প্রয়োজনের সময় যা অপরিহার্য প্রয়োজন মিটে যাওয়ার পর মুহুর্তে কেউ অপরিহার্য নয় এই বিকৃত, অবাস্তব, অবৈজ্ঞানিক দর্শন গ্রহণ করার ফল কি হয়েছিল তা ‘কেউ অপরিহার্য নয়’ চার পর্বে তুলে ধরা হয়েছিল। কাহিনী গুলিতে বিশ্লেষণ করা হয়েছিল কেউ পরিহার্য নয়। সবাই সবার জায়গায় অপরিহার্য! রামায়নে রামের সেতু বন্ধনের সময় যে মহা কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছিল সেই সময় কাঠবিড়ালির ভূমিকা স্মরণীয়। কাঠবিড়ালি এসে প্রভু রামকে বলেছিল, আমায় সেতু বন্ধনের কর্মযজ্ঞে যোগদানের সুযোগ দাও। আমিও তোমার এই বিশাল কর্ম্মযজ্ঞে যুক্ত হতে চাই। প্রভু রাম এই কথা শুনে খুব খুশি হয়ে মিষ্টি হেসে তাকে কোলে তুলে নিয়ে বলেছিল তুমি এই ছোট্ট প্রাণী, তুমি কি সাহায্য করবে? তখন ছোট্ট কাঠবিড়ালি বলেছিল, আমি আমার এই ছোট্ট মুখে মাটি এনে এনে তোমার সেতু বন্ধনে সাহায্য করব। প্রভু রাম তার কথায় খুশি হয়ে তাকে এই বিশাল কর্ম্মযজ্ঞে সম্মানের সঙ্গে যথাযোগ্য সমান মর্যাদায় সামিল করে নিয়েছিল। কেউ যে জীবন যজ্ঞে, উন্নয়নের কর্ম্মযজ্ঞে পরিহার্য নয় সবাই যে অপরিহার্য তাঁর এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন মর্যাদা পুরুষ রামচন্দ্র। পরমপুরুষ রামচন্দ্র তাঁর সুযোগ্য, বলিষ্ঠ, দক্ষ নেতৃত্বে সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায়, যোগদানে ঐ সেতু বন্ধনের মত কঠিন অসম্ভব কাজকে সম্ভব করে তুলেছিলেন।
তাই আমরা যেন ভুলে না যায় সঠিক পথ দেখাবার জন্য দলে একজন অধিনায়কের প্রয়োজন হয় এটা যেমন চন্দ্র সুর্য্যের মত সত্য ঠিক তেমনি বাকী দশ জনের ঐকান্তিক সম্মিলিত জীবন মরণ এক করে যোগদান গৃহীত কোনো প্রচেষ্ঠাকে বাস্তবায়িত করে তোলে সেটাও চন্দ্র সূর্য্যের আলোর মত সত্য। তাই কেউ যখন আওয়াজ তোলে ‘কেউ অপরিহার্য নয়’ তখন বুঝতে হবে হয় সে জীবন যুদ্ধে সেনাপতির বা সৈনিকের ভুমিকায় অপরিপক্ষ, অনভিজ্ঞ, অজ্ঞ, অদূরদর্শী, অযোগ্য ও অদক্ষ আর না-হয় সে নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য দলের মধ্যে শকুনির ভূমিকা পালন করছে সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে অন্ধকারে রেখে। আবার এটাও সত্যি কেউ কেউ সর্বোচ্চ নেতৃত্বের কোনটা ভুল পদক্ষেপ আর কোনটা ঠিক সব বুঝেও নীরব থাকে, নির্লজ্জ তোল্লা দিতে থাকে শুধুমাত্র নিজের অবস্থান বজায় রাখার জন্য, কায়েমী স্বার্থকে অক্ষুন্ন রাখার জন্য। আর একদল আছে খাদের কিনারায় এগিয়ে যাচ্ছে দল, এগিয়ে যাচ্ছে সংগঠন, এমনকি সর্বোচ্চ নেতৃত্ব এটা বোঝা সত্ত্বেও চুপ করে থাকে কিম্বা সবকথায় হ্যাঁ হ্যাঁ করতে থাকে শুধুমাত্র শোচনীয় পরিণতি দেখবার অপেক্ষায়। বর্তমানে তৃণমূল সমর্থক, নেতাদের প্রায় বলতে শুনি দলে একটাই পোষ্ট, বাকি সব ল্যাম্পপোষ্ট। এই বাক্যের অন্তর্নিহিত অর্থ যেভাবে যে ইঙ্গিতে দলীয় নেতৃবৃন্দ, কর্ম্মী, সমর্থক ও অনুগামীরা ব্যক্ত করে তা’তে অনেকগুলি দিক যেমন ব্যঙ্গ্যার্থ, তোয়াজ, অতিভক্তি বা অন্ধভক্তি ইত্যাদি দিক ভেসে ওঠে। সে যাই হোক না কেন এটা মনে রাখতে হবে, বুঝতে হবে সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী মানুষটিকে উদ্দেশ্য ক’রে ‘একটাই পোষ্ট বাকী সব ল্যাম্পপোষ্ট’ এই কথা যারা বলেন তারা উপরে বর্ণিত কোন গোত্রের মধ্যে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে এটাও বুঝতে হবে তাঁর কোন দোষে সত্য কথা বলা থেকে বিরত থাকতে চায় তাঁর সহযোদ্ধারা। আর বুঝতে হবে সত্য কথা শোনার মত তাঁর অর্থাৎ সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারীর সৎ ও মজবুত মানসিকতা আছে কিনা।
আর এই চার বছরে বহুলব্যবহৃত ও বহুল প্রচারিত ‘একটাই পোষ্ট বাকী সব ল্যাম্পপোষ্ট’ এই কথাটিকে যদি পজিটিভ দিক থেকে বিশ্লেষণ করা যায় তাহ’লে দেখা যাবে একটা পোষ্ট ঘিরে যে ল্যাম্পপোষ্টগুলি আছে সেই পোষ্টগুলিতে ল্যাম্প আছে বলেই তাদের ল্যাম্পপোষ্ট বলা হচ্ছে। আর সেই ল্যাম্পগুলি পোষ্টের চারপাশে জ্বলছে বলেই পোষ্ট অর্থাৎ সিংহাসন আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। প্রথমে দেখতে হবে সেই ল্যাম্পগুলি জ্বলছে কিনা। যদি টিমটিম করে জ্বলে কিম্বা একেবারেই না জ্বলে, শুধুমাত্র শোভাবর্ধন করে তাহ’লে সেগুলির ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত 'পোষ্ট'কেই নিতে হবে। দ্রুত নিতে হবে। আরও বড় ক্ষতি, আরও বেশী অন্ধকার হওয়ার আগেই সঠিক নিখুঁত ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অতি দ্রুত নিতে হবে। আর যদি ল্যাম্পগুলি জ্বলে, চতুর্দিকে আলো ছড়িয়ে অন্ধকার দূর করে নিজের জোরালো উপস্থিতিকে জানান দেয় প্রতিমুহূর্তে তাহ’লে তাদের সম্পর্কে আজ 'পোষ্ট'কে অতিমাত্রায় সচেতন ও যত্নশীল হতে হবে কারণ যে মুহূর্তে ল্যাম্পগুলি ফিউজ হয়ে যাবে অমনি গোটা সাম্রাজ্যকে নিয়ে ঘোর অন্ধকারে ডুবে যাবে স্বয়ং পোষ্ট বা সিংহাসন একথা সবাইকেই মনে রাখতে হবে। এতে সকলেরই ক্ষতি, সকলেরই লোকসান। অনেকে মনে করতে পারে কিম্বা কান ভারী করবার জন্য মনে করাতে পারে যে একটা দুটো ল্যাম্প নিভে গেলে কিছু হবে না তাহ’লে তাদেরও বলে দিতে চাই একটা কথা, আজ যা অর্থাৎ ‘নিভে যাওয়া’ একটা দুটো দিয়ে শুরু কাল তা অতি দ্রুত অবধারিত নিশ্চিত সংখ্যাবৃদ্ধিতে ঘোর অন্ধকার ডেকে আনবে।
তাই দলের মধ্যে যারা ঢাক ঢোল পিটিয়ে প্রচার করে বেড়াচ্ছে ‘কেউ অপরিহার্য নয়’ কিম্বা ‘একটাই পোষ্ট বাকি সব ল্যাম্পপোষ্ট’ তাদের মাথায় রাখতে হবে ‘পোষ্টে’র মৃত্যুকে বাজী রেখে লড়াই, সংগ্রাম-এর দিনগুলি, মনে রাখতে হবে তাঁর ইজ্জৎ, মান-সম্মান আর এর সঙ্গে আরও একটা বহুল প্রচারিত প্রবাদ ‘ ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে’!!!!!!!!!!!!
No comments:
Post a Comment