Powered By Blogger

Saturday, February 22, 2014

প্রবন্ধঃ কেজরিওয়াল (৩)

http://www.kalerkantho.com/online/world/2014/02/15/52585

 অরবিন্দের সাফল্যে উল্লসিত আন্না হাজারে জনলোকপাল বিলের দাবিতে আবার অনশনে বসার ঘোষনা করেছিলেন

মানুষের মনে প্রশ্ন ছিল,

আন্না হাজারে তাঁর একসময়ের বিতর্কিত শিষ্য অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে কি সেই মঞ্চে ডাকবেন? কেন ডাকবেন? তিনি তো চাননি অরবিন্দ কেজরিওয়াল রাজনৈতিক দল গড়ুক, নির্বাচনে দাঁড়াক তাঁর আন্দোলনে রাজনৈতিক রঙ লাগুক তা তো আন্না হাজারে চাননি তাহলে কেন ডাকবেন?

মানুষের মনে একই রকম ভাবে প্রশ্ন ছিল,

অরবিন্দ কেজরিওয়াল কি সেই মঞ্চে যাবেন? কেন যাবেন? এখন তো তিনি রাজনৈতিক নেতা তিনি তো আন্না হাজারের কাছে অচ্ছুৎ ছিলেন, ছিলেন ব্রাত্য! তাহলে তিনি কেন আন্না হাজারে দ্বারা ব্যবহৃত হবেন না-কি আন্না হাজারেকে তিনি ব্যবহার করবেন? কেন

মানুষের মনে প্রশ্ন ছিল,

তিনি তো আম আদমির উন্নতির স্বার্থে রাজনিতিতে নাম লিখিয়েছিলেন তাহলে আম আদমির স্বার্থে অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সরকারে অংশগ্রহণে অসুবিধা কোথায় ছিল? যদি ব্রাত্য এবং অচ্ছুৎ য়েও আন্না হাজারের অনশন নাটকের মঞ্চে প্রতিনিধি পাঠাতে পারেন তাহলে কেন তিনি সরকারে যেতে পারেন না? কেন তিনি বিজেপি- সঙ্গে সরকার গড়তে পারেন না? জনগনের রায় তো বিজেপি- সঙ্গেই ছিল তাহ'লে অসুবিধা কোথায় ছিল? পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখা দিল্লীর আম আদমির একটা অংশ তো তাকে আম আদমির স্বার্থে কাজ করার জন্য রাজধানীর রাজনীতিতে এতবড় পরিবর্তন ঘটিয়েছেন তাহলে কেন তিনি সরকারে অংশ নেবেন না? ভোটে দাঁড়াবেন আর আম আদমি অনেক আশা নিয়ে আপনাদের জেতাবেন আর আপনারা খুব বুদ্ধিমানের মত বোকা আম আদমিকে বুঝিয়ে দেবেন নানারকম যুক্তির অবতারনা রে কেন সরকারে অংশ নেবেন না তিনি কি মনে করেন তিনি একাই সরকার গড়বেন? তার জন্য তাঁর মত সচেতন মানুষ, সৎ মানুষ, বাস্তববোধ সম্পন্ন পজিটিভ মানুষ বারবার এই গরীব দেশে ভোট করাবেন? একা সরকার গড়বার ক্ষমতা কি তার ছিল? তিনি নিজেই তো বলেছেন, ‘যখন এক রিক্সাচালক আন্দোলনের জন্য তাঁর পরিশ্রমের সমস্ত জমা টাকা আমার হাতে তুলে দেন তখন যে দায়িত্ব তৈরি হয় তা আমার মনে ভয় ধরিয়ে দেয় আর অসফল হওয়াকে আমি পরোয়া করি না, কিন্তু ভুল করতে ভয় পাই। তাহলে আর চিন্তা কেন? সরকারে গিয়ে অসফল লে হবেন মানুষের কাছে তুলে ধরবেন সেই অসফল হওয়ার কারণ বুক টান টান রে বলবেন আম আদমিকে আপনি কোন ভুল করেননি আপনি অসফল হয়েছেন আপনার অভিজ্ঞতার অভাবে কিম্বা সরকারের সহযোগী দলের অসহযোগিতার জন্য, কোন ভুলের জন্য নয় আর ভয় কি, ভুল তো মানুষ মাত্রেই করে আর ভুল তারাই করে যারা কাজ করে অবশ্য যদি অন্য সমস্ত রাজনৈতিক দলের মত এই কথা অজুহাত য়ে না দাঁড়ায় আম আদমি কিন্তু কোনটা ভুল আর কোনটা ভুলের অজুহাত একটু দেরী লেও সেটা সহজেই বুঝতে পারে তাই, যদি ভুলই করেন সেই ভুল নিশ্চয়ই অনিচ্ছাকৃত ভুল হবে, আর আপনার অনিচ্ছাকৃত ভুল তাঁরা সহজেই বুঝতে পারবেন যারা আপনাকে অনেক আশা নিয়ে ক্ষমতার অলিন্দে নিয়ে এসেছে অনিচ্ছাকৃত ভুল তেই পারে ইচ্ছাকৃত ভুল কি আপনি করবেন

যাই হোক, খোদ রাজধানী দিল্লীর বুকে এতবড় ঝড় তুললেন, ইন্দ্রপতন ঘটালেন, ১২৮বছরের একটা দল আর ১৫বছরের একটানা শাসনকে একটানে হিঁচড়ে ফেলে দিলেন মাটিতে, বিজেপি- নিশ্চিত জয়ের ঝড়কে থামিয়ে দিলেন আর তারপর নানা কসরত করে শেষমেষ ক্ষমতার অলিন্দে মাথা গলালেন আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল! তারপর কি দেখল দেশবাসী? যেটা দেখার সেটাই দেখল! কার হাত ধরলেন? যার হাতের ফাঁসের ফাঁসি থেকে মানুষকে মুক্তি দিতে তিনি তুমুল ঝড় তুলেছিলেন সেই হাতের ফাঁসে মাথা গলিয়ে দিলেন নির্দ্বিধায় অবলীলায়!

মানুষের মনে প্রশ্ন উঠেছিল,

কেন কেজরিওয়াল এমন করলেন? কেন তিনি যে পাতে থুথু ফেলেছিলেন সেই থুথুই চাটলেন? কেন তিনি সেই অপবিত্র হাতে তার পবিত্র হাত রাখলেন? কেন তিনি তার প্রধান শত্রুর সাথে হাত মেলালেন? কেন তিনি তার আদর্শের সঙ্গে কম্প্রোমাইজ করলেন? কেন তিনি সর্বাধিক জনাদেশকে সম্মান জানালেন না? কেন তিনি সর্ব্ব বৃহৎ দল বিজেপি- সঙ্গে গেলেন না সরকার গঠনে? জনগণের ক্ষোভ তো ছিল কংগ্রেসের ১৫বছরের অপশাসনের বিরুদ্ধে তাহলে কেন তিনি নীতিকথার অকারণ চুলকানিতে অন্য সব আদর্শহীন হলুদ য়ে যাওয়া দলের মত আচরণ করলেন শুরুতেই বিজেপি- সঙ্গে সরকার না গঠনের সিদ্ধান্তে? কেন তাঁর সহযোগী কিরণ বেদীর প্রস্তাব তাঁর মনে ধরল না? আজ যেমন তাঁর মনে হল এমন ভাবে সরকার চালানো যায় না আগে তাঁর মনে হয়নি? বিজেপি- সঙ্গে সরকার গঠনের পরেও একইভাবে একই ইস্যুতে তিনি সরকার থেকে বেরিয়ে আসতে পারতেন? কেন তিনি ভোটের আগে পরে এমন কথার জাগলিং করে আম জনতার সঙ্গে বেইমানি করলেন?

এমনি নিজেদেরই নানা প্রশ্নে বিদ্ধ ক্ষতবিক্ষত জনগন চেয়েছিল অবাক বিষ্ময়ে নির্বিকার নিরুত্তর তরুণ আশা ভরসা সততার প্রতীক কেজরীওয়ালের দিকে!

মানুষের মনে স্বাভাবিক ভাবেই আবার প্রশ্ন উঠল,

কেন তিনি আবার সেই কথার ঝিকিমিকিতে স্বাভাবিক নিয়মেই বিধান সভায় লোকপাল বিল পেশ করতে না পারার নিজের উত্থাপিত তুচ্ছ ইস্যুতে অথচ সবার বোধগম্য নিজেরই ইচ্ছাকৃত হালকা অজুহাতে সামনে লোকসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভের চোরাগলির খেলায় সরকার থেকে সরে দাঁড়াবার সিদ্ধান্ত নিলেন! কেন তিনি নির্বাচনের বিশাল খরচার বোঝা পড়াশুনাজানা মানুষ হয়েও দেশের গরীব মানুষের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে দ্বিধা বোধ করলেন না? কেন তিনি ভুলে গেলেন তাঁর প্রতিশ্রুতির কথাগুলি? আদৌ কি সত্যি তিনি কোন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন? আদৌ কি তিনি সত্যি মুসাফির য়ে দেখা দিয়েছিলেন দিল্লিবাসীর কাছে? কেউ তো তাঁকে তেমন চিনতো না আন্না হাজারের আন্দোলনের প্রোডাক্ট ছিলেন তিনি তবুও তাঁকে দিল্লীবাসী 'মুসকিল আসান করে ওগো মানিকপীর' ভেবেছিল কেন তিনি এমন রহস্যময় খেলায় মেতে উঠলেন? কেন তিনি বাচ্চাদের পুতুল খেলার মত রান্না বাটির খেলায় মেতে উঠলেন -কথা জানা সত্ত্বেও যে তার হাতে কোন জাদু কাঠি নেই রাতারাতি সব ঝেড়ে পুঁছে সাফ করে দেবার!

মানুষের মনে তাই প্রশ্ন জেগে উঠল,

তাহলে কি সেই কাঠি অরবিন্দ কেজরিওয়ালের পকেটেও আছে বা ছিল? যে কাঠির ছোঁয়ায় জনগণ সম্মোহিত য়ে ঘুমিয়ে পড়ে আবার জেগে ওঠে নেশাগ্রস্থ অবস্থায় জাদুকররুপী নেতার ইচ্ছেমত?

আর সবচেয়ে বড় সত্য, বড় আশ্চর্যের বিষয় , জেনেই আর না জেনেই নির্বাচন হলেই আম জনতা আবার জাতীয় উৎসব ভোট পূজায় আনন্দে মেতে ওঠেন! এরপরেও সবাই বলবেন, সাধারণ মানুষ অসীম ক্ষমতাধর! জনগণের বাণী ঈশ্বরের বাণী!! ভোট অস্বীকার করার বা এই সমস্ত মুখেমারিতং জগতনেতাদের মুখোস খুলে দেবার বা বাতিল করবার ক্ষমতা আম আদমির নেই কারণ আম আদমি অর্থাৎ আমাদের জীবন আদর্শহীন জীবন! আর অরবিন্দ কেজরিওয়ালরা সত্যিই মহান!





No comments:

Post a Comment