ মেলে ধরতে চায় ও চাইবে কিন্তু ভারতের মাটি তো বহু অত্যাচারের জ্বলন্ত সাক্ষী আহশানদা তাতো আপনিও জানেন তাই কোনও চিন্তা নেই, এই মাটি কোনওদিনই সেই বিষবৃক্ষকে এখানে এই ভারতের মাটিতে বড় হওয়া তো দূরের কথা জন্মাতেই দেবে না, অংকুরে বিনষ্ট হ'য়ে যাবে ও যাচ্ছে। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন এবং কাগজে কলমে প্রমাণ ক'রে নিন এই ভারতের বুকে ধর্মনিরপেক্ষতার প্ল্যাটফরম কতটা মজবুত। ভারতের ইতিহাস কি বলে? ভারতের ইতিহাস কোনদিনও বদলায়নি ও বদলাবে না আর কেউ বদলাতে পারবে না। মাঝে মাঝে হয়তো ভারতের আকাশে কালো মেঘের দেখা দেয় কিন্তু মাভৈ! কোনও চিন্তা নেই; ভারতের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির উপর দাঁড়িয়ে আছে ভারত। ভারতের এই 'বিভিদের মাঝে মিলন মহান' কৃষ্টি ও সংস্কৃতিই ভারতের স্তম্ভ, ভারতের ভিত। এই ভিত যেদিন নড়ে যাবে ভূমিকম্পের ফলে মাটির গভীরে সমস্ত কিছু গ্রাস করার মত সেদিন ভারত ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হ'য়ে আরও অনেক অনেক পাকিস্থান আর বাংলাদেশের মত দেশের জন্ম হ'য়ে তলিয়ে যাবে কালের কবলে। সাম্প্রদায়িকতার বিষ বাষ্প তখনই বেশী মাথা চাড়া দেয় যখন অকৃতজ্ঞতা আর বেইমানী মানুষের রক্তের সম্পদ হ'য়ে দাঁড়ায়।
আপনার উপরের ঐ স্ট্যাটাসে Shariful Islam তির্যক ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করেছিলেন , যে মন্তব্য শিবশংকর ধরতে পারেননি বরং ঐ মন্তব্যকে লাইক দিয়েছেন আবার আপনার মন্তব্যের বিরোধীতাও করেছেন। সেই Shariful Islam-এর বাঁকা মন্তব্য সম্পর্কে বলতে পারি, ভারত কখনও বলেনি ভারত স্বাধীনতা এনে দিয়েছে বাংলাদেশকে; কিছু মানুষ হয়তো বলতে পারে, কিছু মানুষ উপরসা ভাসা ভাসা সব দেখে কিছু মন্তব্য করলেই সেটা ভারতের মন্তব্য হয়না, হয়না ভারতের অন্তরাত্মার কথা। বরং বলা যেতে সেদিন ঠিক সেই সময়ে ভারতের অন্তরাত্মা যদি কেঁদে না উঠতো, ঠিক যখন দাঁড়াবার দরকার ঠিক সেই সঠিক সময়ে পাশে না দাঁড়াত, প্রতিবেশী দেশ ভেবে 'আমার গাঁয়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' ভেবে চোখ উলটে থাকতো তাহ'লে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের হয়তো শেষ রক্ষা হ'তো না, অকাল মৃত্যু হয়তো হ'য়ে যেত। তাই ব'লে কখনই কোনও সচেতন মানুষ, শিক্ষিত, সভ্য, ভদ্র, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ভারতবাসী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে অবহেলা, অপমান, অবজ্ঞা ও অস্বীকার করে না। মুক্তিযোদ্ধারা ভিতর থেকে লড়াই না চালালে কোনওদিনই দেশ স্বাধীন হ'তো না। শুধু বাইরের সাহায্যে কোনও দেশ স্বাধীন হয় না, হ'তে পারে না। আবার ভারতকেও স্বাধীন হওয়ার জন্য বাইরের সাহায্যের প্রয়োজন হয়েছিল; শুধু ভিতরের লড়াই ভারতে স্বাধীনতা এনে দেয়নি, ব্রিটীশরা এমনি এমনি ২০০বছরের শাসন করা দেশটাকে ছেড়ে যায়নি। যেকোনও লড়াইয়ে, আন্দোলনে ঘরেবাইরে উভয় দিকের সাহায্য ও সহযোগীতার দরকার হয় জয়, সফলতা হাসিল করার জন্যে। ভারতেরও দরকার হয়েছিল সেই বাইরের সাহায্যের; সে সাহায্য যতটুকু সময়ের জন্য বা অসম্পূর্ণ সাহায্য হ'য়ে থাক সেই সাহায্যই ভারতের তৎকালীন পরিস্থিতি ও ইতিহাস বদলে দিয়েছিল যার ফলস্বরুপ ব্রিটিশরা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছিল ভারত ছেড়ে চলে যাবার; হয়তো যাবার সময় মজবুত কলকাঠি নেড়ে গিয়েছিল কিন্তু যেতে বাধ্য হয়েছিল। আর, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের গতি প্রকৃতি যেদিকে ঘুরে গিয়েছিল অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ শুরু হওয়া থেকে শুরু ক'রে ঐ বছরের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের আগে সেই সময় যুদ্ধ যেদিকে ঘুরে গিয়েছিল সেই পরিস্থিতি, অবস্থা বিবেচনা ক'রে বা সামনে রেখে হয়তো ভারত পাক যুদ্ধ ব'লে বর্ণনা করা হ'য়ে থাকে। যেহেতু সেদিন ভারত সরাসরি খুল্লমখুল্লা যুদ্ধে জড়িয়ে গিয়েছিল, জড়িয়ে গিয়েছিল শুধু সেই নাড়ির টানে, গর্ভ যন্ত্রণার কারণে, অন্তরাত্মার আকুল ক্রন্দনে, তাই সেই যুদ্ধকে যদি শুধু ভারত পাক যুদ্ধ ব'লে কেউ ব'লে থাকে, বর্ণনা ক'রে থাকে সেটাও যেমন একেবারে মিথ্যা বা ভুল নয় ঠিক তেমনি মহান মুক্তিযুদ্ধকে যদি কেউ ভারত পাক যুদ্ধের তকমার আড়ালে অস্বীকার ক'রে থাকে তাহ'লে তা' ক'রে থাকে যারা তারা মনুষ্য পদবাচ্য নয়, নয় স্বাভাবিক ও প্রকৃতিস্থ। আর বাঙ্গালির আত্মমর্যাদা বোধ কতটা প্রচন্ড, কতটা সবল ও মজবুত সেটা সারা বিশ্ব জানে।
তাই, আহশানদা, ভারতের মাটি এত কাঁচা নয় যে দু'দিনের যোগী এসে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন ক'রে দিয়ে, গণতন্ত্রকে হত্যা ক'রে, সন্ত্রাসের বিষ ছড়িয়ে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতাকে লন্ডভন্ড ক'রে দেবে, লন্ডভন্ড ক'রে দিয়ে লুটেপুটে খাবে আপনার আমার ভারতবর্ষকে। এটা ,মনে রাখবেন ভারত যেমন বিপদের দিনে, প্রয়োজনের দিনে পাকিস্থান, বাংলাদেশের হবে তেমন কোনও দেশ কোনদিনও পাকিস্তান আর বাংলাদেশের হবে না কারণ কোনদিনও অন্য কোনও দেশের পাকিস্থান আর বাংলাদেশের জন্মের গর্ভযন্ত্রণা ও নাড়ির টান ছিল না। (লেখা ৪ই আগষ্ট'২০১৮)
No comments:
Post a Comment