দেখতে দেখতে একটা বছর পার হয়ে গেল। গত বছর ১৬ই ডিসেম্বর ঠিক এই দিনটিতে দিল্লিতে রাতে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ হয়েছিল দামিনীর ওপর। এর প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন দিল্লির মানুষ। ২৯শে ডিসেম্বর’১২ সিঙ্গাপুরের এক হাসপাতালে মারা যায় দামিনী। ৬ জন অপরাধীর মধ্যে একজনের জেলে মৃত্যু হয়; একজন নাবালক যে দামিনীর ওপর সবচেয়ে হিংস্র ও নৃশংস অত্যাচার করেছিল সেই অপরাধী নাবালক অপরাধী হওয়ার সুবাদে মাত্র ৩ বছরের জেল সাজা হয়। বাকী সকলের ফাঁসীর বিচার হয়েছে। ফাঁসীর আসামীর মনে একটাই আফসোস ছিল নিশ্চয়, ইস, আমারাও যদি নাবালক হ’তাম। এই এক বছরে দিল্লি কতটা পরিবর্তন হ’ল? দিল্লি পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী এই এক বছরে ৩০শে নভেম্বর পর্যন্ত ১ হাজার ৪৯৩ টি ধর্ষণের মামলা দায়ের হয়েছে। গত বছরে তুলনায় যা’ দ্বিগুণেরও বেশী!!!!! আজকের দিনে দামিনীকে স্মরণ ক’রে আমার হৃদয়ের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানালাম এই কবিতার মধ্যে দিয়ে। লেখাটি লিখেছিলাম দামিনীর মৃত্যুর দু’দিন পর ১লা জানুয়ারী’২০১৩।
দামিনীর প্রতি দাওয়াদ!
নতুন আর একটা বছর এল।
কিন্তু তুমি নেই, নেই নতুনের কোন গন্ধ;
একটা উৎকট দুর্গন্ধ মুখে নিয়ে
নতুন বছরের প্রথম সকালটা শুরু হ’ল!
দামিনি তুমি এসেছিলে নীরবে,
চলে গেলে সরবে।
প্রশ্ন তুলে, মাতিয়ে সবাই!
নতুন বছর হায়!
মুখে কালি মেখে সামনে এসে দাঁড়ায়।
তুমি এসেছিলে একা,
চলে গেলে সবার হৃদয়
ক’রে দিয়ে ফাঁকা
চরম অপমানে হায়!
দিন হ’ল যে সবে শুরু?
তা’রি মাঝে শেষের ঘন্টি বাজে!?
বুক করে দুরুদুরু!
অসহ্য যন্ত্রণায় তোমার আঁধার নামে চোখে,
বোবা কান্নায় ফেটে যায় তোমার বুক।
দেশ জুড়ে শুরু হ’ল বিতর্ক!
কোন ওষুধে সারবে
সমাজের এ-অসুখ?
প্রতিবাদের তীব্র ঝড় ওঠে,
ওঠে নীতি কথার ঝড়;
সাপে দংশেনি কখনো যারে
বিষের জ্বালা বুঝবে কি আর?
বসে আছে যারা সেজে পয়গম্বর!
ধর্ষকের হবে সাজা ফাঁসী
কিম্বা যাবজ্জীবন; তা না-হয় হ’ল,
আর নাবালক হ’লে? আরও ভালো!!
আর পিছনে যারা রইলো?
কি হবে তাদের এখন?
বৃত্তি-প্রবৃত্তিকে উস্কে দিয়ে
গান-নাটক-সিনেমা আর ছড়া
ছবি-গল্প- বিজ্ঞাপনে যারা
কামনার বীজ বুনে যায় প্রতিনিয়ত
বাস্তব প্রতিফলনের অজুহাতে
নারী দেহকে ক’রে উলঙ্গ!
নারীদের নিয়ে করে ছিনিমিনি
করে ছেলেখেলা দিয়ে উলম্ফ!
বুড়ো আঙ্গুল আর পশ্চাদ্দেশ ক’রে খাড়া!!
দামিনী তা’কি নয় বলাৎকারের বাড়া?
কি হবে তাদের এখন?
কি বলবে, কি করবে তারা?
দামিনী নাম কিনা তোমার জানি না,
শুধু জানি স-ব আগুন নিভে যাবে একদিন
বিবর্ণ হবে তোমার স্মৃতি!
শুধু থেকে যাবে ধর্ষকের
আর
পর্দার পেছনের কুশীলবদের
‘পর ভয়-ভীতি!
এটাই চন্দ্র-সূর্য-গ্রহ-তারার মত চিরসত্য,
গোড়া কেটে আগায় জল দেওয়া যেমন সত্য।
মূলে হাত কোনদিনও পড়েনি দামিনী,
আর কখনো পড়েনা;
তাই তোমাকেই হ’তে হবে ঘোর যামিনী
এটাই কলিযুগের কামনা।
দামিনী তুমি ছিলে, তুমি আছো,
তুমি থাকবে আকাশে সাদা মেঘের মাঝে।
যখন কালো মেঘে ঢেকে যাবে আকাশ
তখন ভয়াল যামিনী আর করালবদনা দামিনী হ’য়ে
প’ড় ঝ’ড়ে,
স্বর্গ, মর্ত্য আর পাতাল ফুঁড়ে
দানবের বুকে; হেন নির্মম, নৃশংস
হিমালয়সম বিশাল আঘাত।
ভয়াল যামিনীর দামিনীর প্রতি
দিলাম হৃদয়ের এই দাওয়াদ।।
No comments:
Post a Comment