কিন্তু মানুষ রিপুতাড়িত পাগলা মনের ঘানিতে প'ড়ে পিষ্ট হ'তে হ'তে শরীরে-মনে ক্ষতবিক্ষত জীবন কাটাচ্ছে। আবার এই মন দিয়েই মানুষ প্রতিটি রিপুকে যথাযথ প্রয়োগের মধ্যে দিয়ে সৃষ্টির কাজে মগ্ন থেকে রিপুকে সঠিক পথে উপভোগ করছে। প্রতিটি রিপুই আমার জীবনকে ভোগ করার জন্য। কোনটাই আমার অস্তিত্ব বিরোধী নয়। প্রতিটি রিপু আমার অস্তিত্বকে আমি যতদিন বাঁচবো ততদিন পোষণ দেওয়ার জন্য ঈশ্বর আমি যেদিন ভ্রূণ আকারে মাতৃ জঠরে আবির্ভূত হ'য়েছিলাম তখনি সঙ্গে দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু মাতৃজঠর থেকে এই পৃথিবীতে পা রাখার পর ধীরে ধীরে বড় হ'তে হ'তে সঠিক পরিচালনার অভাবে এই রিপুরা তাদের স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে আমাদের ইচ্ছেটা আমাদের-ই এই স্লোগান তুলে আমার জীবনের পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে যেমন ইচ্ছা তেমন চালাতে শুরু করেছে। তখন আমরা লাগামছাড়া বিশৃঙ্খল উচ্ছৃঙ্খল রিপু দ্বারা তাড়িত হ'য়ে ছয় রিপুর বৃত্তে পিষ্ট হ'তে হ'তে চক্ষু কর্ণ নাসিকা জিহ্বা ও ত্বক এই পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে যেমন ইচ্ছা তেমনভাবে চালিত করছি। এক কথায় সৃষ্টিকর্তা আমি আসার সময় আমার সাথে ছয়জন চাকর দিয়ে আমায় পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন আমাকে দেখভাল করার জন্য, আমাকে সাহায্য করার জন্য যাতে আমি এই পৃথিবীতে অল্পদিনের জন্য আসা মেহমান হিসেবে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টিকে প্রকৃষ্ট পন্থায় ভোগ করতে পারি ও এই জীবনকে, জীবনের আসাকে সার্থক ক'রে তুলতে পারি।
কিন্ত আমরা তা পারলাম না, পারছি না। প্রত্যেকেই শরীরে মনে আত্মায় কষ্ট দুঃখ যন্ত্রণা ভোগ করতে করতে পৃথিবী থেকে চলে যাচ্ছি। আর এই ব্যর্থ ও আনুন্দ বঞ্চিত হ'য়ে চলে যাওয়ার জন্য আমি নিজে দায়ী। হয়তো প্রথম জীবনে যতদিন মা-বাবার ওপর নির্ভরশীল ছিলাম ততদিন আমার মা-বাবা আমায় সঠিক রাস্তায় সঠিক ভাবে না চালানোর জন্য আমার জীবন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কিন্তু যেদিন আমি বড় হয়েছি, ভালোমন্দ জ্ঞান হয়েছে তখন এই ক্ষতবিক্ষত জীবনকে নতুন ক'রে বাকী জীবন চালাবার জন্য পথের সন্ধান করিনি কিম্বা সন্ধান পেলেও তা গ্রহণ করিনি। বরং আরো জাহান্নামের পথে জীবন গাড়িকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছি। আর তার ফল যা পাবার আমি পেয়েছি ও পেয়ে চলেছি। আর আমার পরবর্তী বংশধর তার খেসারত দেবে যতদিন না নিজে নিজেকে জাহান্নামের গাড্ডা থেকে তুলে আনে।
তাই যদি এখনও যে কয়দিন বাঁচবো, যে ক'দিন বাঁচার আশা আছে আসুন কখনো না হওয়ার চেয়ে ও একেবারে না হওয়ার চেয়ে দেরীতে হ'লেও কিছুটা হ'লেও মনের গলায় লাগাম পড়ায়, মনকে নিয়ন্ত্রণ করি, শাসন করি আর মনকে উল্টে নম করি অর্থাৎ নমন করি, নত করি জীবন্ত ঈশ্বরের চরণ তলে চলন পুজো করবো ব'লে। দেরীতে হ'লেও বাকী জীবন জীবন্ত ঈশ্বরের চরণ তলে বসে চরণ পুজো নয় তাঁর চলনকে পুজো করি ও বাকী জীবন উপভোগ করি আর নিজের অভিজ্ঞতা উপলব্ধি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য ব্যয় করি অস্খলিত অকপট ভাবে।
( লেখা ৪ই মে, ২০২১ )
No comments:
Post a Comment