শকুন্তলা মায়ের পূজারী সৎসঙ্গী মায়েরা ও দাদারা আপনারা যেমন সংসারী তেমনি আমিও সংসারী মানুষ। আর আমি সংসারী মানুষ বলেই আর একজন আমার প্রিয় আপনার জন সংসারী মানুষের সঙ্গে ভাবের আদান প্রদান করছি মাত্র। এর বেশী কিছু নয়। অথচ ব্যাপারটাকে অন্যদিকে মোড় ঘুরিয়ে দিয়ে সীমা অতিক্রম করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সৎসঙ্গী মায়েদের ও দাদাদের আমার প্রিয়জন মনে করেই চোখের ওপর থেকে অজ্ঞানতার পর্দাটা সরাতে চেয়েছি। হয়তো বুঝতে অসুবিধা হ'তে পারে। আমি আমার আপনার প্রিয়জন ভেবে সত্য তুলে ধ'রে ঈশ্বর বা ধর্ম সম্পর্কে আলোচনা করেছি, কিছু প্রশ্ন তুলেছি "কোন্নগড়ে শকুন্তলা কালী পুজো ও সৎসঙ্গীবৃন্দ। (১) আর্টিকেলে। আর তাতে বিরুপ প্রতিক্রিয়া হবার কোনও দরকার নেই। ব্যাপারটা এরকম হ'য়ে না যায় পরিণতিতে যে "অপাত্রে অযোগ্যে করিলে দান, দাতা গ্রহীতা দুই-ই ম্লান।"
যাই হ'ক, বিষয়টাকে যখন অন্যদিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হচ্ছে তখন বলি, এখানে কোনও তর্ক বিতর্ক না ক'রে সাদা চোখে যদি বিষয়টাকে দেখি (এর জন্য পি এইচ ডি করার দরকার পড়ে না, কিন্তু করলে ভালো) তাহ'লে বলতে পারি, আপনি আমি তো সংসারে প্রবেশ করেছি, সংসারী হয়েছি তা আপনি আমি কি সেই আগের আর্য্য সমাজব্যবস্থার মত গার্হস্থ জীবনে প্রবেশ করার আগে ব্রহ্মচর্য্য জীবন অতিবাহিত করেছি? করিনি। সরাসরি গার্হস্থ জীবনে প্রবেশ ক'রে গৃহি হ'য়ে গেছি। বর্তমান সমাজ ব্যবস্থায় সবাই। তাহ'লে কি দেখা গেল? যুগের পরিবর্তনে ব্রহ্মচর্য্য নামক আশ্রমে জীবন না কাটিয়েও গার্হস্থ নামক আশ্রমে প্রবেশ করা যায় তেমনি পি এইচ ডি প্রশ্নেও ঠিক তেমনি। যা ফল হবার তাই-ই হয়। যদি সত্যি সত্যিই এই মায়ের কাছে বলি দেওয়া প্রথা নিয়ে পি এইচ ডি করতাম তাহ'লে আমাদের মতামত অন্য রকমের হ'তো। আদিকাল থেকে চলে আসা মায়ের পুজা ও পুজা পদ্ধতির পরম্পরা নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে যে প্রশ্ন উঠছে সেই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যেত, সমাধান পেত মানুষ যদি সত্যি সত্যিই পরস্পরের মধ্যে কূটকচাল, তর্কবিতর্ক ও ঝগড়াঝাটি না ক'রে জ্ঞানের সাগরে ডুব দিয়ে পি এইচ ডি করতাম কিম্বা দ্রষ্টাপুরুষকে অনুসরণ করতাম। আর যদি জীব বলি প্রথার মাধ্যমে পূজা পদ্ধতি মানার কথায় ওঠে, তাহ'লে দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের মায়ের পূজার প্রথা মানি না কেন আমরা? সেখানে তো মায়ের সামনে কোনও জীব বলি হয় না। সেখানে তো আগে বলি প্রথা ছিল কেন বন্ধ হ'লো? এ বিষয়ে পি এইচ ডি কেন করছি না? কেন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরের মত আরো অনেক অনেক মন্দিরে হাজার বছর ধ'রে চলে আসা নৃশংস বলি কুপ্রথা বন্ধ হ'য়ে গেছে তার কারণ অনুসন্ধান আমরা করি না? কেন রবীন্দ্রনাথের মত শত শত মহাপুরুষ এই পুজোর নামে নৃশংস হত্যা প্রথার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন কেন সেই বিষয়ে কেন জানার চেষ্টা করছি না? করছি না কেন গবেষণা? দক্ষিণেশ্বরের মত জায়গার পবিত্র পরম্পরা কেন মানছি না? কেন তা না মেনে অপবিত্র পরম্পরা মানছি?
আর, মা রক্ত খেয়েছে কি খায়নি তা কি চোখের সামনে দিয়ে ভেসে যাওয়া রক্তের নদী দেখে বুঝতে পারি না আমরা? ভক্তি শ্রদ্ধার নামে, পুজো পার্বণের নামে অজ্ঞাতসারে এতটাই নৃশংস মানসিকতার অধিকারী হ'য়ে গেছি যে চোখের সামনে ভেসে যাওয়া রক্তনদীকে গঙ্গার পবিত্র ব'য়ে যাওয়া জলধারা মনে করছি!!!!!!! তাহ'লে গঙ্গার জলের মত এক ঘটি মায়ের সামনে বলি দেওয়া মায়ের সন্তানের পবিত্র রক্ত ঘরে এনে রাখতে পারেন তো? তাই নয় কি? আর, আজ থেকে বহু বছর আগে তো ধর্মের নামে সতী দাহ প্রথা ছিল, ছিল না বিধবা বিবাহ প্রথা, ছিল না নারী শিক্ষা ইত্যাদি অনেক অনেক কুসংস্কারাচ্ছন্ন প্রথা সেগুলি এখন মানেন না কেন? পারবেন মানতে সেইসব ধর্মীয় প্রথা? আচ্ছা যান তো দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরে গিয়ে আদিকাল থেকে চলে আসা পরম্পরার দোহাই দিয়ে বলি দিয়ে পুজো দিয়ে আসুন তো? পারবেন? কেন পারবেন না?
এছাড়া এই পূজায় বিশ্বাসী মানুষেরা বলেন, ঈশ্বর যা করেন তা মঙ্গলের জন্য ক'রে থাকেন আর তাই যদি মঙ্গল হ'য়ে থাকে তাহ'লে এই জীব বলি পুজো কোন ঈশ্বর চালু করেছিলেন? আকাশের সে কোন ঈশ্বর যিনি এইসমস্ত বীভৎস ভয়ংকর বলি পুজারীদের বলেছিলেন মায়ের সামনে মায়ের সন্তানকে খাড়ার এক কোপে দু'টুকরো ক'রে পুজো করতে? কে সেই মঙ্গলদায়ী ঈশ্বর? কি নাম তার? তিনি কি মূর্ত নাকি অমূর্ত ভগবান? আর যদি কোনও মঙ্গল লুকিয়েই থাকে তাহ'লে যে মায়েরা এই হত্যালীলাকে মায়ের পুজোর নামে সমর্থন ক'রে আমার বিরোধিতা করছেন তাদের কাছে যদি কোনোদিন মা স্বপ্নে কিম্বা হঠাৎ এক নির্জন দুপুরে বা রাতে এসে বলে, 'তোর সন্তানকে আমার চাই, আমার কাছে বলি দে' তখন সেই ঈশ্বর মায়ের আহবানে সাড়া দেবে তো মায়ের অন্য সন্তানের হত্যালীলার সমর্থনকারী মায়েরা? দাদাদের বললাম না। কারণ সন্তান ১০ মাস ১০ দিন ধারণ করেন মা। গর্ভযন্ত্রণা কি তা মায়েরা জানে, আমরা দাদারা তা বুঝবো না।
আফসোসের বিষয় সেই গর্ভযন্ত্রণাও ভুলে যাচ্ছে মা!!!!!! এই জন্যই বোধহয় বলা হ'য়ে থাকে দুয়ারে ঘোর কলি! বোধের ঘর আজ শূণ্য, ধু ধু মরুভুমি!
ক্রমশঃ ( লেখা ২রা মে, ২০২২ )
No comments:
Post a Comment