এখন ‘বাঙালি’ তথা মানুষ হিসাবে ভাবি কোনটা ভালো ছিল? অখড দেশ ‘ভারত’ না-কি বর্তমান তিন টুকরো দেশ ‘ভারত’ ‘পাকিস্তান’ ‘বাংলাদেশ’!? যখন অখন্ড ভারত ছিল তখন কেমন ছিল অতীতের বাঙালি? অতীতের বাঙালি কি হিন্দু বাঙালি, মুসলিম বাঙালি, খ্রিস্টান বাঙালি ইত্যাদি ইত্যাদি বাঙালি ছিল নাকি শুধুই ‘বাঙালি’ ছিল? লেখাটা লিখতে লিখতে বাংলাদেশের একটা জনপ্রিয় গান মনে পড়ে গেল।
“গ্রামের নওজোয়ান
হিন্দু মুসলমান
মিলিয়া বাউলা গান আর ভাটি গান গাইতাম
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম......”
তা’ কবে থেকে এই অবস্থার পরিবর্তন হ’ল? কেন হ’ল? আর কাদের স্বার্থে বা কাদের দোষে এই পরিবর্তন হ’ল? আর পরিবর্তন হ’লই যখন তখন আজ ভারত ভাগের ৭০বছর পরও বা বাংলাদেশ জন্মের প্রায় ৪০ বছর পরও কেনও পরিবর্তনের পরিবর্তন হ’লো না? কেনও অখন্ড ভারতের বাঙালির যে বাঙালি সত্ত্বা ছিল সেই সত্ত্বার জাগরণ হ’ল না আজকের স্বাধীন বাংলাদেশের বাঙালির? কেন বাঙালি নাগরিকের হাতে বাঙালি নাগরিকের নিধন বাঙালির বাংলাদেশে? কেনও বাঙালির নেতৃত্বে এগিয়ে চলা বাঙালির বাংলাদেশে বাঙালির হাতে বাঙালির উৎখাত? কেন বিশ্বে বাঙালির দেশ ব’লে পরিচিত ‘বাংলাদেশ’-এ একজন ‘এক’ও (বাঙালি) লৌহমানব বা মানবী হ’য়ে এগিয়ে এলো না ‘ছোটবেলায় মায়ের মুখে শোনা ‘একে ভালো করে সবে সুখ পায়’ কথাটার বাস্তব রুপ দিতে? তবে কি দেশটা বাঙালির নয়? তবে দেশটা কার? সংখ্যাগুরু মুসলমান সম্প্রদায়ের? মুসলমানরাই কি একমাত্র বাঙালি? বাংলাদেশের হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ইত্যাদি অন্য সম্প্রদায়ের মানুষেরা কি বাঙালি নয়? বাঙালি হয়েও যেহেতু মুসলমান নয় তাই বাঙালি নয় বা বাংলাদেশের নাগরিক নয়? তাহ’লে ‘বাঙালি’, ‘বাঙালি’ ব’লে বাংলাদেশের সুধী সমাজের এত বুক ফাটো ফাটো ক’রে চিৎকার কেন? পৃথিবীতে বাঙালি জাতির নিজেদের একটা দেশ ‘বাংলাদেশ’ আছে ব’লে এত গর্ব কেন? কেনও কারও কারও বাংলা ভাষাভাষীর আরও অন্যান্য বৃহৎ অংশ নিয়ে ‘অখন্ড বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন দেখা? যারা এইটুকু বাংলার বাঙালি সত্ত্বাকে বাঁচিয়ে রাখতে পারে না, যারা স্বাধীন বাংলাদেশের বাঙালিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে পারে না তারা বৃহত্তর বাংলার স্বপ্ন দেখে কি করে? আবার এই স্বপ্ন দেখার ফলে অদূর ভবিষ্যতে ‘দুনিয়ার বাঙালি এক হও’ এই স্লোগান, এই আন্দোলন ওঠার ভয় কারও কারও নেই তো? তাই আগেভাগে আজকের কোনও দূরদর্শী আউরঙ্গজেব ব্রিটিশের ঘৃণ্য বিষাক্ত পচা দুর্গন্ধময় ‘ভাগ করো, শাসন করো’ বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে ভবিষ্যতের ঐ সম্ভাবনার কাঁটাকে উপড়ে ফেলার চক্রান্তে মগ্ন নয় তো? যাতে বৃহত্তর বাংলার ‘ভবিষ্যত’ নিশ্চিহ্ন হ’য়ে গিয়ে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। গোকুলে বেড়ে ওঠা দূরের কথা, জন্মের আগেই ভ্রূণে খতমও দূরের কথা একেবারে বন্ধ্যা জমি ক’রে দেওয়ার পরিকল্পনা নয় তো যাতে কোনও সম্ভাবনাই আগামিতে না থাকে? ব্যাপারটা এমন যে ‘না থাকবে বাঁশ, না বাজবে বাঁশুরি’।
ক্রমশঃ
No comments:
Post a Comment