ফেসবুকে ‘ইসলাম বিরোধী’ পোস্ট করার অপরাধে বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবেড়িয়ায় হিন্দুদের ওপর অত্যাচার, ঘর বাড়ি, মন্দির,
মূর্তি ইত্যাদি ভাঙচুর ও শতাধিক বাড়িতে লুটপাট চালালো একদল দুষ্কৃতী। কে বা কারা এই দুষ্কৃতী যারা এই ১৫টি মন্দির ভাঙলো, ভেঙে গুড়িয়ে দিল হিন্দু দেবতাদের মূর্তি, লুটপাট চালালো শতাধিক হিন্দু বাড়িতে আর কেই বা এই নরাধম যার বিকৃত মানসিকতার ফসল স্বরুপ ফেসবুকে ঘৃণ্য পোস্টের পরিণতিতে এতবড় গুনাগার দিতে হ’ল হিন্দু সম্প্রদায়ের এতগুলো মানুষকে? ছোটবেলায় মায়ের মুখে প্রায়ই শুনতাম ‘একে নষ্ট করে সবে দুঃখ পায়’ আবার ‘একে ভালো করে সবে সুখ পায়’। ছোটবেলা থেকে এই কথা শুনতে শুনতে বড় হয়েছি। কে এই ‘এক’ যার নষ্টামির কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ের এতগুলো মানুষ চরম দুঃখ পেল? কে এই ‘এক’ যে এই পোস্ট করলো? সে কি হিন্দু? না-কি হ্যাকিং পোস্ট? কে হ্যাক করলো? কেন এই পোস্ট? কি উদ্দেশ্য ছিল এই পোস্টের পিছনে? নিছক মজা? অতি উৎসাহ? উস্কানি ও প্ররোচনার শিকার? না-কি সবটাই উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও পূর্বপরিকল্পিত? কি এই উদ্দেশ্য?
যাই হ’ক,
মজা, উৎসাহ, উস্কানি,
প্ররোচনা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা পূর্বপরিকল্পিত যাই হ’ক না কেন ব্যাপারটা সেই সাম্রাজ্য বিস্তারে ব্রিটিশদের তৈরি করা বিষাক্ত সাম্প্রদায়িক ঘা-এর ট্রাডিশান ‘হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক সংঘাত। কিন্তু আমার মনে যে প্রশ্নটা ঝড় তোলে তাহ’ল বাংলাদেশে প্রায়ই যে সাম্প্রদায়িক সংঘাত হ’য়ে চলেছে স্বাধীনতার পর থেকে সেই সংঘাতকে কি বলবো? হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক সংঘাত? সংখ্যাগুরু ও সংখ্যালঘু সংঘাত? না-কি বাঙালির বিরুদ্ধে বাঙালির লড়াই, সংঘাত?
না-কি বাঙালি জাতির আভ্যন্তরীণ সংঘাত সৃষ্টিতে বর্হিরশক্তির চক্রান্ত? মিডিয়া কি বলছে? রাজনৈতিক নেতানেত্রীরা কি বলছেন? ধর্ম্ম গুরুরা কি বলছেন? বুদ্ধিজীবীরা কি বলছেন? ধনী গরীব, পন্ডিত লেন্ডিত থেকে শুরু ক’রে আম জনতা কি বলছেন? সবাই যে যাই বলুক সবার বলা এক জায়গায় এসে মিশে যাচ্ছে তা হ’ল এই আক্রমণ, এই সংঘাত হিন্দুর প্রতি মুসলমানের আক্রমণ, সংখ্যালঘুর প্রতি সংখ্যাগুরুর সংঘাত। এই কথা কতটা সত্য, কতটা গ্রহণযোগ্য তা বিবেচনাধীন। কিন্তু যেটা সত্য তা হ’ল আজ বাংলাদেশে হিন্দুর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ২০১১ সালের আদমশুমারির তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে হিন্দু জনগোষ্ঠি ৮.৫ শতাংশ। (বর্তমানে কম-বেশী হ'তে পারে)। এইভাবে চলতে থাকলে আর প্রশাসনিক আন্তরিক সহযোগিতা না থাকলে আর কিছুদিন পরে নিশ্চিতভাবেই ০% হ’য়ে যাবে ভারত ভাগের পরবর্তী হিন্দুর ক্রমহ্রাসমান হিসাব তাই বলছে। শুধু হিন্দুর সংখ্যা যে শূন্যতে এসে দাঁড়াবে তা নয় বাকি আরও সব খ্রিস্টান বৌদ্ধ ইত্যাদি যে সব সম্প্রদায়ের লোক আছে তারাও আর থাকবে না অদূর ভবিষ্যতে অতীতের অখন্ড ভারতের স্বার্থান্বেষীদের সহযোগিতায় পৃথিবীর সভ্য (?) জাত ব’লে পরিচিত ক্ষমতালোভী ব্রিটিশদের তৈরি একটা অদভুত ভৌগলিক রসায়নের ত্রিশংখু দেশ পাকিস্তানের (পৃথিবীর প্রথম আশ্চর্য ছিল সেই সময়ের দেশ পাকিস্তান) পূর্ব অংশ পূর্ব পাকিস্তান তথা বর্তমান স্বাধীন ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ (?) বাংলাদেশে। তখন শুধু দেশটা দাঁড়াবে মুসলমানদের বাংলাদেশ।
ক্রমশঃ
No comments:
Post a Comment