Powered By Blogger

Thursday, July 24, 2025

প্রবন্ধঃ সৎসঙ্গ/অধিবেশন ও কিছু দৃষ্টিকটূ আচরণ।

প্রথমদিকে সৎসঙ্গ অনুষ্ঠানকে অধিবেশন বলা হ'লেও পরবর্তী সময়ে আমরা সৎসঙ্গ ব'লে থাকি। প্রবীণ সৎসঙ্গীরা অধিবেশন বলাতে অভ্যস্ত। যদিও এখন প্রবীণরাও 'সৎসঙ্গ' বলাতে সড়গড় হ'য়ে গেছে। নবীনরা কেউ কেউ 'অধিবেশন' নয় 'সৎসঙ্গ' ব'লে ভুল ধরিয়ে দেয়। মনে মনে হাসি। মুখে কিছু বলি না। অনেক কিছু দেখতে দেখতে , শুনতে শুনতে গায়ের চামড়া শুয়োরের চামড়া হয়ে গেছে। এই 'সৎসঙ্গ'-এ ছোটোবেলা থেকে যাচ্ছি। আজও যাই, যুক্ত থাকি। কত সময় কত কিছু দেখি যা মূল কেন্দ্র থেকে এবং কেন্দ্রের নির্দেশ থেকে তফাৎ চোখে পড়ে। যেমন কালকে একটা সৎসঙ্গে গেলাম। সেইবাড়ির গৃহকর্তার মৃত্যু উপলক্ষে সৎসঙ্গ আয়োজন হয়েছিল। পরিবারের সবাইকে নিয়ে গিয়েছিলাম বরাবরের মতো। সেখানে যেগুলি চোখে পড়লো তা এখানে তুলে ধরলাম সকলের অবগতির জন্য।
১) সৎসঙ্গে দেখলাম ঋত্বিকের জন্য আলাদা দু'টো আসন রাখা আছে।
২) যে বাড়িতে সৎসঙ্গ হয়েছে সেই বাড়ির মৃত গৃহকর্তার ভাইকে যখন দাদার সম্পর্কে ঋত্বিক বলতে বললো তখন ঋত্বিকের সঙ্গের লোকেরা বিরক্ত বোধ করলো। একজন ব'লে উঠলো গৃহকর্তার ভাই বললে নাকি সৎসঙ্গের ভাব নষ্ট হবে। কারণ উনি কথা বলতে পারেন না ও ঠাকুর সম্পর্কে কিছু জানেন না। অথচ যিনি বললেন এই কথা ঘর ভর্তি লোকের সামনে সেই ব্যক্তির এইরকম আচরণে যে ঠাকুরের ও সৎসঙ্গের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে সে কথা কিন্তু তিনি ভেবে দেখলেন না। অথচ তিনি নিজে না বলতে পারেন, না গাইতে পারেন। তিনি উদোম কাঁসর বাজিয়ে বেসুরে ও অতিরিক্ত কথা সংযোগে 'জয় রাধে' গাইলেন।
৩) সৎসঙ্গের শেষে 'জয় রাধে' গানের সুর যে অসুরে পরিণত হয়েছে সেদিকে সেই কেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত ঋত্বিক ও অন্যান্য ঘনিষ্ঠ গুরুভাইয়েদের কারও কোনও হেলদোল নেই দেখে অবাক।
৪) 'জয় রাধে' গান যিনি গাইছেন তিনি গানের সঙ্গে সঙ্গে জোরে জোরে কাঁসা বাজিয়ে গান গাইছেন দেখে মনে প্রশ্ন এলো এখন কি কাঁসা বাজিয়ে 'জয় রাধে' গান হয়?

৫) 'জয় রাধে' গানের সঙ্গে 'হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম, রাম রাম হরে হরে' গাওয়া হ'লো। ভাবলাম, 'জয় রাধে' কি নোতুন ভাবে সংযোজন হয়েছে?

৬) বক্তব্য রাখার জন্য অনুরোধ রাখায় যখন বক্তব্য রাখতে উঠলাম তখন প্রথমেই শর্ত চাপিয়ে দিল 'সময় ৫ মিনিট'। আর, দু'মিনিট শেষ হ'তে না হ'তেই ঋত্বিক হাত জোড় ক'রে 'জয়গুরু' ইঙ্গিত দিয়ে বুঝিয়ে দিল যে বক্তব্য শেষ করুন। আমিও বুঝে গেলাম কি করতে হবে। এইভাবে কি কেউ বক্তব্য রাখতে পারে? এটা কি বক্তাকে অপমান নয়?
৭) যখন এলাকায় কোনও সৎসঙ্গে বাইরের এলাকার সৎসঙ্গী আসেন যদি তাদের মধ্যে কোনও বক্তা ও গায়ক-গায়িকা থাকেন তখন সৎসঙ্গের প্রতিদিনের একঘেয়েমি ও বিরক্তিকর অবস্থা দূর করার জন্য ও নোতুন স্মেল পাওয়ার জন্য তাদের প্রায়োরিটি দেওয়া উচিৎ নাকি প্রতিদিন যারা সৎসঙ্গে এলাকার গুরুভাইবোনেরা গান গাইছে, সাপ আর ব্যাঙ্গের গল্প শুনিয়ে বক্তৃতা দিচ্ছে তাদেরই বরাবরের মতো আসর জাঁকিয়ে বসে থাকা উচিৎ?

৮) সৎসঙ্গ শেষে ঋত্বিক ও মন্দিরের সাথে যুক্ত সক্রিয় সৎসঙ্গীদের বাড়ির ইয়ং ছেলেমেয়েদের সাথে যারা বাড়ির সৎসঙ্গে অংশগ্রহণ করে না, ভিতরের ঘরে ব'সে টিভি দেখে কিংবা মোবাইলে ফেসবুক, ইউটিউব ইত্যাদিতে মগ্ন থাকে তাদের সঙ্গে একটু সহানুভুতির সংগে ডেকে কথা বলা, একটু ঠাকুর নিয়ে কি আলোচনা করা, যাজন করা, তাদের উৎসাহ ও প্রেরণা দেওয়া কি উচিৎ নয়? নাকি সৎসঙ্গ শেষে p3 নিয়ে বাড়ি যাবার তাড়া পেয়ে বসাটা যাজন?

৯) সৎসঙ্গে যখন কেউ গান, কীর্তন করছে ও কেউ ঠাকুরের আলোচনা করছে তখন সৎসঙ্গে বসে মোবাইলে কোনও গুরুভাইবোনের কথা বলা কি শোভনীয়? তাও আবার ঋত্ত্বিকের কাছে কি এহেন আচরণ আশা করা উচিৎ কি?

যাই হ'ক, যখন সৎসঙ্গ শেষে আলাদাভাবে জিজ্ঞেস করলাম ঋত্বিকদাদাকে তখন তিনি ও অন্য আরও দু'জন গুরুভাই বললেন, সবাইকে নিয়ে চলতে হবে দাদা। আর, আপনি যাদের কথা বলছেন তারা কারও কথা শোনার লোক নয়। স্বয়ং আচার্যদেব বললেও ওরা শুধরাবার নয়। আর অনেক অপমান অত্যাচার সহ্য করতে হয় প্রতিদিন।
এইসব কথা শুনে ভাবলাম, ঋত্ত্বিকদের জন্য আলাদা আসন রাখা দেওঘর মূল কেন্দ্র দ্বারা অনুমোদিত? গৃহকর্তার বাড়ির কেউ বলতে পারুক আর না-পারুক তাকে নীচা দেখানো সৎসঙ্গীদের কালচার? তাহ'লে যে যেমন ইচ্ছা সৎসঙ্গে আচরণ করবে? নিজত্ব হারিয়ে সৎসঙ্গীদের অন্যায্য ব্যবহার সহ্য ক'রে তাদের খুশী করতে হবে? যে যেখানে যেমন খুশী যেমনতেমন ভাবে বেসুরে প্রার্থনা ও অতিরিক্ত কথা সংযোগে আসুরিক হিক্কারে কাঁসা বাজিয়ে 'জয় রাধে' গাইবে? বহিরাগত কাউকে বলতে দিয়ে তার সম্মানের ধার না ধেরে আগে থেকে সময়ের শর্ত চাপিয়ে দিয়ে পরে হাত জোরের ভঙ্গিতে তাকে জয়গুরু জানিয়ে ইঙ্গিতে বসে যেতে বলা কি পরিচালকের শালীনতাপূর্ণ আচরণ? সৎসঙ্গে যোগ্য, দক্ষ, শিক্ষিত, ঠাকুরের দর্শন সম্পর্কে জ্ঞানী প্রবীণ গুরুভাই ও গায়ক গায়িকা থাকতে তাঁকে অবাঞ্ছিত ক'রে রাখা ও নামকা ওয়াস্তে ব্যবহার করা কি সৎসঙ্গের শিক্ষা? সৎসঙ্গ কি কুস্তির আখড়া? হরিহরের গোয়াল ঘর? ভেবে দেখার কি সময় আসেনি?
( লেখা ২৪শে জুলাই' ২০২৩)

No comments:

Post a Comment