সংবিধানের ৩৭৭ধারা সম্পর্কে দিল্লি হাইকোর্টের রায় আমার মনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিল। একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে ফেসবুকের মাধ্যমে সৃষ্টি তথা মানব জাতির রক্ষা ও বৃদ্ধির স্বার্থে প্রশ্নগুলি তুলে ধরলাম। যদিও জানি ধৈর্য চ্যুতি ঘটবে।সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে কষ্টকর হবে। হয়তো পড়বে না জানি। তাই আগাম ক্ষমা চেয়ে নিলাম। লেখাটা সমস্ত স্তরের সৃষ্টি ও সমাজ সচেতন মানুষের জন্য তুলে ধরলাম। কিন্তু যেহেতু আইন বিষয়টা মুলত প্রশ্নের ওপরই দাঁড়িয়ে আছে তাই মুলত এই লেখাটা আইনের ছাত্রদের কাছেই তুলে ধরলাম। তারা যেহেতু আইনের ছাত্র তাদের কাছে 'আইনের ভিত প্রশ্ন' এই মূল মন্ত্রটা understood. তারা প্রশ্নেরই মুখোমুখি হ'তে চায়। তাদের কাছে ব্যাপারটা নতুন নয়। আইনের ছাত্রদের কাছে অনুরোধ আমার কিছু ভুল হ'তে পারে, শুধরে দেবেন আশা করি। সবার কাছে লেখাটা পৌঁছোবার জন্য লেখাটা Tag করলাম। ফেসবুককে আমি Being & Becoming with environment-এর জন্য শক্তিশালী মাধ্যম মনে করি। তাই সকলের সহযোগিতার জন্য হাত বাড়ালাম। নমস্কার।
দিল্লি হাইকোর্ট LGBT(Lesbian Gay Bisexual and Transgender) -এর পক্ষে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭৭ ধারাকে অসাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছিল।
ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ধারা কি?
যে কোনও ব্যক্তি স্ব-ইচ্ছায় কোনও পুরুষ, মহিলা বা পশুর সঙ্গে প্রকৃতির নিয়মবিরুদ্ধ যৌন ক্রিয়ায় লিপ্ত হলে তার সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন বা ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও জরিমানা হতে পারে।
রায়ে দিল্লি হাইকোর্ট কি বলেছিল? বলেছিল.........
যে কোনও প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি স্ব-ইচ্ছায় যে যৌন প্রকরণে অংশ নেবেন, তাকে অপরাধ বলে দেগে দেওয়া মানে ব্যক্তির মৌলিক অধিকার হরণ করা।
দিল্লি হাইকোর্ট। ২ জুলাই, ২০০৯
দিল্লি হাইকোর্ট ৩৭৭ ধারা প্রসঙ্গে যে রায় দিয়েছিল তা’তে স্বাভাবিক ভাবে মনে প্রশ্ন জাগে ভারতীয় সংবিধান এত বছরেও এখনও সাবালক হ’তে পারেনি! নাবালকের মত আচরণ করছে এতবড় ঐতিহ্যশালী দেশের সংবিধান! বালখিল্য ধারায় ব’য়ে চলেছে দেশ, দেশের সাবালক জ্ঞানীগুণী পণ্ডিত মানুষ, দেশের শিক্ষা-সংস্কৃতি! এতদিন পরে হাইকোর্ট, আরও সহজ ক’রে বলা ভালো হাইকোর্টের বিচারপতি লক্ষ্য করলেন, আবিষ্কার করলেন দেশের বয়স বেড়ে যাচ্ছে কিন্তু অপুষ্টিজনিত কারণেই হ’ক কিম্বা হরমোনাল ডিসঅর্ডার বা অন্য কোন শারীরিক বা মানসিক গোলযোগের কারণেই হ’ক দেশ সাবালক হ’চ্ছে না বা আধুনিক হ’য়ে উঠছে না। তাই লেখাপড়াজানা আধুনিক মানুষের নেতৃত্বে হাইকোর্ট সংবিধানের ৩৭৭ধারা-কে প্রাগৈতিহাসিক বস্তাপচা ও অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে বাতিল ক’রে দিয়েছেন। এতে উল্লসিত প্রকৃতির নিয়ম বিরুদ্ধ যৌন ক্রিয়ায় লিপ্ত মানুষেরা। আইনি স্বীকৃতি তাদের Identity crisis থেকে মুক্তি দিল। মুক্তি দিল সমস্ত রকম অত্যাচার থেকে। স্বাগতম।
এখন প্রশ্ন?
দিল্লি হাইকোর্টের রায় কি সংবিধান রচয়িতার মানসিক অপরিপক্কতা ও অদুরদর্শিতা প্রমাণ করল না? সংবিধান রচনার এতদিন পরে দিল্লি হাইকোর্ট কি প্রমাণ করলনা অযোগ্য, অদক্ষ, অন্ধ ও সঙ্কুচিত মনের লোকেরাই এতদিন বিচারসভা আলোকিত ক’রে বসেছিলেন? তাহ’লে কি এটাই প্রমান হ’লনা ৩৭৭ধারার বিপক্ষে এতদিন পরে যে বিচারকেরা রায় দিলেন তাঁরা অনেক বেশী সমাজ সচেতন যোগ্য, দক্ষ, দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও মুক্ত মনের মানুষ?
যাইহোক দিল্লি হাইকোর্টের রায়ে এটা পরিষ্কার হ’ল যে, প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি মাত্রই স্ব-ইচ্ছায় যে কোন যৌন প্রকরণে অংশ নিতে পারেন। এই অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে নৈতিক বা অনৈতিক, প্রকৃতিগত বা প্রকৃতি বিরুদ্ধ অপরাধ ব’লে কোন দাগ এঁকে দেওয়া যাবে না। এ-তাদের মৌলিক অধিকার। যে কোন যৌন ক্রিয়ায় লিপ্ত হওয়ার ক্ষেত্রে ছাড়পত্র বা আইনি বৈধতা হ’ল প্রাপ্তবয়স্ক ও স্ব-ইচ্ছা।
এখন প্রশ্ন?
তাহ’লে ইচ্ছুক অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে কি হবে? তাদের ক্ষেত্রে কি অপরাধ ব’লে গণ্য হবে? হ’লে, তাদের জন্য আইনি শাস্তি কি হবে? যদি তাদের ক্ষেত্রে অপরাধ হয় তাহ’লে তাদের ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকার হরণ করা হবে না-কি? কারণ সংবিধানের ৩৭৭ধারায় প্রকৃতি বিরুদ্ধ যৌন ক্রিয়ায় লিপ্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কোন বয়সের উল্লেখ নেই। ‘প্রকৃতির নিয়মবিরুদ্ধ যৌন ক্রিয়া’-কেই অপরাধ বলে চিহ্নিত করেছে সংবিধান। কিন্তু দিল্লি হাইকোর্টের রায়ে প্রকৃতি বিরুদ্ধ যৌন ক্রিয়ার ক্ষেত্রে অপরাধের একটা প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্কের শ্রেণী বিভাগ করেছে। সংবিধান প্রণেতা কি জেনেবুঝেই শ্রেণীবিভাগ এড়িয়ে গিয়ে প্রকৃতি বিরুদ্ধ যৌন ক্রিয়াকেই সার্বিকভাবেই অপরাধ বলে ঘোষণা করেছিলেন? তাহ’লে প্রাপ্ত-অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে প্রকৃতি বিরুদ্ধ যৌন ক্রিয়ার ক্ষেত্রে প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধী নয় আর অপ্রাপ্তবয়স্ক অপরাধী এই চিহ্নিতকরণের জন্য বিচারের নীতি কি ছিল? আইনের চোখে মৌলিক অধিকারের সংজ্ঞা কি? মৌলিক অধিকার ভোগ করার ক্ষেত্রে কি কোন বয়সের মাপকাঠি আছে? মৌলিক অধিকার কি সমাজবদ্ধ জীবের স্ব-পারিপার্শ্বিক বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার জন্য যে অনুশাসন, সভ্যতা বিকাশের পদ্ধতি এবং জন্মবিজ্ঞান ও মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষার যে বিধান বা কৌশল বা মরকোচ তার চেয়েও অধিক গুরুত্বপুর্ণ ও প্রাধান্যপ্রাপ্ত? প্রাপ্তবয়স্ক হ’লেই মৌলিক অধিকারের নামে যা’ ইচ্ছা তাই করবার অধিকার জন্মায়? সমাজবিজ্ঞান বা সমাজবিষয়ক আইন তাকে স্বীকৃতি দিচ্ছে? নিজের ইচ্ছা হলেই আমি যা’ মনে চাইব তাই করবার অধিকারী? কি কি করার অধিকারী আর অধিকারী না তার একটা সুস্পষ্ট ধারণার সৃষ্টি করতে পারে না-কি আইন বা আইনজ্ঞ বা প্রধান বিচারালয়? আর রায়ে স্ব-ইচ্ছা ব্যাপারটা ঠিক পরিষ্কার নয়। কেননা স্ব-ইচ্ছা বলতে উভয়ের ইচ্ছা আছে এটা বোঝাচ্ছে না। তাহ’লে প্রাপ্তবয়স্ক একজনের ইচ্ছা আছে আর একজনের ইচ্ছা নেই সেক্ষেত্রে প্রকৃতি বিরুদ্ধ যৌন সম্পর্ক স্থাপনে কি অপরাধ হবে? অনিচ্ছুকের মৌলিক অধিকার হরণ হবে? সৃষ্টির বিধানে যৌন ক্রিয়ায় অংশগ্রহণের মূল উদ্দেশ্য কি? মূল উদ্দেশ্য সন্তান সৃষ্টি। এ-ব্যতিরেকে যৌন সম্পর্ক স্থাপন শারীরিক চাহিদা মেটানোর উদ্দেশ্য হ’তে পারে কিন্তু তা’ একমাত্র পজিটিভ-নেগেটিভ এর সম্পর্কে প্রযোজ্য হ’তে পারে কারণ সেখানে সৃষ্টির চাহিদাকে প্রয়োজনভিত্তিক সাময়িক নিষ্ক্রিয় ক’রে রাখা হয়েছে, কিন্তু কখনোই তা’ বিধাতার বিধান বহির্ভুত পজিটিভ-পজিটিভ, নেগেটিভ-নেগেটিভ সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বিশেষ জ্ঞান বা আইন কি বলে পজিটিভ-পজিটিভ, নেগেটিভ-নেগেটিভ-এ কোন বিদ্যুৎ প্রবাহের সৃষ্টি হয়? যদি না হয় তাহ’লে কি তা’ প্রকৃতি বিরুদ্ধ? আর যদি হয় তাহ’লে তা’ কি সৃষ্টির প্রতিকূল জীবন বিধ্বংসী বিস্ফোরণ ঘটায়? কেন ঘটায়? যৌন ক্রিয়ায় লিপ্ত হওয়াই কি মানবজাতির জীবনের এক এবং একমাত্র লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য? কারও কোন কাজকে আইনের চোখে অপরাধ ব’লে গণ্য করা কি সমাজ সম্পর্কিত বিষয় নয়? সমাজ যাকে অপরাধ বলে, আইন কি তাকে অপরাধ ব’লে স্বীকার করে না? না-কি আবার আইন যাকে অপরাধ বলে সমাজ তাকে অপরাধ ব’লে স্বীকার ক’রে না? সমাজের উর্দ্ধে কি আইন না-কি আইনের উর্দ্ধে সমাজ? সমাজ ও আইন কি সৃষ্টিকে, সৃষ্টির ভিতকে রক্ষা ও পালন, সৃষ্টির বিকাশ, সমাজ ও সভ্যতার অগ্রগতি, পরিবার, পরিবেশ, পরিস্থিতির পরিবর্তন ও পরিবর্দ্ধন, পারিপার্শিকসহ বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার যে অনুশীলন অর্থাৎ উপদেশ, শিক্ষা, আদেশ, বিধান ইত্যাদির ক্ষেত্রে পথ দেখানোর জন্য একসঙ্গে যৌথভাবে কাজ ক’রে না? পরস্পর পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল নয়? এককথায় Edict of the nature –কে অনুসরণ ক’রে না? সৃষ্টির মূল যে মেকানিজম, যে মরকোচ, যে বিধি, যে নিয়ম, যে কানুন, যে সত্য এককথায় ত্রুটিহীন জৈবী সংস্থিতি (Defect less Biological make-up) তার ওপর দাঁড়িয়ে কি আইন তৈরী হয়? না-কি আইনের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে সৃষ্টির ত্রুটিহীন জৈবী সংস্থিতি? মানুষ সৃষ্টি করে আইন না-কি আইন মানুষ সৃষ্টি করে? সৃষ্টি, সমাজ, সভ্যতা-কে রক্ষা করে আইন? না-কি আইনকে রক্ষা করে সৃষ্টি, সমাজ আর সভ্যতা? ব্যক্তির মৌলিক অধিকার হরণ ও তার রক্ষায় আইনজ্ঞ চিন্তিত মানে ব্যক্তির মৌলিক অধিকার হরণ ও রক্ষা আইন-কানুন বিষয়ক ভারী ভারী বই পড়া বিচারকের দায়িত্বপ্রাপ্ত কতিপয় জ্ঞানী মানুষের বোধবুদ্ধির ওপর নির্ভরশীল। তাহ’লে সৃষ্টির বা ত্রুটিহীন জৈবী সংস্থিতির যে মূল মরকোচ, মূল মেকানিজম তার যে মৌলিক অধিকার সেই অধিকার যদি হরণ হয় তাহ’লে তা’কে রক্ষা করবে কে? এ-সম্পর্কে আইন, আইনজ্ঞ বা প্রধান বিচারালয় কি বলেন? আইনজ্ঞ বা বিচারপতি বা প্রধান বিচারালয় কি মানব সম্পদ ক্ষয়, সভ্যতার অবক্ষয়, মানবজাতির অবলুপ্তি, বিশ্বঅশান্তির মূল উৎসের যে কারণ সেই কারণ সম্পর্কে অবহিত ও চিন্তিত? সেই কারণ বা কারণগুলি কি আইন, আইনজ্ঞ, বিচারালয় বা আইন প্রণেতাদের এক্তিয়ারভুক্ত? তাঁরা কি এই কারণের দায় নেবেন? না-কি তাদের কোন দায় আছে? বায়োলজিক্যালি মানসিক ত্রুটি, দোষ, অপূর্ণতা, বিকৃতি ইত্যাদির ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকারের অবস্থান আইনের চোখে কোথায়? আর মানুষে-পশুতে যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে কি বিচারালয় অনুমতি প্রদান করেন? দিল্লি হাইকোর্টের রায়ে তা’ পরিষ্কার বোঝা গেল না। একটা ধোঁয়াশা রয়ে গেল না-কি রায়ে? যে দিল্লি হাইকোর্টের রায় সংবিধানের ৩৭৭ধারাকে অসাংবিধানিক বলছে সেই রায়ে ধোঁয়াশা? আর যদি মানুষে-পশুতে যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে অনুমতি প্রদান করেন তাহ’লে পশুর ক্ষেত্রে কি প্রাপ্তবয়স্ক এবং স্ব-ইচ্ছা ব্যাপারটা আছে? থাকলে সেটা কিভাবে বিচার্য? মানুষ-পশুর যৌন মিলনের ক্ষেত্রে যদি কোন আইন বিরুদ্ধ কিছু ঘটে তাহ’লে কার পক্ষে বিচারালয়? বোধবুদ্ধি সম্পন্ন, মান ও হুঁশ সম্পন্ন মানুষের পক্ষে না-কি অসহায় পশুর পক্ষে? পশুর ক্ষেত্রে কি মৌলিক অধিকার ব’লে কোন কিছু আছে? না-কি সে পশু ব’লে সে অধিকার বঞ্চিত? পশুর ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকার কিভাবে প্রমান হবে? আর মানুষে-পশুতে ইচ্ছা সংক্রান্ত প্রশ্নে অন্যায় কিছু হ’লে সেক্ষেত্রে মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে কার মৌলিক অধিকার প্রাধান্য বা অগ্রাধিকার পাবে? একসঙ্গে অনেক লোক যদি বলে আমরা পৃথিবীতে এসেছি ল্যাংটা, পৃথিবী থেকে চলে যাব ল্যাংটা তাহ’লে মাঝখানে জামাকাপড় পড়ে থাকবো কেন? কেন জন্মমৃত্যুর মাঝখানে পৃথিবীতে এই অল্প সময়টা ল্যাংটা থাকবো না? উলঙ্গ অবস্থানটা তো মৌলিক, জন্ম সম্পর্কিত? তাহ’লে সেক্ষেত্রে ল্যাংটা থাকাটা আইনত সিদ্ধ হ’বে না কেন? সভ্যতার দোহাই দিয়ে ল্যাংটা লোকের মৌলিক অধিকার হরণ করা হবে কেন? তার আচরণকে প্রকৃতি বিরুদ্ধ, বিকৃত আচরণ বলা হবে কেন ? কেন তাকে পাগল আখ্যা দেওয়া হবে? সমাজ-সংস্কৃতির অজুহাতে কেন সত্যকে অস্বীকার করা হবে? দিল্লি হাইকোর্টের রায়ে LGBT-রা Identity crisis থেকে মুক্তি পেলেই কি তাদের সমস্ত যন্ত্রণার চিরকালীন অবসান হবে? সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা ফিরে পাবে? মনুষ্য সমাজ তাদের বর্তমানের মত ভবিষ্যতেও ব্রাত্য ক’রে রাখবে না-তো? এর গ্যারান্টি কোথায়? কে দেবে? আইন দেবে তো? যাদের পক্ষে হাইকোর্ট রায় দিল তারা যে এমন একটা অপমানকর যন্ত্রণাদায়ক অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তার উৎস কোথায়? এরকম অদ্ভুত মানসিকতার জন্য যে অপমান যন্ত্রণা উপেক্ষা তারা সমাজের কাছে বা সমাজ ব্যবস্থার কাছে প্রতিনিয়ত পাচ্ছে তার জন্য কে দায়ী? সমাজ, সমাজব্যবস্থা, তারা নিজেরা অর্থাৎ তাদের প্রকৃতি বিরুদ্ধ যৌনাচারের অদ্ভুত অস্বাভাবিক মানসিকতা না-কি তাদের জৈবী সংস্থিতি কিম্বা জন্মদাতা? কে? রক্তেরও তো একটা মৌলিক অধিকার আছে। সেই হিসাবে তাদের মৌলিক অধিকার থাকতেই পারে। সেই মৌলিক অধিকার মেনে নেবে তো সমাজ বা আমাদের মুখোশ পরিহিত মানবকুল? মুখ আর মুখোশের ভয়ংকর দ্বন্ধে চূড়ান্ত জেরবার হবে না-তো LGBT-রা? Identity crisis থেকে মুক্ত হওয়ার পর এদের ওপর ঘটে চলা সমস্ত রকম মানসিক, শারীরিক, আত্মিক অত্যাচার বন্ধ হবে তো? যদি না হয় তখন আইন কি বলবে? আইনকে চিরকালীন সমাধান দিতে হবে; দেবে তো? মানুষের প্রকৃতির নিয়ম বিরুদ্ধ স্বভাবের সঙ্গে প্রশাসনিক অত্যাচার, তথাকথিত সভ্যতার মুখোশধারী মানুষের অসভ্য অত্যাচারের সম্পর্ক কোথায়? অত্যাচার বন্ধের জন্য এতদিন আইন পদক্ষেপ নেয়নি কেন? এর জন্য দায়ী কি তাহলে আইনই নয়? কিন্তু রক্তের মৌলিক অধিকার কি? রক্তের মৌলিক অধিকার বলতে কি বোঝায়? তা হ’ল রক্তের শুদ্ধতা। সেই শুদ্ধতার মৌলিক অধিকার কেড়ে নিল কে? ফ্রাঙ্কেনষ্টাইনের মতো মানুষেরও তো মৌলিক অধিকার আছে? সে-তো নিজের ইচ্ছায় পৃথিবীতে আসেনি। তা-কে আনা হয়েছে। তার রক্ত শুদ্ধ-অশুদ্ধ যাই হ’ক সেই রক্তের মধ্যে যে মৌলিক অধিকার সুপ্ত রয়েছে সেই মৌলিক অধিকার হরণ করার অধিকার কে দিল? কেন দিল? আইনের কোন মাপকাঠিতে দেওয়া হ’ল? অপসংস্কৃতির প্রভাবে কিম্বা অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতে সৃষ্ট প্রকৃতি বিরুদ্ধ কাজ এবং ত্রুটিপুর্ণ জৈবী সংস্থিতি প্রভাবিত ও পরিচালিত প্রকৃতি বিরুদ্ধ কাজ দুটোই কি মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে? অবরুদ্ধ পরিস্থিতিতে জোর ক’রে প্রকৃতি বিরুদ্ধ উপায়ে সিংহ ও বাঘের অসম মিলনে যে প্রকৃতি বিরুদ্ধ অদ্ভুত জন্তু লাইগারের জন্ম হয়েছিল সেই জন্মের জন্য উভয় পশুর যে মৌলিক অধিকার হরণ হয়েছিল তার জন্য দায়ী কে? লাইগারের জন্মের পর সে যে কষ্ট পেয়েছিল এবং জন্মের অব্যবহিত পরেই তার যে অবর্ণনীয় কষ্টকর মৃত্যু হয়েছিল তার জন্য দায়ী কে? কেন ভবিষ্যতে এই ধরণের প্রকৃতি বিরুদ্ধ কাজে নিষেধাজ্ঞা আনা হ’ল? না-কি পশুর ক্ষেত্রে মৌলিক অধিকারের কোন মূল্য নেই? যেমন মূল্য নেই মানুষের ভোগের জন্য, যোগান অনুযায়ী চাহিদা মেটানোর জন্য মুরগীর যে মৌলিকত্ব তা’ নষ্ট ক’রে জড়বৎ একতাল মাংসের যে পোলট্রি মুরগীর সৃষ্টি হ’ল সেই সৃষ্টির জন্য। কোন এক জায়গায় পড়েছিলাম পুরুষ মানুষের পশ্চাদদেশে না-কি শিশু জন্মাবার জন্য পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছে কোন এক বিজ্ঞানী। এটাও কি বিজ্ঞানীর মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে? যদি পড়ে কেন পড়ে? আর যদি না পড়ে কেন পড়ে না? পশুর ক্লোন তৈরীতে কোন আপত্তি নেই, নেই কোন বাধানিষেধ। কিন্তু মানুষের ক্লোন তৈরীতে পৃথিবী জুড়ে বাধা। কেন? এটা কি বিজ্ঞানীর মৌলিক অধিকার হরণ নয়? বিজ্ঞানীর মৌলিক অধিকার রক্ষা করবে কে? মানুষের মৌলিক অধিকার আর সৃষ্টির উপাদানের, প্রকৃতির মূল মরকোচ বা প্রকৃতির যে বিধান তার মৌলিক অধিকার কি এক? এমন নানা প্রশ্নের উত্তর দেবে কে? বিচার ব্যবস্থা দেবে তো?????
No comments:
Post a Comment