সবার সেরা 'জীবনবাদ'!
'জীবনবাদ' বাদ দিয়ে যত 'বাদ'-ই ধরিস না তুই,
হ'বিই হ'বি বরবাদ।
ঋষি বাদ দিয়ে যেমন ঋষিবাদের আরাধনায়
করছো মিথ্যে জগৎ মাত,
ঠিক জেনো
জীবনবাদী বাদ দিয়ে জীবনবাদের
উপাসনায় হবেই হবে কুপোকাত।
জীবনবাদ মানে জীবনের কথা। দুনিয়ার বুকে কত বাদ বা কথা আছে? গান্ধীবাদ অর্থাৎ গান্ধীর কথা, মাওবাদ মানে মাও-এর কথা, লেনিনবাদ মানে লেনিনের কথা, মার্ক্সবাদ মানে মার্ক্সের কথা, সাম্যবাদ মানে সাম্যের কথা ইত্যাদি ইত্যাদি। ঠিক তেমনি জীবনবাদ
মানে জীবনের কথা। আমরা ঐ মহাত্মাদের সমাজ দর্শন বিষয়ের উপর বলে যাওয়া কথাকে ভিত্তি ক'রে যেমন বলি গান্ধিবাদ, মার্ক্সবাদ.....................ইত্যাদি; ঠিক তেমনি ঠাকুরের যাবতীয় ব'লে যাওয়া সব কথাগুলি জীবনের উপর ভিত্তি ক'রে বলা অর্থাৎ জীবনের কথা গুলিকে আমরা বলি জীবনবাদ। এখানে আমরা ঐ মহাত্মাদের নাম জড়িয়ে বলার মতন বলতে পারতাম অনুকূলবাদ কিন্তু আমরা তা' বলি না, ঠাকুর আমাদের তা' শেখাননি তিনি জীবনবাদ কথাটা বলেছেন আর তাই আমরা জীবনবাদ বলি। আর, জীবনের উপর, সমাজের উপর তাঁর বলে যাওয়া কথাগুলি সবার সেরা কারণ সেগুলি সমাজকে, জীবনকে সবদিক দিয়ে পূরণ করেছে; কোনোদিক বাদ যায়নি বা ফাঁক পড়েনি। নিখুঁত, পরিপূর্ণ এক জীবন দর্শন, সমাজ দর্শন। জীবন নিয়ে বা সমাজ নিয়ে বলা বাকী সব 'বাদ' বা কথা অসম্পূর্ণ শুধু নয় খুঁতে পূর্ণ। পৃথিবীর ৭০০ কোটি বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী (পৃথিবীতে প্রায় ৪৩০০০ হাজার ধর্ম আছে) মানুষকে তাদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পোষণ দিতে পারে, পালন করতে পারে, তাদের প্রয়োজন পূরণ করতে পারে কে? কে আছে এমন পৃথিবীতে ক্ষমতাধর যিনি ৭০০ কোটি মানুষের ৭০০ কোটি রকমের বৈশিষ্ট্যকে পোষণ দিতে পারেন? আছেন নাকি এমন কেউ এই পৃথিবীতে যিনি ৭০০ কোটি মানুষের উদ্ধাতা? তিনি একমাত্র বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের মালিক এক ও অদ্বিতীয় ঈশ্বর। যিনি মানুষ রূপে মানুষের মাঝে সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন্ত আদর্শরূপে নেবে আসেন আর পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী পালন পোষণের পথের সন্ধান একমাত্র তিনিই অর্থাৎ জীবন স্রষ্টাই দিতে পারেন। একমাত্র জীবন স্রষ্টাই পারেন নিখুঁত পরিপূর্ণ সর্বাঙ্গীণ জীবনের কথা বলতে। জীবনবাদের বাদী তিনি আর তাই তাঁর কথাকে বাদ দিয়ে সে যত বড়ই মহাত্মা, মহাপুরুষ, মহাজ্ঞানী, মহাপণ্ডিত হ'ন না কেন তাঁদের যে কথা বা পথ শোনো না কেন, অনুসরণ করো না কেন জীবনে সর্বাঙ্গীণ সাফল্য, সুখ আসবে না, জীবন পরিপূর্ণ রূপে গড়ে উঠবে না, সমাজ ও জীবন চলবে অতি বোদ্ধা অহংকারী এক চক্ষু হরিণের মত। কোন অসতর্ক মুহূর্তে, কোন অজ্ঞানতার কারণে দেখতে না পাওয়া চোখের দিক দিয়ে হরিণের ঘাড়ের উপরে হিংস্র বাঘের ঝাঁপিয়ে পড়ার মত তোমার আমার জীবনের উপর অতর্কিতে ঝাঁপিয়ে পড়বে নির্মম মহাকাল, মারবে ছোবল, হানবে আঘাত, করবে ঘায়েল, শয়তান ঘাড়ের উপর বসে গরম নিশ্বাস ফেলে বাজাবে পায়েল। তাই 'জীবনবাদ' বাদ দিয়ে যে 'বাদ' বা যত 'বাদ'-ই ধরি না কেন আল্টিমেট প্রাপ্তি 'বরবাদ'।
এর সঙ্গে আরও একটা আরও বেশী গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হ'ল,
ঋষি বাদ দিয়ে যেমন ঋষিবাদের আরাধনায় করছো মিথ্যে জগৎ মাত, ঠিক তেমনি জেনো জীবনবাদী বাদ দিয়ে জীবনবাদের উপাসনায় হবেই কুপোকাত।
এই প্রসঙ্গে বলি, ঠাকুর সত্যানুসরণে বললেন,
"ভারতের অবনতি (degeneration) তখন-থেকেই আরম্ভ হয়েছে, যখন-থেকে ভারতবাসীর কাছে অমূর্ত ভগবান অসীম হ'য়ে উঠেছে------ঋষি বাদ দিয়ে ঋষিবাদের উপাসনা আরম্ভ হয়েছে।"
ঠাকুরের এই কথায় আমরা জানতে পারি, বুঝতে পারি এই যে এত অমূর্ত ভগবান বা Unseen God-এর আরাধনা দেশ জুড়ে শুরু হয়েছে, এই শুরু হাজার হাজার বছর আগে থেকে। এই অমূর্ত ভগবানের অন্তর্নিহিত অর্থ আজ বিলুপ্ত হ'য়ে গেছে পরিবর্তে এই অমূর্ত ভগবানেরা চেপে বসেছে মানুষের জীবনে ফাঁসের মত। মূল হ'য়ে গেছে আজ গৌণ আর গৌণ হ'য়ে গেছে মূল। ঠিক তেমনি ঋষিরা মানুষের বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য যা বলে গেছিলেন সেই ব'লে যাওয়া গুলি আজ মানুষের কাছে প্রধান হ'য়ে উঠেছে আর বাতিল হ'য়ে গেছে মানুষের জীবন থেকে জীবন্ত আদর্শরুপী ঋষি। আর এই যে মানুষের কাছে ঋষির ব'লে যাওয়া গুলি প্রধান হ'য়ে উঠেছে তা' একশ্রেণীর ব্যবসায়ী মনোভাবাপন্ন মানুষের জন্য। এই ব্যবসায়ী মনোভাবাপন্ন অসৎ, ধান্দাবাজ, কপট মানুষেরা ঋষিদের বলাগুলিকে আয়ের উপকরণ বানিয়ে ভাঙিয়ে ভাঙিয়ে খেয়ে চলেছে যুগ যুগ ধ'রে মূর্খ, অজ্ঞানী, অশিক্ষিত, লেখাপড়াজানা ও না জানা সরল-সাধাসিধে, বেকুব, অতি বোদ্ধা, অতি চালাক, অহংকারী ও ধর্মভীরু মানুষদের সহযোগীতায়। এর জন্য দায়ী এই মানুষেরাই। কারণ ঠগবাজকে দায়ী করা হ'লে সেটা হবে নিজের সঙ্গে নিজের ফাঁকিবাজি, নিজেকেই ঠকানো। কারণ ডাক্তারের পেশা ডাক্তারি, উকিলের পেশা ওকালতি, শিক্ষকের পেশা শিক্ষা দান, ব্যবসায়ীর ব্যবসা ঠিক তেমনি ঠগবাজের পেশা ঠগবাজি। ঠাকুর বললেন, তুমি এত যত্নহীন নিজের প্রতি যে নিজেকে ঠকতে দিলে। তুমি নিজেকে ঠকতে দিলে কেন?
তাই ঠগবাজ যুগ যুগ ধ'রে তার কাজ ক'রে চলেছে, ক'রে যাবেও আর আমরা তাঁদের শিকার হবার জন্য সেজেগুজে বসে আছি অপেক্ষায় শবরীর মত, 'ক'বে তুমি এসে দেবে দেখা আর আমাকে ঠকাবে প্রিয়!'
আর এই মানুষদের জাগাবার জন্য, চোখ খুলে দেবার জন্য তাঁর বারবার এই ধরাধামে আগমন। তাঁর দুঃখ এতবার আসার পরেও মানুষ জাগে না, মানুষের চোখ খোলে না।
(লেখা ৫ই আগষ্ট'২০১৭)
No comments:
Post a Comment