Powered By Blogger

Thursday, February 6, 2014

আলু কেচ্ছা!!




কদিন আগে আলু নিয়ে তুলকালাম হ’য়ে গেল। দুর্গা পুজোর সময় থেকে শুরু ক’রে ভাইফোঁটা ছাড়িয়ে আরও কিছুদিন পর্যন্ত বাজার থেকে হঠাৎ আলু পি সি সরকারের ম্যাজিকের মত ভ্যানিশ হ’য়ে গেল! যদিও দেশজুড়ে ম্যাজিশিয়ানদের ম্যাজিক দেখতে দেখতে মানুষ শরীরে-মনে আজ ক্লান্ত-বিধস্ত। ম্যাজিকে আর নতুনত্ব নেই। গা সওয়া হয়ে গেছে শক্তিমান সাধারণ মানুষদের। আবার কখনওবা এই সাধারণ মানুষেরাই অদ্ভুত ভাবে এই গা সয়ে যাওয়া ম্যাজিকের গিলি গিলি হোকাস ফোকাসে অভিভূত!! কখন যে এই শক্তিমান সাধারণ মানুষেরা কি রিয়াক্ট করবে তাই এঁরা নিজেরাই জানে না। যাইহোক, হিমঘরে প্রচুর আলু। আলুর কোন আকাল নেই, তবুও গরীবের অন্যতম প্রধান নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মধ্যে আলু বাজার থেকে উধাও! আলু দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও আমার রাজ্যে আলুর আকাল এবং অন্যতম আমজনতার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য হওয়া সত্ত্বেও আলু সরকারের Essential Commodities Act-এর আওতায় পড়ে না। আলু ভীষণ চালু! তাই সাধারণের প্রধান নিত্যপ্রয়োজনিয় পণ্যদ্রব্য হওয়া সত্ত্বেও সে ধরা দিয়েও ধরা দেয় না।ঠিক এ’রকম অবস্থায় এক লজ্জাজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম একদিন। বেড়িয়েছিলাম ‘বাপ’-এর সেমিনার সম্পর্কিত প্রোগ্রাম তৈরির সভায় উপস্থিত হওয়ার জন্য। ‘বাপ’ মানে  বিশ্ব আর্য় পরিষদ’। ইংরেজিতে ‘WAP” মানে World Aryan Parishad’। পথে দাঁড়িয়েছিলাম একসময়ের কুখ্যাত হ্যাবলা আজকের বিখ্যাত ক্যাবলার চায়ের দোকানে একটু দম নিতে। চায়ের দোকানের পাশে রাস্তার ধারে দেখলাম একটা ছোটোখটো জটলা।বাচ্চারা ভিড় ক’রে আছে। সেখানে এলাকার দশাসই চেহারার মজাদার লালু ভালুকের খেলা দেখাচ্ছে। এলাকায় সবাই ওকে ওর ওই দশাসই চেহারা আর পাগলাটে স্বভাবের জন্য পাগলা দাশু ব’লে ডাকে। একটু খ্যাপাটে সরল স্বভাবের লালুকে তার মজার ব্যবহারের জন্য সবাই ভালবাসে। বাচ্চারা ওর খুব প্রিয়। এক জায়গায় অনেক বাচ্চা দেখলেই ডেকে ডেকে খেলা দেখায় সে। পয়সার কথা ভেবে ও খেলা দেখায় না। এতেই ওর আনন্দ! অ-নে-ক অ-নে-কদূর পর্যন্ত লোক লালুকে চেনে। হ্যাবলা আমায় দেখে হন্তদন্ত হ’য়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এসে চোখ কপালে তুলে  বলল, ‘আরে, দাদা যে!!!বাচ্চারা ওর খুব প্রিয়। এক জায়গায় অনেক বাচ্চা দেখলেই ডেকে ডেকে খেলা দেখায় সে। পয়সার কথা ভেবে ও খেলা দেখায় না। এতেই ওর আনন্দ! অ-নে-ক অ-নে-কদূর পর্যন্ত লোক লালুকে চেনে। হ্যাবলা আমায় দেখে হন্তদন্ত হ’য়ে দোকান থেকে বেরিয়ে এসে চোখ কপালে তুলে  বলল, ‘আরে, দাদা যে!!! আসুন, আসুন! ক-ত-দি-ন পর আপনাকে দেখলাম! ভগবানের দেখা পায় রোজ রোজ কিন্তু আপনার.........’ ব’লেই মুচকি হেসে চোখ মেরে আমাকে হাত ধ’রে টান মারলো। আমি কিছু বলার আগেই সে অদ্ভুত মুখভঙ্গি ক’রে সুর ক’রে টেনে টেনে বলল, ‘হুঁ-উ-উ, আজ বাড়ির জন্য স্পেশাল একটা মাহাঙ্গা আইটেম বানিয়েছি। আজ আর ভগবান টগবান নয়, আপনাকে খাওয়াব এই সময়ের হাইটেক আইটেম’! বলেই হ্যা হ্যা ক’রে সরল এক হাসি হাসতে হাসতে কি একটা ইঙ্গিত ক’রে হাত ধ’রে টেনে বসালো সামনে পেতে রাখা বেঞ্চিতে। কিসের ইঙ্গিত বুঝতে চেষ্টা করলাম। দোকানের ভেতরে তাকালাম। দেখলাম টেবিলের এককোণে ব’সে একমনে কাগজ পড়ছে এক সময়ের ট্রেড ইঊনিয়ন লিডার ভগবান প্রসাদ দাম। হ্যাবলার কথাগুলি কানে গেছে কিনা জানি না। তবে দেখে মনে হ’ল যেন খবরের সমুদ্রে ডুব মেরেছে। সত্যি-মিথ্যে কিনা জানি না আর যাচাই করারও কোন ইচ্ছে নেই। শুধু মুখটা তোলেনি, এই যা’ বাঁচোয়া! এইসব ইয়ার্কি বা খ্যাপানো-ট্যাপানোর মধ্যে আমার জড়ানোর একদম ইচ্ছে নেই। একসময়ে কারখানায় পোষ্টার পড়ত, ‘পৃথিবীতে দুটি নাম, ভিয়েতনাম আর ভগবান দাম’!!! এরপর হ্যাবলা সামনে যেটা হাজির করল তা’ হ’ল দু’প্লেট গরম গরম মশালা মাখানো মাখা মাখা আলুর দম। একটা ডিমের মত বড় বড় গোটা গোটা কালচে লা-ল টকটকে মশালার কাই ভর্তি আলুর দম, আর একটা ছোটো ছোটো গোটা গোটা মশালা মাখানো আলুর উপরে ছড়ানো ধনেপাতা কুচি, সঙ্গে ছেটানো ঝুড়িভাজা আর কালচে ঘন তেঁতুল জল। দেখেই জিভে জল এসে গেল। কিন্তু লজ্জাও করছিল। ‘এটা স্পেশাল আইটেম! শুধু বাড়ির জন্য। বাড়িতে একটা অনুষ্ঠান আছে আজ সন্ধ্যেবেলা। এটা আম জনতার জন্য নয়’। মুখ কাঁচুমাচু ক’রে অপরাধীর মত হাত জোড় ক’রে কথাগুলি এক নিশ্বাসে ব’লে থামল হ্যাবলা। কথাটা শুনে একটু লজ্জা লজ্জা করছিল সবার সামনে খেতে। লজ্জা করলে কি হবে, সামনে দম আলুর রুপ আর রঙ দেখে ভেতরে আর তর সইছিল না। যাইহোক সঙ্গে ছিল যারা তারাও হ’ল সাথী। এমন সময় যে মজার ঘটনা ঘটল তা’ মনে ক’রে এবার তা’ ছড়া আকারে প্রকাশ করলাম!!!!!!!!!

খাচ্ছিলাম আমি দম আলু,
ডুগডুগির তালে নেচে নেচে
দেখছিল আমায় ভালু।
আলুর রুপ আর 'ম' 'ম' গন্ধ!
নাচের তালে হারায় সে ছন্দ।
তাই না দেখে চোখ রাঙ্গিয়ে
চমকালো আমায় লালু!
জ্যাকসনি কায়দায়
ঘুরে বলল আমায়,
কি খাচ্ছো? আলু?
দেখি, দেখি তোমার তালু।
হাতের দিকে তাকিয়ে এক পলক,
আকাশ পানে তাকালো একঝলক!
তারপর বলল চেঁচিয়ে লালু,
'আবে-এ-এ, শালা হাবলু-উ-উ
জানিস সোনার চেয়ে দামী আলু'?
আর বাবুর হাত?
যেন গরম ভাত!
শা-আ-ল-লা পাক্কা লা-ল-লু!
কি যে করি, ভেবে না পাই
কোনখানে যে মুই লুকায়!?
সামনে দেখে হোর্ডিং
'ভাগ, মিলখা ভাগ' হেডিং
মন বলে, 'ওরে-এ-এ পা-আ-লু,
শালা পালু!!
মাগগি গন্ডার বাজারে
ফোকটে খেতে গিয়ে আলু
ল্যাজেগোবরে হয়ে আমি 
হ'লাম আলুথালু!!!




No comments:

Post a Comment