Powered By Blogger

Sunday, August 24, 2025

শ্রীশ্রীঅবিনদাদা উবাচ ( পর্ব ৩ )



বাংলাকে শক্তিশালী হতে হবে।----শ্রীশ্রীঅবিনদাদা।

গত ২৫শে জুন'২০২৫ বৃহস্পতিবার পূজনীয় শ্রীশ্রীঅবিনদাদা কলকাতা অমরধামে অবস্থানকালে উপস্থিত কর্মীদের সঙ্গে সান্ধ্যকালীন আলাপ আলোচনার সময় কথাপ্রসঙ্গে বলছিলেন,
"বাংলা অনেক পিছিয়ে গেছে। প্রায় এক দশক পিছিয়ে গেছে। বাংলার মানুষের মেরুদন্ড‌ও আগের মত নেই। অথচ আগে আপনারাই সবথেকে বেশি শক্তিশালী ছিলেন। আবার বাংলাকে শক্তিশালী হতে হবে।"
শ্রীশ্রীঅবিনদাদা বাংলার পরিস্থিতি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন সৎসঙ্গীদের উদ্দেশ্যে। তিনি বাংলা ও বাঙ্গালীর পিছিয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন, মেরুদন্ডহীনতার কথা বলেছেন, বলেছেন শক্তিহীন হওয়ার কথা। তিনি স্পষ্টভাষায় রাখঢাক না করেই বলেছেন,
"বাংলা ও বাঙালি আগে শক্তিশালী ছিল এখন আর নেই। বাংলা ও বাঙালিকে শক্তিশালী হ'তে হবে।"

মন্ত্রমুগ্ধের মত গভীর আগ্রহে তাঁর কথাগুলি সন্ধ্যে থেকে রাত পর্যন্ত শুনছিল সেদিন উপস্থিত সৎসঙ্গী যুবসম্প্রদায়, শুনছিল প্রৌঢ় ও বৃদ্ধ সৎসঙ্গী নরনারী। আর চোখের সামনে সেদিন দেখতে পাচ্ছিল, অনুভব করতে পাচ্ছিল, উপলব্ধ হয়েছিল বর্তমান বাংলার করুণ দৈন্যদশা।
একজন ২৫বছর বয়সের যুবক বাংলার মেরুদন্ডহীনতার কথা বলছেন, বলছেন বাংলার অতীত গৌরবের কথা, শক্তিশালী অতীত বাংলা ও বাঙালির কথা। কিন্তু আমরা বর্তমান বাংলায় কি দেখতে পাই? বাংলার সমাজজীবনে, রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে, প্রতিষ্ঠিত 
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কর্মপ্রতিষ্ঠান ইত্যাদি সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলির মধ্যে বাঙালির অবস্থান আজ কোথায়? ২৫বছর বয়সের যুবকের চোখে যা ধরা পড়ে তা' বাংলার সমস্ত শিক্ষা ক্ষেত্র, স্বাস্থ্যক্ষেত্র, শিল্প, কৃষি, ক্রীড়া, রাজনীতি, ধর্ম ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত যুব সম্প্রদায়ের এমনকি সৎসঙ্গী যুব সম্প্রদায়ের তাজা চোখে ধরা পড়ে? ধরা পড়ে পাকা চুলের অধিকারী প্রৌঢ় ও বার্ধক্যের ঝাপসা চোখের সৎসঙ্গীদের ও পশ্চিমবংগবাসীর? পড়ে না। পড়লেও 'আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' মানসিকতা আমাদের।

আমরা আজও সাহিত্য জগতে রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সৈয়দ মুজতবা আলী, সৈয়দ মুজতবা সিরাজ, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র, বিদ্যাসাগর, মধুসূদন, রামমোহন, আশুতোষ মুখোপাধ্যায় ইত্যাদি, বিজ্ঞান জগতে আচার্য জগদীশ চন্দ্র বোস, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, প্রশান্ত মহলানবিশ, আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায় ইত্যাদি, বাংলা তথা ভারতের ফুটবলের জনক নগেন্দ্র প্রসাদ সর্বাধিকারী, গোষ্ঠ পাল, শিবদাস ভাদুড়ী, চুনী গোস্বামী ইত্যাদি, রাজনীতির জগতে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ইত্যাদি, ধর্মজগতে নিত্যানন্দ, বিবেকানন্দ, শ্রীঅরবিন্দ, মা আনন্দময়ী ইত্যাদি এঁদের নাম মনে ক'রে স্মৃতিচারণ করি। আমরা ভুলে গেছি এই বাংলার পবিত্র মাটিতে জন্মেছিলেন এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্তা পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু, পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণ। এঁদের কথা ভাবতে ভাবতে অতীত গৌরবের জাবর কাটি আমরা বাঙালি। আসলে ব্যাপারটা হচ্ছে অনেকটা সেই কবে কোন জন্মে খাঁটি গাওয়া ঘি দিয়ে গরম ভাত খেয়েছি আর আজও তার ঢেঁকুর তুলে যাচ্ছি কৃত্রিম ঘিয়ের গন্ধে রঙে ভরপুর নকল ডালডা তেলের তৈরি ভেজাল ঘি দিয়ে ভাত খেতে খেতে। আজ আর কোনও ক্ষেত্রে নক্ষত্রদের নাম ভেসে আসে না। অর্থাৎ বাংলার বুকে বাংলার মাটিতে আর উন্নত উত্তম সোলের আবির্ভাব হয় না। আর, মনে হচ্ছিল সেই কথায় স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছিলেন পূজনীয় শ্রীশ্রীঅবিনদাদা সেদিনের সন্ধ্যায় উপস্থিত বাংলা ও বাঙালি যুবকযুবতীদের সামনে।

একজন অল্পবয়সী যুবক সেদিন সাম্যবাদের প্রবক্তাদের কথানুযায়ী ধর্মের আফিম যেন পরিবেশন করছিল উপস্থিত পড়াশুনাজানা উচ্চশিক্ষিত আধুনিক যুবকযুবতীদের মধ্যে। মনে হচ্ছিল যেন পরিবেশন করছিল বাংলার অতীত ইতিহাস, অতীত ঐতিহ্য, অতীত গৌরব, বাংলার অতীত আর্য কৃষ্টি, আর্য সংস্কৃতি ইত্যাদির আফিম তাঁর কথার মধ্যে দিয়ে। বাংলার অতীত উজ্জ্বল নক্ষত্রসম দেবসন্তানদের কথা যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিল তাঁর কথার মধ্যে দিয়ে, মনে করিয়ে দিচ্ছিল যেন আফিম সেবনরত উপস্থিত যুবকযুবতীদের বাংলার শিক্ষা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, শিল্প ইত্যাদি সমস্ত দিকের গৌরবোজ্জ্বল অতীতের।

যখন বাংলার হিন্দু ইয়ং জেনারেশন ধর্ম মানে না, ঈশ্বর, ভগবানের অস্তিত্ব, উপস্থিতি বিশ্বাস করে না, ঘোর নাস্তিক, যখন ইয়ং জেনারেশন ঈশ্বরকে নিয়ে ঈশ্বরের মূর্তি বা ভাস্কর্যে বা কবিতায় নিরোধ পড়িয়ে হাস্য উপহাস করে, যখন ইয়ং জেনারেশান নেশাভাং করে আর মা কালীর আরাধনায় মগ্ন থাকে, মায়ের পূজার নামে ছোট্ট ছাগ শিশুকে বলি দেওয়ার জন্য যখন বলির লাইনে দাঁড়ায় সান্ধ্য মজলিসে কচি পাঁঠার মাংস দিয়ে সুরা পান করবে বলে, যখন আধুনিক পোশাকে সজ্জিত উচ্চ লেখাপড়াজানা ইয়ং জেনারেশান আংটি, তাবিজ, মাদুলি, লালসুতো, জ্যোতিষ নির্ভর জীবনে বিশ্বাসী ও প্রচন্ড নির্ভরশীল, যখন সাধারণ মানুষ, ধনী, দরিদ্র, মূর্খ, পন্ডিত সবাই আকাশের ভগবান, বোবা ভগবান, মূর্তির ভগবানের ওপর বিশ্বাসী ও অলৌকিকতার ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল ঠিক তখনই ভারতবর্ষের বিভিন্ন প্রান্তের হাজার হাজার যুবকযুবতী এক অল্পবয়সী সুদর্শন সৌম্যকান্তি দিব্যকান্তি অপূর্ব রূপময় যুবকের মিষ্টি মধুর হাসি, মায়াময় মধুময় আলোময় চোখের চাউনি, রসময় আনন্দময় কথার আকর্ষণে ছুটে ছুটে আসে বিভিন্ন প্রান্ত থেকে যখন যেখানে তিনি অবস্থান করেন সেখানেই, ঠিক যেমন ফুলের সুমিষ্ঠ গন্ধের সৌরভে ছুটে ছুটে আসে মৌমাছি মধু অন্বেষণে! মৌমাছি যেমন ফুলের মধু সংগ্রহ ক'রে ক'রে মৌচাকে জমা ক'রে রাখে ঠিক তেমনি শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সব বয়সের সৎসঙ্গী নারীপুরুষ বিশেষত সৎসঙ্গী যুবসম্প্রদায় উন্মত্তপ্রায় ছুটে ছুটে আসে শ্রীশ্রীঅবিনদাদার অমোঘ ভালোবাসার তীব্র টানে, প্রাণবন্ত আলোময়, রসময়, প্রেমময় সুমিষ্ঠ কথার ঝরণা ধারায় সিক্ত হ'তে, আসে জীবনীয় মধুময় কথার মধু সংগ্রহ ক'রতে। আর শ্রীশ্রীঅবিনদাদার সেই মধুময় অমৃতময় কথা সংগ্রহ ক'রে নিয়ে একগাট্টা বাঁধে তারা। শ্রীশ্রীঅবিনদাদার রক্তে ব'য়ে চলেছে খাঁটি আর্য রক্ত। শ্রীশ্রীঅবিনদাদার নেতৃত্বে বাংলার সৎসঙ্গী যুবসম্প্রদায় একগাট্টা বাঁধলে বাংলা ও বাঙালি আবার জেগে উঠবে। সেদিনও এসেছিল এবং যতদিন তিনি অমরধামে অবস্থান করেছেন ও আজও এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবস্থান করেছেন প্রতিদিনই ছুটে ছুটে এসেছে অগণিত যুবকযুবতী। ছুটেছুটে আসছে প্রতিদিন হাজার হাজার নরনারী, প্রৌঢ় প্রৌঢ়া, বৃদ্ধ বৃদ্ধা তাঁর অমোঘ ভালোবাসার টানে, প্রেমের টানে।
শ্রীশ্রীঅবিনদাদার বাংলা ও বাঙালি সম্পর্কে বলা বিষয়ে এই লেখা লিখতে লিখতে মনে পড়ে গেল বাংলা ও বাঙালি সম্পর্কে শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছিলেন,

"আমাদের দীপঙ্কর---- এই তো বজ্রযোগিনী বাড়ি, বাঙ্গাল, যাজনের সাহায্যে তিনি কি ক'রে ফেললেন। বাঙালী জাতির মধ্যে খাঁটি Aryans ( আর্য ) আছে। অন্যদিকে যখন অত্যাচার শুরু হয়েছিল তখন এঁদের অনেকে এদিকে এসে পড়েছিল। এদের রক্ত, এদের জান যে সে ব্যাপার নয়। আমরা তো জানিই না আমাদের নিজেদের কি ছিল----কেষ্টদা যে সব তথ্য যোগার করেছেন তা' শুনলে তো অবাক হ'তে হয়। এক গাট্টা হ'য়ে উঠলে এ জাতের সাথে পারা মুশকিল।"
"Bengal ( বাংলা) যদি একটা Unit হ'য়ে দাঁড়ায়, (বাংলা) যদি ঠিক হয়, তখন সহজেই আর সব হ'য়ে যাবে। ভারত এক লহমাতেই জগতের গুরু হ'তে পারে।" "দেখেন, বাঙ্গালীর মতো এমন জান আপনি আর পাবেন না।"

আজ থেকে প্রায়ই ৮৫বছর আগে বলা যুগপুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্রের বাংলা ও বাঙালি সম্পর্কে বলা ঠিক এই একই কথার প্রতিধ্বনি আমরা শুনতে পাই তাঁরই ৫ম পুরুষ শ্রীশ্রীঅবিনদাদার শ্রীমুখে। কি অদ্ভুত! বাংলা ও বাঙালি সম্পর্কে সেই অমৃত ঝরণা ধারার Tradition ব'য়ে চলেছে আজও এই অস্থির অশান্ত রুক্ষ্ম অসুন্দর বাংলায় বসে ধীর স্থির শান্ত সৌম্য এক ২৫বছরের যুবকের মুখে।
সেদিনও শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র ১৯৪০ সালে আজ থেকে ৮৫বছর আগে সেদিনের পূর্ববাংলা আজকের বাংলাদেশে পাবনার হিমাইয়েতপুরে বাঁধের ধারে তাঁর খড়ের ঘরের বারান্দায় চৌকিতে বসে কখনও প্রাতে কখনও বা সন্ধ্যায় মাঝে মাঝেই উপস্থিত ভক্তমণ্ডলী ও বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত ব্যক্তিদের সামনে বাংলা ও বাঙ্গালীদের নিয়ে তিনি আশার কত কথা ব্যক্ত করতেন। আর আজ সেই ৮৫বছর পর পশ্চিমবাংলার কলকাতার শোভাবাজারে অমরধামে বসে আমরা সেই আশা আকাংকার প্রতিধ্বনি শুনতে পাই তাঁরই উত্তরপুরুষ (৫ম পুরুষ) ২৫বছরের এক যুবক, লক্ষ লক্ষ যুব সম্প্রদায়ের হার্টথ্রব পূজনীয় শ্রীশ্রীঅবিনদাদার মুখে।
বাংলা ও বাঙালি সম্পর্কে তাঁর সেই অমৃতময় কথা আবার স্মরণ ক'রে এই প্রবন্ধের আমি ইতি টানবো।
শ্রীশ্রীঅবিনদাদা বললেন, "বাংলা অনেক পিছিয়ে গেছে। প্রায় এক দশক পিছিয়ে গেছে। বাংলার মানুষের মেরুদন্ড‌ও আগের মত নেই। অথচ আগে আপনারাই সবথেকে বেশি শক্তিশালী ছিলেন। আবার বাংলাকে শক্তিশালী হতে হবে।"

আজ আমাদের বাংলা ও বাঙ্গালী সৎসঙ্গীদের সময় এসেছে ঘুরে দাঁড়াবার, সিরিয়াস সৎসঙ্গী হওয়ার। শ্রীশ্রীঠাকুর আচার্য পরম্পরার মধ্যে দিয়ে রেত শরীরে অবস্থান ক'রে আমাদের বারবার স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন বাংলা ও বাঙালি সম্পর্কে তাঁর আশার কথা। বাংলা কি এখনও জেগে উঠবে না? বাংলার ও বাঙালি সৎসঙ্গীরা কি এখনও ঘুমিয়ে থাকবো?

এই কথার পরিপ্রেক্ষিতে আমার মনে হয়, ভারতবর্ষের ঐ বাংলায়ও শ্রীশ্রীঠাকুর থাকতে পারলেন না, স্বাস্থ্য উদ্ধারে এসে আর ফিরে যেতে পারলেন না তাঁর জন্মভূমি, তাঁর পিতৃভূমি, তাঁর মাতৃভূমি, তাঁর সাধের শৈশব, কৈশোর, যৌবন ও বার্ধ্যকের পবিত্র লীলাভূমি ও কর্মভূমি ঐ পূর্ববাংলা তথা বর্তমান বাংলাদেশে। দেশ ভাগ হবার ৭৮বছর ও বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার ৫৫বছর পরেও আজও তাঁর সাধের জন্মস্থান, তাঁর সাধের আশ্রম, তাঁর প্রতিষ্ঠিত 'সৎসঙ্গ'-এর সম্পত্তি ফিরে পেলেন না।

আর, স্বাস্থ্য উদ্ধারে এসে থাকতে পারলেন না ভারতের এই পশ্চিমবাংলায়ও, চলে গেলেন লাল মাটির দেশ তৎকালীন বিহার বর্তমানের ঝাড়খন্ড রাজ্যের সাঁওতাল পরগণার দেওঘরে। আমরা বাঙ্গালীরা কেউই ভেবে দেখিনি তাঁর অন্তরের গভীরে ঘুমিয়ে থাকা এই তীব্র অসহনীয় ব্যথা, এই যন্ত্রণা। কত অব্যক্ত ব্যথা, বুকে গভীরে চাপা কত যন্ত্রণা নিয়ে কত মানুষ এই পৃথিবী ত্যাগ ক'রে চলে যায়, ঠিক তেমনি ঈশ্বর স্বয়ং মানুষ রূপে সীমার মাঝে এসে এমন অসহনীয় লক্ষ কোটি ব্যথা, যন্ত্রণা নিয়ে অশ্রু সজল চোখে চলে গেছিলেন শ্রীশ্রীঠাকুর।

একবার শ্রীশ্রীঠাকুর দুঃখ ক'রে বলেছিলেন, "আমার সৎসঙ্গের আন্দোলন বাংলার বাইরে থেকে হবে, বাংলা থেকে হবে না।"
The greatest phenomenon of the world, The greatest wonder in the world যুগপুরুষোত্তম রক্তমাংসসংকুল আমান ঈশ্বর পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র কথাটা কি দুঃখ ক'রে, অভিমান ভরে বলেছিলেন? আর তাই কি সত্য হ'লো না?

আর, সেই একই কথার প্রতিধ্বনি হ'লো একটু অন্যরকমভাবে অন্য কথায়? একটা প্রবাদ আছে, সমঝদারকে লিয়ে ইশারা কাফি হোতা হ্যাঁয়। এই কথা কি সৎসঙ্গীদের ক্ষেত্রে খাটে না, প্রযোজ্য নয়??? আমরা শ্রীশ্রীঠাকুরের সব সময় বলা সোনার সৎসঙ্গীরা, আমরা কি এখনও ঘুম ভেঙে জেগে উঠবো? বাংলার বাইরে সৎসঙ্গের যে ঝড় উঠেছে আমরাও কি অকপটভাবে সেই ঝড়ের সাথী হবো না? ঝড়ে শামিল হবো না? আসুন ভেবে দেখি একটিবার।
( লেখা ৫ই আগষ্ট'২০২৫)


প্রবন্ধঃ শ্রীশ্রীঅবিবদাদা উবাচ ( পর্ব ২ )

কে এই দিব্যকান্তি রহস্যময় পুরুষ!?

গত ২৫শে জুন'২০২৫ বৃহস্পতিবার পূজনীয় শ্রীশ্রীঅবিনদাদা কলকাতা অমরধামে অবস্থানকালে কর্মীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার সময় সারা মুখে মিষ্টি হাসির ফুলঝুরি ছিটিয়ে শান্ত স্নিগ্ধ স্বরে কথাপ্রসঙ্গে বলছিলেন,
"এই অমরধামে শুধু কি একটা রাস্তা দিয়েই আসা যায়? কেউ সেন্ট্রাল এভিনিউ দিয়ে আসে, কেউ আসে আহিরিটোলা দিয়ে, কেউ অন্য কোন দিক দিয়ে। কিন্তু সবাই শেষ পর্যন্ত আসছে এই অমরধামে। মত নানা থাকতে পারে কিন্তু সব মত যেন একটা পয়েন্টে এসে মিলে যায়। সব মত যখন এক জায়গায় এসে মিলে যায় সেটাই ধর্ম। অন্যের কথা শুনুন। সবার মতামতকে শ্রদ্ধা করুন। কোন একটাই নিয়ম বলে কিছু হয়না। ঠাকুরকে ভালবাসুন। ঠাকুরকে ভালবেসে যা করনীয় মনে হবে করুন।"

শ্রীশ্রীঅবিনদাদা যখন কথাগুলি বলছিলেন তখন কথাগুলি কাদের বলছিলেন? সেইসময় যারা ছিলেন সেখানে সেই প্রত্যক্ষদর্শীরাই বলতে পারবেন এবং যিনি বা যারা কথাগুলি লিপিবদ্ধ করেছিলেন তারাই বলতে পারবেন একজন ২৫বছরের সদাহাস্যময় মিষ্টি অপূর্ব আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বপূর্ণ যুবক কাদের বলছিলেন কথাগুলি। কথাগুলি যে সৎসঙ্গীদেরই বলছিলেন সেটা Understood. কিন্তু মাত্র ২৫বছরের যুবক কথাগুলি যাদের উদ্দেশ্যে বলছিলেন তাদের বয়স কত সেটা প্রত্যক্ষদর্শীরাই বলতে পারবেন। সেখানে কি শুধু দাদারাই ছিলেন নাকি মায়েরাও ছিলেন?

যাই হ'ক, শ্রীশ্রীঅবিনদাদা যাদের উদ্দেশ্যে কথাগুলি বলছিলেন তাঁরা যদিও বর্তমান যুবসমাজ, যুবসমাজের উজ্জ্বল উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। কিন্তু আজকের সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় জটিল অন্ধকার পরিবেশ ও পরিস্থিতি মাঝে আধ্যাত্মিক জগতের এক অল্পবয়সী যুবকের অমোঘ টানে ভারতবর্ষের সমস্ত রাজ্যের যৌবনের আত্মসমর্পণ মনে পড়িয়ে সেক্সপিয়ারের সেই হ্যামলেট নাটকের সংলাপঃ "There are more things in heaven and earth, Horatio, than are dreamt of in your philosophy." "যার অর্থ, স্বর্গ ও পৃথিবীর মাঝখানে আরও বহু জিনিস আছে, হোরাশিও, যা তোমার দর্শনের পাল্লার বাইরে ও স্বপ্নের অতীত।"

এটি শ্রীশ্রীঠাকুরের প্রিয় কোটেশানগুলির মধ্যে অন্যতম। শ্রীশ্রীঠাকুর উপস্থিত জ্ঞানী জিজ্ঞাসু ব্যক্তিদের সঙ্গে সৃষ্টিতত্ত্বের আলোচনা চলাকালীন মাঝে মাঝে গভীর অতীন্দ্রিয় মহাজাগতিক ঘটনা বর্ণনা প্রসঙ্গে শেক্সপিয়ারের এই কথাটি আউড়াতেন।

এককথায় শৈশব, কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ় ও বার্ধক্য সব বয়সের সৎসঙ্গীরা জড়ো হয়েছিলেন সেদিনের সেই আনন্দমেলায় অমরধামে ২৫ বছরের এক যুবকের অলৌকিক অমোঘ টানে! যেমনটা দেখা যায় দেওঘর ঠাকুরবাড়িতে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কত হাজার হাজার মানুষ যে আসে তাঁকে একটু শুধু দু'চোখ ভরে দেখার জন্য তা' অভূতপূর্ব! সে দৃশ্য যারা দেখেছে তারা জানে। আর কত সমস্যা জর্জরিত মানুষ তাঁর সান্নিধ্যে থেকে, তাঁর সঙ্গে কথা ব'লে তৃপ্তি নিয়ে ফিরে যায় প্রতিদিনের সাংসারিক জীবনে তা' ভাষায় বর্ণনা অসম্ভব। এই তৃপ্তি বোঝে সে, প্রাণ বোঝে যার!

তিনি সেদিন উপরোক্ত কথায় যা' বলতে চেয়েছিলেন তার সার কথা সব মতের অর্থাৎ হিন্দু মত, মুসলমান মত, খ্রীষ্টান মত, বৌদ্ধ মত শিখ মত ইত্যাদি বিশ্বজুড়ে প্রায় ৪,৩০০টি ধর্ম নয়, যে ৪৩০০টি ঈশ্বর আরাধনার মত প্রচলিত আছে সেই বিভিন্ন মতানুসরণের ভিত্তিতে অস্তিত্বকে রক্ষা করে, স্বপারিপার্শ্বিক বাঁচা ও বেড়ে ওঠার পথে মানুষ এগিয়ে চলে তাই ধর্ম এবং যেখানে এসে মিলিত হয় সেটাই অর্থাৎ বেঁচে থাকার ও বেড়ে ওঠার জায়গায় মিলিত হয় সমবেত ভাবে সেটাই ধর্মক্ষেত্র। সবাই, সব মতই পারিপার্শ্বিক সহ নিজের বাঁচা ও বাড়ার কথায় বলে। যেখানে যে মতে অস্তিত্ব রক্ষার কথা নেই, পারিপার্শ্বিকের সবাইকে নিয়ে বাঁচার কথা নেই, বেড়ে ওঠার কথা নেই সেখানে ধর্ম নেই।

শ্রীশ্রীঅবিনদাদার কথায় এটা স্পষ্ট হ'য়ে ওঠে আজকের যুবসমাজের কাছে যে, ঈশ্বর আরাধনার কোনও মতবাদে অন্য মতবাদের প্রতি কোনও ঘৃণা, বিদ্ধেষ নেই। পুরুষোত্তমদের কারও কথার সঙ্গে কারও কথার কোনও বিরোধ নেই। যে মতবাদে অন্য মতবাদের মানুষের প্রতি হিংসার কথা আছে, মারামারি, কাটাকাটি, খুনোখুনির কথা আছে, আছে অন্যের ঈশ্বর আরাধনার মতকে অস্বীকার করা, ঘৃণা করা, নিন্দা, কুৎসা, গালাগালি করা, আছে ধর্মের অজুহাতে ঈশ্বরের দোহাই দিয়ে অন্য ধর্মের ঘরবাড়ি, ধর্মস্থান ভাঙচুর, লুটপাট ও মাতৃজাতীর প্রতি অবমাননা করার কথা, আছে ঈশ্বরের নামে বলি প্রথার মাধ্যমে হত্যাকে স্বীকৃতি, মৃত্যুকে আবাহন, আছে নিজের মতকে সর্বশ্রষ্ঠ হিসেবে বিবেচনা করা ও অন্যের মতকে ছোটো করা ও নীচা দেখানো সেখানে ঈশ্বর নেই, নেই কোনও বাঁচা ও বাড়ার কথা, নেই কোনও জীবনবাদ বা অস্তিত্ববাদের কথা, নেই কোনও কিছুকে বা কাউকে ধ'রে রাখার ব্যাপার অর্থাৎ এককথায় সেখানে ধর্ম নেই, সেটা ধর্ম নয়, সেটা জীবন্ত ঈশ্বর পুরুষোত্তমের মতবাদ নয়। সেটা মৃত্যু বা অবলুপ্তির মত, ধ্বংসের মত, নরকের পথ। সেটা শয়তানের মতবাদ, আবাসস্থল। সেটা অন্ধকারের জগত। সেখানে শয়তান কিলবিসের বাস, কংস, রাবণ, দুঃশাসন, দুর্যোধনদের বিচরণ ক্ষেত্র সেটা।
ঈশ্বরের জগত আলোর জগত, সুন্দর থেকে সুন্দরতর ও সুন্দরতম বাঁচার ও বেড়ে ওঠার জগত, পারিপার্শ্বিক সবাই মিলে বেঁচে থাকা ও বেড়ে ওঠার লওয়াজিমা অর্থাৎ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পাওয়ার জগত। শ্রীশ্রীঠাকুর বললেন, "বাঁচতে নরের যা যা লাগে, তাই-ই নিয়ে ধর্ম জাগে।" এখানে কোনও হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান ইত্যাদি ৪৩০০ মতের মানুষের বাঁচার জন্য ও বেড়ে ওঠার জন্য আলাদা আলাদা কিছুই নেই, যা যা লাগে অর্থাৎ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চেতনা ইত্যাদি ইত্যাদি সবার সব এক।

তাই হিন্দু, মুসলমান, খ্রীষ্টান, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ ইত্যাদি বিশ্বজুড়ে ৪৩০০টি ধর্ম পালনের মতের কথা শুনুন, মতকে জানুন, বুঝুন, শ্রদ্ধা করুন। আর বিশ্বব্রহ্মান্ডের সৃষ্টিকর্তা পুরুষোত্তম শ্রীশ্রীরাম, কৃষ্ণ, বুদ্ধ, যীশু, হজরত মহম্মদ, মহাপ্রভু, ঠাকুর রামকৃষ্ণ এদের মাথায় নিয়ে এঁদের নোতুন রূপ যুগপুরুষোত্তম শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলন্দ্রকে ভালোবাসুন, আর পারিপাশ্বিকের স্বার্থ নিজের স্বার্থ বিবেচনা ক'রে, পারিপার্শ্বিকের বাঁচা ও বাড়া নিজের বাঁচা ও বাড়া বিবেচনা ক'রে শ্রীশ্রীঠাকুরকে ভালোবেসে যেটা করার করুন।

এই কথা বলতে চেয়েছেন আজকের ভয়ংকর অস্থির উত্তপ্ত পৃথিবীতে উপস্থিত কৈশোর, যৌবন, প্রৌঢ়ত্ব ও বার্ধক্য সব বয়সের কথার স্রোতে ভাসা অস্থির, অসহিষ্ণু, অজ্ঞানী, অবিশ্বাসী, উদ্ধত, আত্মপ্রতিষ্ঠায় মগ্ন কপট সৎসঙ্গী নারীপুরুষ সবাইকে ২৫বছরের এক ধীর, স্থির, অচঞ্চল, শান্ত, স্নিগ্ধ, আলোময়, মধুময়, রুপময়, রসময়, জ্ঞানময় ও সদাহাস্যময় এক আশ্চর্য যুবক পূজনীয় শ্রীশ্রীঅবিনদাদা।

কে এই দিব্যকান্তি রহস্যময় পুরুষ!? ঝলমলে প্রশান্ত মুখে আলোর দীপ্তি, ঠোঁটে তাঁর মিষ্টি মধুর হাসি, গভীর রহস্যময় উজ্জ্বল স্বচ্ছ চোখ, জ্বলজ্বল করছে চোখের কালো তারা, সেখান দিয়ে বেরিয়ে আসছে দিব্য জ্যোতি, সর্বাঙ্গ দিয়ে ছিটকে বেড়িয়ে আসছে আলোর ধারা! মাত্র ২৫বছরের এই যুবকের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে ভাবি কে এই দিব্যকান্তি রহস্যময় পুরুষ!? দিব্যকান্তি সেই প্রেমিক পুরুষের শ্রীচরণে জানাই কোটি কোটি প্রণাম।
( লেখা ৩রা জুলাই'২০২৫)।


প্রবন্ধঃ শ্রীশ্রীঅবিনদাদা উবাচ ( পর্ব ১ )

ইহজন্ম ও পরজন্ম।

গত ২৫শে জুন'২০২৫ বৃহস্পতিবার পূজনীয় শ্রীশ্রীঅবিনদাদা কলকাতা অমরধামে অবস্থানকালে কর্মীদের সঙ্গে আলাপ আলোচনার সময় কথাপ্রসঙ্গে বলছিলেন,
"সব মন্দিরে কমিটি গঠন নিয়ে এত কথা, কেনো জানেন? আপনারা মন্দির গুলো নিজেদের জন্য, নিজেদের মতো চালাতেন , দয়ালের জন্য নয়। নিজের না ভেবে ওটা দয়ালের জায়গা ভাবুন, দেখবেন এই ঔদ্ধত্য ভরা বড় বড় পদ নিয়ে থাকা মানুষ গুলো ক্ষান্ত হবেন, না-হলে চলুন নিজের মত। নিজের জায়গায় হিরো হলেও দয়ালের কাছে ভিলেন হয়েই থাকবেন এবং পরজন্মে বাকিটা বুঝতে হবে।"
কথায় আছে, "চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী।"

আর শ্রীশ্রীঠাকুর বলেছেন, "আগে সাহসী হও , অকপট হও, তবে জানা যাবে ধর্মরাজ্যে ঢোকবার অধিকার জন্মেছে।"
অথচ যাদের ধর্মরাজ্যে ঢোকবার অধিকারই হয়নি তবুও তারা ধর্মরাজ্যে ঢুকে পড়েছে। আর তারাই আজ কেন্দ্র মন্দিরগুলোর হর্তাকর্তা।

পূজনীয় শ্রীশ্রীঅবিনদাদার উপরোক্ত এসব কথায় ভবি ভোলবার নয়। এরা নাছোড়বান্দা, এদের সহজে ভোলানো যায় না। কারণ এরা নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য নিয়েই প্রথম থেকে মন্দিরে পা রেখেছে, এদের বিষাক্ত নখ দাঁত লুকিয়ে রেখেই। এরা ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবে না, এদের কাছে বর্তমানটাই ভবিষ্যৎ। এদের কাছে পূজনীয় শ্রীশ্রীদাদার 'শেষের সেদিন ভয়ংকর' কথাটা বকোয়াস মাত্র। এদের কাছে 'কাল কে দেখেছে?' দর্শন মহামূল্যবান। অতএব বর্তমান এদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই এরা দ্রুত পরিকল্পনা ক'রে নেয় কি করতে হবে আর না-হবে। এরা গুছিয়ে বসতে একটু সময় নেয়, সময় নেয় মন্দিরের পুরোনো কর্মকর্তাদের তথাকথিত ভালোমানুষির সুযোগ নিয়ে তাদের লেজুড় বৃত্তি ক'রে। আর, দূর্বল ব্যক্তিত্বহীন কপট মনের অধিকারী পাঞ্জাধারীরাও এদের ঢাল বানিয়ে নিজের অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখতে চায় কেন্দ্রে, মন্দিরে।

আর শ্রীশ্রীঅবিনদাদার বলা ঠাকুরের কাছে ভিলেন হওয়া ব্যক্তিরা প্রথমে মন্দিরে এসে সময় নেয় এবং চুপ ক'রে বসে থেকে পরিস্থিতি অনুধাবন করে। পরে সময়মতো একটু গুছিয়ে বসেই এরা এদের বিষাক্ত নখ আর দাঁত বার করে আর ঐ সমস্ত দূর্বল ব্যক্তিত্বহীন কপট মনের অধিকারী পাঞ্জাধারীদের সহায়তায় এরা সৎ, ভদ্র, যোগ্য, দক্ষ, কর্মঠ, জ্ঞানী, সহজ সরল স্পষ্টবাদী প্রকৃত ইষ্টপ্রাণ ভালো ভালো কর্মী মানুষদের ধীরে ধীরে কৌশলে কোণঠাসা ক'রে দেয় এবং পরে মন্দির থেকে বদনাম রটিয়ে উচ্ছেদ করে। কখনওবা এরা এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করে এই সমস্ত সৎ, যোগ্য, দক্ষ, কর্মঠ, জ্ঞানী, শিক্ষিত, সহজ সরল স্পষ্টবাদী প্রকৃত ইষ্টপ্রাণ ভালো ভালো কর্মীরা মান সম্মানের ভয়ে নিজের থেকেই সরে যায়। আর এরা হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসা ইষ্টপ্রাণ কর্মীরা আস্তিনের তলায় খঞ্জর লুকিয়ে রেখে শয়তানী মিষ্টি হাসি মুখে মেখে সোর্সের মন জয় ক'রে সুপারিশের জোরে পাঞ্জার অধিকারী হ'য়ে যায় আর নেপোলিয়ানের মত এলাম, দেখলাম, জয় করলাম ঢঙ্গে এলাকায় বিচরণ করে আর প্রণাম, প্রণামী, প্রসাদ এই P3-এর অধিকারী হ'য়ে বসে সৎসঙ্গীদের মাঝে। ফলে এরা যখন D P Work-এর কাজে বেরোয় তখন D P Work-এর সাফল্য দূরে অনেক দূরে স'রে যায়।

এছাড়া আবার অনেক আছে তাদের বাপদাদার হাত ধ'রে মন্দিরে আসে আর উত্তরাধিকার সূত্রে মন্দির পরিচালনার দাবিদার হ'য়ে যায়। এরা কিন্তু সবাই যাজক বা SPR-এর পাঞ্জাও পেয়ে যায় কিছুদিনের মধ্যে অতি সহজেই কারও সুপারিশে। এরা যখন পাঞ্জা পায় বা আশীর্বাদী দণ্ড লাভ করে তখন তা' তাদের কাছে টেকেন ফর গ্রান্টেড হ'য়ে যায়। পাঞ্জা বা আশীর্বাদী দন্ডের ওজন ও গুরুত্ব এদের কাছে মূল্যহীন হ'য়ে পড়ে বোধের অভাবে। এদের কাছে পাঞ্জা ও আশীর্বাদী দণ্ড আয়ের লাইসেন্স ও কুকুর তাড়াবার লাঠির সমান হ'য়ে পড়ে। এই পাঞ্জা ও আশীর্বাদী দন্ডের জোরে এরা তখন প্রবীণ সৎসঙ্গী, সহজ সরল সাধারণ সৎসঙ্গীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে, ছল, চাতুরী, কপটতা করে, যোগ্য, দক্ষ ও শিক্ষিত সৎসঙ্গীদের ভালোমানুষীকে দুর্বলতা মনে ক'রে তাদের মন্দির থেকে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করে ও জোট বাঁধে এবং অবশেষে সরিয়ে দেয়। সরিয়ে দেয় প্রতিবাদহীন, আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা মানসিকতার দুর্বল ও ধান্দাবাজ সৎসঙ্গীদের সহযোগীতায়।

আবার ডি পি ওয়ার্কস কর্মসূচীর সময় একশ্রেণীর নারীপুরুষ সৎসঙ্গী কর্মী এমন ডি পি ওয়ার্কসে মেতে উঠলো যে তাদের ইষ্টপ্রাণতার গুঁতো ও কথার খোঁচায় যারা ছিল তারা অনেকে বেড়িয়ে গেল। কেন্দ্রে, মন্দিরে ও ফেসবুকে এরা নিজেদের পূজনীয় শ্রীশ্রীঅবিনদাদার সৈনিক হিসেবে জাহির ক'রে সৎসঙ্গীরা ডি পি ওয়ার্কস করছে কিনা তা' নিয়ে গোয়েন্দাগিরি ও দাদাগিরি করতে লাগলো। ফলে যারা ছিল তারাও অনেকে এদের অতিরিক্ত কপট ভক্তির ধাক্কায় বিরক্ত হ'য়ে সরে গেল।

এই ধরণের সৎসঙ্গীরা শ্রীশ্রীঅবিনদাদার উপরোক্ত কথায় অর্থাৎ পূজনীয় অবিনদাদার যে কথাগুলি প্রথমে তুলে ধরলাম সেই কথা মেনে নিজেদের ঔদ্ধত্বকে শাসন ক'রে ঔদ্ধত্বের লাগাম টেনে ধরে না। ফলে D P works অনেকাংশে অধরা থেকে যায়।

পূজনীয় শ্রীশ্রীঅবিনদাদার "পরজন্মে বাকিটা বুঝতে হবে" কথায় তাদের কিচ্ছু যায় আসে না। তাদের বোধের ঘরের দেওয়াল এত মোটা যে এসব কথায় সেই দেওয়াল ভেদ হয় না, হবারও নয়। এটা বায়োলজিক্যালি ডিফেক্ট। এরা ইহকালেরই পরোয়া করে না তো পরজন্ম দূর কি বাত।

তাই এরা মন্দিরে মন্দিরে দাপিয়ে বেড়ায়। এদের পৃষ্টপোষক একশ্রেণীর কিছু অসিদ্ধ ঋত্বিক ও তাদের সহযোগী যাজক শ্রেণী। শ্রীশ্রীঠাকুর সর্ব্বজ্ঞ, সত্যদ্রষ্টা পুরুষ। তিনি জানতেন এইসমস্ত পাঞ্জাধারী ঋত্বিকদের সম্পর্কে। তাই তিনি এদের আগাম চিহ্নিত ক'রে গেছেন তাঁর "সিদ্ধ নয়, মন্ত্র দেয় মরে, মারে করেই ক্ষয়" বাণীর মধ্যে দিয়ে।
কেন্দ্র ও মন্দির দখলের ধান্দা, ইষ্টকে আয়ের উপকরণ ক'রে নেওয়ার ধান্দা আরও অনেক রিপু তাড়িত বৃত্তি-প্রবৃত্তির ধান্দা নিয়ে যারা দয়ালের দরবারে আসে তাদের কাছে ইষ্টধান্দার কোনও মূল্য নেই। তারা নিজেরা গঠনমূলক কোনও কিছু সৃষ্টি তো করে না, করতে পারে না, এমনকি কাউকে করতে দেয়ও না। উপরন্তু যদি কিছু সৃষ্টি হ'য়ে থাকে মন্দিরে তারা সেসব ধ্বংস ক'রে দেয় তাদের অযোগ্যতা, অদক্ষতার কারণে, পরশ্রীকাতরতায় ইষ্টবোধের চূড়ান্ত অভাবে। তাদের দর্শন, বড়কে ছোটো করো, ছোটোকে আরও ছোটো করো আর লাথি মেরে পাতালে ঢুকিয়ে দাও। আমার নিজের হাতে গড়া একটা মন্দিরে ধ্যান ঘর ছিল। সমস্ত ঘরের চারপাশের দেওয়াল উপর থেকে নীচ পর্যন্ত ছিল সাদা ধবধবে পর্দায় ঢাকা। সামনে ছিল সাদা চাদরে ঢাকা টেবিলের ওপরে চক্রফটো। আর সেই চক্রফটোর সামনে ছিল সাদা পর্দা দিয়ে ঢাকা। অনেক মানুষ একসঙ্গে বসে সেখানে ধ্যান করতে পারতো। সেই ঘরে অদীক্ষিত কারও প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ। ঋত্বিক সেই ঘরে বসে দীক্ষা দিতেও পারতেন। সেটা ছিল ৮০-র দশকের কথা। পরবর্তী সময়ে ধ্যানঘর ভেঙে রান্নাঘর তৈরী করা হয়।
আর যারা মন্দির পরিচালনায় থাকে তারা যদি ধনী হয়, মন্দিরের পিছনে কোনও খরচা করে তাহ'লে তো কথায় নেই; কেন্দ্র মন্দির তাদের পৈতৃক সম্পত্তিতে পরিণত হয়। যদিও সেখানেও তাদের নিজেদের মধ্যে অর্থের দম্ভে লাঠালাঠি চলে।

আর সাধারণ ভাঙাচোরা সৎসঙ্গীরা এদের মধ্যে পড়ে চাক্কির মত পিষ্ট হয়। যদিও অনেকাংশে এইসমস্ত সাধারণ ভাঙাচোরা দুর্বল ভীরু কুসংস্কারাচ্ছন্ন সৎসঙ্গীরাই মন্দির দখলদারীদের পৃষ্ঠপোষক হয়। আর পৃষ্টপোষক হয় নিজেদের সরলতার কারণে, ভয়ের কারণে, ঠাকুর সম্পর্কে অজ্ঞতা বা অজ্ঞানতার কারণে, 'যা হচ্ছে হ'ক, আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা' মানসিকতার কারণে, কান পাতলা হওয়ার কারণে, বৃত্তি-প্রবৃত্তির স্বার্থে, ঠাকুর আয়ের উপকরণ হওয়ার কারণে, পাঞ্জা প্রাপ্তির লোভের কারণে, মন্দিরে খুঁটি গাড়ার কারণে এবং আরও অনেক কারণে।

পরবর্তী এক সময়ে এই সমস্ত উপরে উক্ত ধরণের সৎসঙ্গীরা নিজেদের ভুলে ও দোষে এবং মন্দির কমিটির লোকেদের ঘৃণ্য ব্যবহারে ও নীচ মানসিকতায় ঠাকুর থেকে উৎসাহ হারিয়ে ফেলে এবং মন্দির থেকে দূরে সরে যায়। কিন্তু এরা নিজেদের ভুল ও দোষ স্বীকার করে না।

এইসমস্ত ঘটনা ঘটে যায় দিনের পর দিন, মাসের পর মাস আর বছরের পর বছর কেন্দ্রে কেন্দ্রে, মন্দিরে মন্দিরে আর দয়াল ঠাকুর চুপ ক'রে দেখে যায় এদের কর্মকান্ড।

শ্রীশ্রীঅবিনদাদার কথামতো শ্রীশ্রীঠাকুরের কেন্দ্র মন্দিরকে নিজেদের কেন্দ্র, মন্দির মনে ক'রে নিজেদের ইচ্ছেমতো চালাতে চাওয়া এইসমস্ত দয়ালের কাছে ভিলেন হওয়া মন্দিরের কর্মকর্তাদের শ্রীশ্রীদাদার কথামতো শেষের সেদিন দেখেছি কি ভয়ংকর। এদের দেখেছি শেষ সময়ে এসে দয়ালের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করতে, দেখেছি এদের ও এদের আপনজনদের এদের জন্য দয়ালের কাছে দুর্দশা মুক্তির আকুল প্রার্থনা করতে, দেখেছি এদের পরিবারের লোকেদের চোখের জলে দয়ালের কাছে রোগ মুক্তির প্রার্থনা করতে, দেখেছি ও দেখছি গুরুভাইবোনেদের কাছে আপনজনদের দুর্দশা থেকে মুক্তির জন্য দয়ালের কাছে নিষ্কাম প্রার্থনার অনুরোধ করতে। দেখেছি শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী এদের শেষ জীবনে কি ভয়ঙ্কর সত্য হ'তে।
শ্রীশ্রীঠাকুরের বাণী,
"দুর্দশাতে কাবু যখন বৃত্তি কাবু তাই,
বাঁচার টানে মানুষ তখন বিধির পথে ধায়,
বিধির পথে চলতে গিয়ে চিত্ত সবল হ'লে
বৃত্তি স্বার্থের ধান্দা নিয়ে আবার ছুটে চলে।
এমনিভাবে ওঠাপড়ায় মরণমুখে ধায়----"।

মন্দিরে মন্দিরে দেখেছি কর্মকর্তাদের এরকম দুর্দশাতে কাবু হ'য়ে পড়া, বাঁচার টানে বিধির পথে চলা, বিধির পথে চলে সুস্থ হ'য়ে উঠে আবার বৃত্তি স্বার্থের ধান্দা নিয়ে ছুটে চলা। দেখেছি এরকম ওঠাপড়ার খেলা খেলতে খেলতে শ্রীশ্রীঠাকুরের সত্যানুসরণের "হেগে মরার চেয়ে হেঁটে মরা ভালো" বাণীর উল্টোটা "হেঁটে মরার চেয়ে বিছানায় হেগে মরা ভালো" বেছে নিয়ে মরণের মুখে ছুটে চলা।

এই দুই ধরণের সৎসঙ্গীদের জীবনে দেখেছি শ্রীশ্রীদাদার কবিতার কথা কতটা সত্য। তাই শ্রীশ্রীঅবিনদাদার কথা "মন্দির গুলো নিজেদের জন্য, নিজেদের মতো চালাতেন , দয়ালের জন্য নয়। নিজের না ভেবে ওটা দয়ালের জায়গা ভাবুন, দেখবেন এই ঔদ্ধত্য ভরা বড় বড় পদ নিয়ে থাকা মানুষ গুলো ক্ষান্ত হবেন, না-হলে চলুন নিজের মত। নিজের জায়গায় হিরো হলেও দয়ালের কাছে ভিলেন হয়েই থাকবেন এবং পরজন্মে বাকিটা বুঝতে হবে" সূত্র ধ'রে এখানে কবিতাটা তুলে ধরছি।
শেষের সেদিন ভয়ংকর
ফাঁকি দিয়ে ঘুরিস ভবে প্রবঞ্চনায় ভুলিয়ে লোকে
কথার তোড়ে মাতিয়ে সবে আত্মপ্রতিষ্ঠারই ঝোঁকে,
এমনি করেই বেলা গেল সন্ধ্যা-ছায়ায় ভরল ঘর,
এখনও তুই চেতন হারা ? শেষের সেদিন ভয়ংকর।
নিত্য অহংমত্ত যারা গেছে চলে এমন কত –
কেরদানিতে কাঁপিয়ে ধরাচলত যারা অবিরত,
গুরুগিরির মোহে ছুটিস গরুর মতন নিরন্তর,
তোর খেয়াতে মাঝিই যে নেই; শেষের সেদিন ভয়ংকর।
পিছু পিছু চলছে যারা নিত্য নিয়ে মাথায় তোরে
মিষ্টি কথায় ভুলিয়ে ভাবিস অনন্তকাল রাখবি ধরে ?
ডুববি যখন শুনবি ওদের অভিশাপের কলস্বর।
হাতটি ধরার থাকবেনা কেউ; শেষের সেদিন ভয়ংকর।
ইষ্ট ছেড়ে ইষ্ট সেজে ছড়িয়ে বাহার ভাবিস নাকি
বাহার দেখে ভুলবে বিধি, পারবে নাকো ধরতে ফাঁকি ?
সত্ত্বা জুড়ে জাগছে ভাঙ্গন, জাগছে ঐ প্রলয় ঝড়
পারিস যদি ফের এখনও; শেষের সেদিন ভয়ংকর।
ঈশের বিষাণ উঠল বেজে, কাল-ফনা তোর মাথার প'রে,
মরণ তোরে করছে তাড়া বাঁচবি এবার কেমন করে?
দ্রোহ-লোভের বাঁধন ছিঁড়ে ইষ্ট পথে ঝাঁপিয়ে পড়
নইলে গতি কুম্ভীপাকে; শেষের সেদিন ভয়ংকর।
পূজনীয় শ্রীশ্রীঅবিনদাদার "পরজন্মে বাকিটা বুঝতে হবে" কথাটা স্মরণ ক'রে নিজেকে নিজেই এ কথাটা ব'লে বক্তব্য এইখানেই শেষ করলাম। ( লেখা ২৮শে জুন' ২০২৫)।


Saturday, August 23, 2025

উপলব্ধিঃ লেখকের নামের পরিবর্তে 'সংগৃহীত'।

আজও একটা সকাল সকাল ভালো লেখা পড়লাম। পড়লাম সদ্য আর জি কর কান্ডের নারীর অধিকারের বিচার নিয়ে লেখা। খুব ভালো লাগলো। অনুপ্রাণিত হলাম। ভাবলাম লেখককে কুর্ণিশ জানাই। কিন্তু পারলাম না। কারণ লেখকের নাম নেই। পরিবর্তে লেখা আছে 'সংগৃহীত' শব্দ। তাই পোষ্ট দাতাকে দইয়ের পরিবর্তে ঘোল খাওয়ার মত ধন্যবাদ জানাতে হয় পোষ্ট করার জন্য। যাই হ'ক, প্রায় সময়ই দেখি ভালো ভালো লেখা সংগৃহীত ব'লে পোষ্ট করা হয়। কেন? লেখক কি নাম দিতে ভয় পান? নাকি ইচ্ছে করেই কেউ লেখকের নামটা কেটে দেন? কোনটা? প্রায় সময়ই ফেসবুকে এটা চোখে পড়ে। এই মানসিকতার উৎস কি? বহ হাজার বছরের পুরোনো লেখার লেখকের নাম পাওয়া না গেলে প্রচলিত ব'লে প্রচার করা হ'তো এবং হয় প্রবাদের মত। কিন্তু সদ্য নোতুন একেবারে কাঁচা টাটকা ইস্যুতে যখন কোনও লেখা দেখতে পাই চোখে তখন দেখি লেখার শেসে লেখকের নামের পরিবর্তে সংগৃহীত লেখা রয়েছে। কেন? ইদানীং নোতুন ট্রেন্ড প্রচলিতর পরিবর্তে লেখা হয় সংগৃহীত। এর পরেও কোনও ভালো উদ্যোগ সফল হ'তে পারে?
( ২৩শে আগষ্ট'২০২৪)

প্রবন্ধঃ এসপার ওসপার।

রোজ রোজ সকাল হলেই একটা কমন জিনিস ফেসবুকে ও ইউ টিউবে দেখতে পাই। সকালে দেখার সুযোগ না পেলে দুপুরে বিকেলে সন্ধ্যায় রাতে কোনও না কোনও সময় দেখতে পাই। অর্থাৎ যখনি সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ রাখি তখনি দেখতে পাই। ফেসবুক ও ইউ টিউব এখন স্ট্রং প্ল্যাটফর্ম নিজেকে মেলে ধরার। বাচ্চা থেকে বুড়ো, পন্ডিত থেকে লেন্ডিত সবাই সুযোগ পায় নিজেকে মেলে ধরার, তা সে যেভাবেই হ'ক। বক্তব্য বিষয়ের গুরুত্ব থাকুক আর না-থাকুক, ভিত্তি থাকুক আর না-থাকুক, লজিক থাকুক আর না-থাকুক, মঙ্গল থাকুক আর না-থাকুক, শালীনতা থাকুক আর না-থাকুক ভাঁড় মে যায়, আমার গায়ে আঁচ না লাগে ফুরিয়ে যাবে মামলা, আমি পোষ্ট ক'রে যাবোই, পোষ্ট ক'রে যাবোই বক্তব্য বিষয় বুঝি আর না-বুঝি। পরমপ্রেমময় শ্রীশ্রীঠাকুর রামকৃষ্ণের বাণী, "লজ্জা, ঘৃণা ভয়, তিন থাকতে নয়" এক্ষেত্রে এক্কেবারে পারফেক্ট। যেমন প্রমোটার, ডেভলপার, রাজনৈতিক দলগুলির নেতাদের কাছে তাঁর অন্যতম জনপ্রিয় বাণী "টাকা মাটি, মাটি টাকা" শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণীয়। যে যেমন পারছে লজ্জা, ঘৃণা, ভয়ের মাথা খেয়ে জনপ্রিয়তা অর্জনের লক্ষ্যে ও অর্থ রোজগার করার তাগিদে নানারকম চটুল, অর্থহীন, ভুল, অশ্লীল, সস্তা, মানবতা বর্জিত, উসকানিমূলক পোষ্ট ক'রে চলেছে, ছড়িয়ে দিচ্ছে ভয়ংকর হিংসার আগুন। পোষ্ট হ'য়ে চলেছে যৌন সুড়সুড়িতে ভরপুর রিলস, স্টোরি, ভিডিও ইত্যাদি যা ধ্বংস ক'রে দিচ্ছে প্রজন্মের পর প্রজন্মের শৈশব, কৈশোর, যৌবনের ভিত। সূক্ষ্ম শুভ সংস্কারের অঙ্কুর উপড়ে ফেলে দিচ্ছে এক্কেবারে জীবন গড়ে তোলার গোড়াতেই। যারা ধ্বংস যজ্ঞে মেতেছে, অন্ধকার কায়েম রাখার খেলায় মেতেছে তারা বলছে, অন্ধকার কায়েম রহে, মার হাতোড়া গোড়াতেই, মূলে।

এই সমস্ত পোষ্টের ভিড়ে মাঝে মাঝে অক্সিজেন পেলেও সিরিয়াস পোষ্ট ও আলোচনা করার মানুষের বড়ই অভাব। আর, যদিও বা দেখি সিরিয়াস কোনও লেখা তাও সংগৃহীত বা কালেক্টেড লেখা থাকে। লেখকের নাম জানা যায় না।

যাই হ'ক, দিন শুরু হচ্ছে উস্কানিমূলক হিংসা আর যৌন সুড়সুড়িতে ভরপুর পোষ্ট দিয়ে আর শেষ হচ্ছে তাই দিয়ে। ধর্মের মর্যাদা রক্ষা না-করা, গুরুজনের মর্যাদা রক্ষা না-করা, নারীর মর্যাদা, নারীর সম্ভ্রম রক্ষা না-করা, শিশু, অসহায়, নিরাশ্রয়দের আশ্রয় হ'য়ে না ওঠা, ঈশ্বর ও প্রেরিতদের অবজ্ঞা করা, কুৎসা করা, নিন্দা, সমালোচনা, অশ্লীল গালাগালি করা আজ ট্রেন্ড হ'য়ে দাঁড়িয়েছে সমাজে। এই বিষয়ে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ট বিস্ময় শ্রীশ্রীঠাকুর অনুকূলচন্দ্র স্পষ্টভাষায় সাবধান ক'রে দিয়ে গেছেন আমাদের। কিন্তু চোরা না শোনে ধর্মের কাহানী। আমরা সৎসঙ্গীরাই তাঁর কথা শুনিনি। শুনছি না।

সম্প্রতি আমরা দেখলাম, শুনলাম বাংলাদেশের আন্দোলনে যৌবন শক্তিতে পরিপূর্ণ নারীপুরুষের সমান তালে কানে গরম সীসা ঢেলে দেওয়ার মত অশ্লীল গালাগালিতে ভরপুর শ্লোগান এবং হাতে মায়েদের অন্তর্বাস নিয়ে নির্লজ্জ মিছিল, উল্লাস।

এই ট্রেন্ড ছাড়া সবচেয়ে আরও ভয়ংকর একটা ট্রেন্ড ভারত বিরোধীতা। যে কোনও ইস্যুতে ভারত বিরোধীতা। প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ, যে দেশ একদিন ভারতেরই অঙ্গ ছিল, সেই দেশের প্রজন্মের পর প্রজন্মকে ভারত বিরোধী ক'রে তোলা হয়েছে ও হচ্ছে সুকৌশলে। সবচেয়ে বেশী প্রভাব পড়েছে এপার ওপার দুই বাংলার বাঙালীদের মধ্যে। যদিও এখন আর মনে হয়না বাংলাদেশীরা নিজেদের বাঙ্গাল বাঙালি ভাবে। দুইভাগে ভাগ হ'য়ে গেছে বাংলাদেশ মুসলমান আর হিন্দু বা সংখ্যা লঘু শব্দে, আজ আর বাঙালী কেউ না। এপার বাংলা সেই সংক্রামক ব্যাধিতে এখনও আক্রান্ত হয়নি তবে যেভাবে যেদিকে এগোচ্ছে গতিক দেখে মনে হয় এপার বাংলাও একদিন সেই পথ অনুসরণ করবে, তা' আর বেশীদিন নেই। অথচ চুপ ক'রে বসে দেখছে দুই দেশের শিক্ষিত সমাজ। যুদ্ধবাজ বা দুরাত্মাদের কোনও ধর্ম ও জাত নেই। তাদের একটাই ধর্ম ও জাত তা' হ'লো 'দে মা লন্ডভন্ড ক'রে, লুটেপুটে খায়।' আর, তার পৃষ্টপোষক এলিট সমাজের ভীষ্মরা।

তাই মন বলে, এক কোপে কেটে দে বাবা শান্তিতে অন্তত মরি। রোজ রোজ দাঁত খিচুনি আর ভালো লাগছে না। কয়েকটা লোকের জন্য, তা' বিশ্বের যে দেশেরই হ'ক, আজ আম জনতা প্রভাবিত। শুধু মরণের পথে নিয়ে যাবার উস্কানি, তা সে যেই-ই হ'ক, শুধু বিষ বিপ্লবের হাতছানি।

হে আম জনতা, আসুন একসঙ্গে সবাই মরে যায়। চ্যাপ্টার ক্লোজ হ'ক মানব জাতির।

কথাটা বললাম এইজন্যে আজও একটা পোষ্ট দেখলাম প্রতিদিনের মত ভারত বিরোধী ছাত্র মিছিলের। কে বা কারা উস্কাচ্ছে ছাত্রদের যে কোনও ইস্যুকে কাজে লাগিয়ে তা' বোঝা যাচ্ছে না। ছাত্র সমাজ বুঝতেই চাইছে না, "উত্তেজিত মস্তিষ্ক আর বৃথা আড়ম্বর যুক্ত কল্পনা দু'টোই অসিদ্ধির লক্ষ্মণ।" আর, যারা উস্কাচ্ছে তারা ঠিকই করেছে তারা আমৃত্যু এইসব ঘৃণ্য কাজ করে যাবে। একটা না একটা ইস্যু চাই-ই চাই বর্তমান ছাত্র সমাজের কাছে নিজেদের বুদ্ধিতে সেরা প্রমাণ করার জন্য। বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান ডাঃ ইউনুস কি এসেই ঘুমিয়ে পড়েছেন? তিনি যদি ব্যবস্থা নিতে না পারেন দেশের পরিস্থিতি মোকাবিলা করার তাহ'লে পুরো দেশটাই ছাত্রদের হাতে তুলে দেওয়া হ'ক। ডাঃ ইউনুস ছাত্রদের এগিয়ে না দিয়ে নিজে মোকাবিলা করুন দেশের পরিস্থিতির জন্য ভারতের বিরুদ্ধে। ভারতের বিরুদ্ধে যদি যুদ্ধ করার ইচ্ছা হয়েই থাকে তাহ'লে সেই ইচ্ছাও পূরণ করে নিন। শুধু শুধু দিনের পর দিন ভারতের বিরুদ্ধে ঘৃণার চাষ করা বন্ধ হ'ক। এতে কখনোই ভবিষ্যৎ সুন্দর হয় না। ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হ'ক। আলোচনার টেবিলই বর্তমান সময়ের এক ও একমাত্র সমাধানের পথ। ঝগড়া দিয়ে, হিংসা দিয়ে, মারামারি কাটাকাটি দিয়ে কোনও সমস্যার সমাধান হয়না ও হয়নি, বিশাল মাপের ক্ষয়ক্ষতি হওয়া ছাড়া। শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্ত শান্তির দূত ডাঃ মহম্মদ ইউনুস আপনার মত মহান জ্ঞানী না বুঝলে তাহ'লে আর কে বুঝবে? কবে বুঝবে? এভাবে ঘৃণা নিয়ে বেঁচে থাকার থেকে হ'য়ে যাক এসপার ওসপার, সবাই একসঙ্গে শেষ হ'য়ে যাই।
( লেখা ২৩শে আগষ্ট'২০২৪)

Thursday, August 21, 2025

উপলব্ধিঃ জানা আর মানা।

শ্রীশ্রীঠাকুরকে না মান ক্ষতি নেই বিবাহ সংস্কার মানতেই হবে।। এরকম একটা লেখা দেখলাম। লেখাটা কার? 

আমাদের মাথায় রাখতে হবে জানা আর মানা পরস্পর নির্ভরশীল। শ্রীশ্রীঠাকুর জানা আর মানা এই দুই শব্দকে কে দুই ভাই হিসেবে অভিহিত করেছেন। জানতে গেলে মানতে হবে আর মানতে গেলে জানতে হবে। বিবাহ সংস্কার জানলাম আর যাঁর কাছ থেকে জানলাম তাঁকে মান্যতা দিলাম না এটা বেইমানী অকৃতজ্ঞতা। এটাকে রক্তের দোষ বলে। রক্তের দোষ তাদেরই থাকে যাদের জন্মদোষ আছে। এরকম বহু বিষয় দেখা যাচ্ছে যে শ্রীশ্রীঠাকুরের বলা বিষয় নিয়ে বহু কৃতি মানুষ বহু কিছু রচনা করছেন, করছে গবেষণা কিন্তু দিনশেষে যাঁর থেকে বিষয়ের Clueটা পেল, বিষয়ে প্রবেশ করার Key, চাবিটা পেল তাঁকে স্বীকৃতি দিতে, তাঁর নাম প্রকাশে কোথায় জানি আপত্তি। ফলে দেখা গেছে সেই কৃতি পুরুষ অর্থ, মান, যশ ইত্যাদি পেলেও দিনের শেষে প্রাপ্তি শূন্য, অতৃপ্তি তাঁকে ভুতের মতো তাড়া ক'রে বেড়ায়।

শ্রীশ্রীঠাকুরের বিষয় নিয়ে দেশ বিদেশ জুড়ে লম্ফ দিয়ে ঝম্প মারলাম, দেশ বিদেশ জুড়ে নাম ডাক প্রতিপত্তির অধিকারী হলাম অথচ আমার অতীতের বাস্তব অবস্থাকে স্বীকার ক'রে তাঁকে স্বীকৃতি দিলাম না, মানলাম না তাঁকে, নত হলাম না তাঁর কাছে , বিনয়ী হলাম না অথচ অহংকারী হ'য়ে উঠলাম, অর্থ, মান, যশ, জ্ঞানের দম্ভ প্রকাশ পেল তাহ'লে জীবনের শেষ দিনটা কিন্তু অপেক্ষা করছে সুদ সমেত হিসেব বুঝে নেবার জন্য, দিনের শেষে কিন্তু শূন্য ফাঁকা ঘরে একা আমি, আমার সামনে এসে দাঁড়াবে আমার নিজের হাতে গলা টিপে মেরে ফেলা মৃত বিবেকের আত্মা, আমার সামনে ভেসে উঠবে সেই যন্ত্রণাকাতর বিবেকের চোখ মুখ আর আর্তনাদ যাঁকে আমি আমার অর্থ, মান, যশে ভরপুর অহংকারী উদ্ধত যৌবনকালে নির্ম্মমভাবে হত্যা করেছি। সেই যন্ত্রণাকাতর মৃত বিবেকের আত্মা আমার দিকে তাকিয়ে তখন বলবে, আমায় চিনতে পারছিস? আমি সেই তুই, যাকে একদিন গলা টিপে হত্যা করেছিলি, আর, আমি হারা সেই তুই ঐ বিছানায় একা বসে আছিস অন্তরে বাহিরে একা হয়ে রুগ্ন বিধ্বস্ত ক্ষতবিক্ষত শরীরে ও মনে। আর, যদি আবারও আসিস এই বিবেকহীন শরীর মন নিয়ে বিদায় হওয়া শরীর মন নিয়েই আসবি আবারো, আসবি জন্মজন্মান্তর।

তাই, যার কাছ থেকে যা জানবো তাঁকে সেই বিষয়ে মান্যতা দিতেই হবে, আর, গ্রহণ করতে হবে তাঁকে জীবনে। যদি মান্যতা না দিই, স্বীকৃতি না দিই, যদি জীবনে গ্রহণ না করি, গ্রহণ করেও না গ্রহণ করার মত তাঁকে অপমান, অশ্রদ্ধা করি, পরিণামে প্রাপ্তিও তাই। অলমিতি বিস্তারেণ।
( লেখা ২১শে আগষ্ট'২০২৪)

উপলব্ধিঃ শিষ্টাচার ও ভদ্রতা।

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনায় ছাত্র সমন্বয়ক কমিটির সদস্যদের মধ্যে যারা ক্ষমতার চেয়ারে বসেছেন তাদের মধ্যে একজন অল্প বয়সী ছাত্রের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ক্ষমতার চেয়ারে বসে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা বয়স্ক আধিকারীকদের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র ক'রে পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক দানা বেঁধেছে দেখলাম। এ নিয়ে সবার যার যার ব্যক্তিগত মতামত দেখলাম ও পড়লাম। তাই আমারও যা মনে হ'লো এই বিষয়ে তাই আমিও তুলে ধরলাম সমস্ত ছাত্র সমাজের সুবিধার্থে। গ্রহণ বর্জন ব্যক্তিগত।

শিষ্টাচার ও ভদ্রতা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার যা' জৈবী সংস্থিতি ও পারিবারিক, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, শিক্ষা, ভৌগলিক কৃষ্টি, সংস্কৃতির ওপর নির্ভর করে। আর, এই শিষ্টাচার ও ভদ্রতা প্রতিদিনই জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত অর্থাৎ শৈশব থেকে বার্ধ্যক্য পর্যন্ত পারিবারিক ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে শেখার ব্যাপার। কেউই পারফেক্ট না। পারফেকশান অর্থাৎ পরিপূর্ণতা লাভের জন্য মাথার ওপর আদর্শ থাকার প্রয়োজন। আর, আদর্শের আদর্শ মহা আদর্শ সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, ঈশ্বরের জীবন্ত রূপ যদি আদর্শ হিসেবে জীবনে থাকে ও সক্রিয় থাকে তখন শিষ্টাচার ও ভদ্রতার কৃষ্টি-সংস্কৃতি নিজের ভেতরে অটোমেটিক্যালি জন্ম নেয়। এই শিষ্টাচার ও ভদ্রতা কোনও স্কুল কলেজ থেকে শিখতে হয় না। 

যাই হ'ক, এই আচরণ থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় দেশের ও পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ কি।
( লেখা ২১শে আগষ্ট'২০১৪)

বিচিত্রা ১৭৭

নিন্দা 
যখনি কেউ কারও নিন্দা করে বুঝে নিতে হবে 
নিন্দিত ব্যক্তি নিন্দাকারীকে কোনোদিন কোনও 
উপকার বা সাহায্য করেছিল।

যখনি কেউ কারও নিন্দা সমালোচনা করে 
বুঝে নিতে হবে নিন্দিত ব্যক্তি 
নিন্দাকারীর স্বার্থে আঘাত করেছিল। 

যখনি কেউ কারও নিন্দা কুৎসা করে, 
দোষ ত্রুটি ধরে তখনি বুঝে নিতে হবে 
নিন্দাকারী মাৎসর্য রিপু দ্বারা আক্রান্ত।

যখনই দেখবে কেউ তোমার নিন্দা সমালোচনা করছে 
তখনি বুঝবে সে তোমার সাজানো বাগানে এসে 
বিন্দাস ফুল তুলতে বাধা পেয়েছে।
( লেখা ২১শে আগষ্ট'২০২৪)

দিকে দিকে আন্দোলন আন্দোলিত হচ্ছে নানা ঢঙে নানা রঙে। 
কখন যে কার হাত ধ'রে আন্দোলন কোনদিকে ঘুরে যাচ্ছে 
কেউ তা' জানে না।
( লেখা ২১শে আগষ্ট'২০২৪)





Tuesday, August 19, 2025

বিচিত্রা ১৭৬

কেরল বিপর্যয় শুধু নমুনা মাত্র 
অপেক্ষা করছে আরও আরও ভয়ঙ্কর রাত্র 
আমি জানি বললে একথা হবে সে উপহাসের পাত্র!!!

কেরলে হয়েছে তো আমার কি? 
শালা মার হাতোড়া, চালাও রাজনীতির তর্জা; 
ভস্মে ঢালো ঘি!!

কেরলে বন্যা,
টিভির চ্যানেলে চ্যানেলে হয়েছে শুরু---
চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে গুরু---
সমস্যা সমাধানে বাদ প্রতিবাদের ন্যাকা কান্না।
( লেখা ২০শে আগশট'২০১৮)

বর্তমান কঠিন মুহূর্তে দেশের স্বার্থে দেশের সব দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতানেত্রীর কোনটা আগে প্রয়োজন?
১) আফগানিস্থান ইস্যুতে বৈঠকে বসা ? নাকি
২) ২০২৪ লোকসভা ভোটের পরিপ্রেক্ষিতে বিরোধী ঐক্য ইস্যুতে বৈঠকে বসা?

তালিবানি আগ্রাসনে অজানা বিশ্ব রাজনীতি ও পরিস্থিতিতে দেশের রাজনৈতিক দলগুলির এইমুহূর্তে কোনটা আগে করা উচিত?
১) কেন্দ্রের ক্ষমতা দখলের ছক কষা? নাকি
২) দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা?

কোনটা আগে কোনটা পরে এই মিনিমাম বোধ যদি মানুষের না থাকে বিশেষ করে ঘরের বা দেশের অভিভাবকদের তবে শিয়রে শমন নিশ্চিত!

সাম্রাজ্যবাদ নিপাত যাক এই স্লোগান আর কমিউনিষ্টদের মুখে মানাবে না। মানাবে কি? আফগানিস্থান ইস্যু কি বলে?

কি নির্ম্মম নিষ্ঠুর বেদনাদায়ক দৃশ্যঃ
মা তার কোলের দুধের শিশুকে তুলে দিচ্ছে অজানা অচেনা মার্কিন সেনার হাতে তালিবানের হাত থেকে বাঁচাতে! আর ক্ষমতাধর বিশ্ব সেই নির্ম্মম বেদনাদায়ক দৃশ্য দেখছে তারিয়ে তারিয়ে!!!

কলকাতা তথা দেশের এলিট সম্প্রদায় ব'সে আছে চুপ করে! অপেক্ষায় আছে কখন কে, কোন রাজনৈতিক দল প্রথম তালিবানের বিরুদ্ধে মানবিকতার স্লোগান তোলে!

আফগানিস্থানে করোনা নেই! করোনার ভয় নেই! কি মজা!!

আফগানিস্থান ইস্যুতে কবি, সাহিত্যিক সবাই চুপ কেন? কৃষক আন্দোলন, NRC, CAA বিরোধী মানবতার আন্দোলনে ছিল সক্রিয়, ভয়ঙ্কর সক্রিয়! এখন নিষ্ক্রিয় কেন!? মানবতার সংজ্ঞা দেশ ভেদে, ইজম ভেদে আলাদা আলাদা হয় নাকি!? হায় মানবতা!!!!
( লেখা ২০শে আগশট'২০২১)

If you want to spend energy, first spend it for yourself, your family, then spend for the greater good of the environment.

যদি এনার্জী খরচ করতে চাও তো প্রথমে নিজের জন্য, নিজের পরিবারের জন্য খরচ করো তারপর বৃহত্তর পরিবেশের মঙ্গলের জন্য খরচ করো।
মানুষ চেনা কঠিন তার থেকেও কঠিন নিজেকে চেনা। তাই কাউকেই, কোনও মানুষকেই চিনতে চাই না, নিজেকে চিনতে চাই আমৃত্যু।

হে আমার প্রিয়,
একমাত্র ঈশ্বরের ডাক ছাড়া কারও ডাকে সাড়া দিও না।

হে আমার প্রিয়,
ঈশ্বরের কাছে ছাড়া কারও কাছে যেও না। 

হে আমার প্রিয়,
ঈশ্বর ছাড়া কাউকে বিশ্বাস ক'রো না।

হে আমার প্রিয়, আকুল ভাবে ঈশ্বরকে ডাক সাড়া পাবেই পাবে। তাঁর সাড়া পাবার জন্য সমস্ত ইন্দ্রিয়কে সাড়াপ্রবণ ক'রে তোলো।

তথাকথিত বুদ্ধি, জ্ঞান, মেধা দিয়ে মানুষের মঙ্গল করা যায় না। মানুষের মঙ্গল নিহিত থাকে ঈশ্বরে সমর্পিত ব্যক্তির হাতে।

তথাকথিত জ্ঞানী ব্যক্তি দুর্বল ক্ষীণ মস্তিষ্ক সম্পন্ন যুদ্ধবাজ হয়, আর, ঈশ্বরে সমর্পিত প্রাণ প্রকৃত জ্ঞানী অসীম শক্তিমান হয়।
( লেখা ২০শে আগশট'২০২৪)























































































Monday, August 18, 2025

বিচিত্রা ১৭৫

শান্তির মশাল হাতে অশান্তির আগুন জ্বালায় যারা 
তাদের শেষের সেদিন ভয়ংকর।

শান্তির নোবেল পুরস্কার কারা দেয়, কাদের দেয়, কেন দেয়? 
অশান্তির আগুন জ্বালাতে? 
এলোমেলো ক'রে দিয়ে লুটেপুটে খেতে?

শান্তির পুরস্কার কাদের দেওয়া হয়? আফজল খাঁ-দের? 
এর উত্তর এখন কি? কে দেবে উত্তর?

বাংলার সেরা বাঙালির তকমা পাওয়া বাঙালিদের কি 
প্রমান করার সময় এখনও আসেনি কেন তারা সেরা?
( লেখা ১৯শে আগশট'২০২৪)

কবিতাঃ যত দোষ নন্দ ঘোষ

যত দোষ নন্দ ঘোষ সেইমত ধ্বংস কাজে যত 
আন-বান-শান তালিবান! তাই না? 
আর বাকী সব ক্ষত!?
কারা তারা যারা প্রতিনিয়ত দেশে দেশে 
রাজ্যে রাজ্যে ঘরে ঘরে পোঁতে বিভেদের বীজ!? 
ক্ষত কাজে সযতনে থাকে রত!? 
তারা সব কি? শান্তির দূত? মেহমান? 
নয় কি চরিত্র তালিবান!? 
আমার ভিতর বাহিরে অন্তরে অন্তরে আছে যত শয়তান! তারা? 
তারা কোন হাতে বাজায় তালি আর কোন হাতে চালায় বান? 
তুমি আমি ন'ই কি তালিবান!? 
আর কত আগ্রাসন!? ক্ষমতা দখলের লোভ আর কত!? 
আর কত অর্থ-মান-যশ ও ক্ষমতা পেলে তুমি হবে শান্ত!? 
আর কত রক্ত পানে তোমার মিটবে তৃষা, হবে তুমি ক্ষান্ত!? 
যত দোষ নন্দ ঘোষ আর যত আগ্রাসন? 
সব শান্তির পূজারী ভগবান!?
নয় কি তারাও তালিবান!?
( লেখা ১৯শে আগস্ট'২০২১)

গানঃ বহে বহে প্রিয়-------

বহে বহে প্রিয় দেখো প্রেমজল
ফেনিল হয়েছে চুমে অধর শীতল।
বহে বহে প্রভুর চোখে প্রেমজল।
বহে বহে চোখে বহে প্রেমজল।

হেরিয়া প্রভুর চোখে
প্রেমবারি দিনে রাতে
কাঁদি আমি আনন্দতে ঝরিছে বাদল।
বহে বহে প্রভুর চোখে প্রেমজল।
বহে বহে প্রিয় দেখো প্রেমজল।
ফেনিল হয়েছে চুমে প্রভুর শীতল।
বহে বহে প্রিয় দেখো এ প্রেমজল।

মরুবুকে প্রভু এলে
(নিয়ে) প্রেমবারি আঁখি তলে
তৃষিত বুকে বহে প্রেম যে কেবল.২
বহে বহে চোখে বহে প্রেমজল
বহে বহে প্রভুর চোখে প্রেমজল।
ফেনিল হয়েছে চুমে প্রভুর শীতল।
বহে বহে প্রিয় দেখো এ প্রেমজল।

এ প্রেম চোখেমুখে
মুছায়ে দেয় আঁখিজলে
শিউড়ে ওঠে হৃদয় তাঁর প্রেমের আঁচল।
বহে বহে প্রিয় এ যে প্রেমজল।
বহে বহে চোখে বহে প্রেমজল।
ফেনিল হয়েছে চুমে প্রভুর শীতল।
বহে বহে প্রিয় দেখো এ প্রেমজল।

কেন মন অকারণ
কেঁদে মরিস অনুক্ষণ
হাসিতে চাহি খালি কাঁদিলি কেবল।
বহে বহে প্রিয় এ যে প্রেমজল।
বহে বহে চোখে বহে প্রেমজল।
ফেনিল হয়েছে চুমে প্রভুর শীতল।
বহে বহে প্রিয় দেখো প্রেমজল।
( লেখা ১৮ই আগশট'২০২১)

Thursday, August 7, 2025

প্রবন্ধঃ বাংলাদেশে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ।

বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথ কি দোষ করলো? তিনিও কি ফ্যাসিস্ট? তিনিও কি বাংলাদেশী ছাত্রদের আন্দোলনের বিরোধীতা করেছিলেন? তিনিও কি বাংলাদেশী ছাত্র আন্দোলনের ওপর গুলি চালিয়েছিলেন? বাংলাদেশ ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয় কমিটির কাছে জানতে চাই আপনারা তো ঘোষণা করেছিলেন,
"যে রাষ্ট্রীয় কাঠামোর মধ্যে দিয়ে এই ফ্যাসিজমের জন্ম হয় সেই কাঠামোর বিলোপ ক'রে এক নোতুন বাংলাদেশ, এক নোতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত আমাদের করতে হবে।"
আমার জিজ্ঞাস্য, এ কোন নোতুন ইজম, কোন নোতুন বাংলাদেশ যেখানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উপড়ে ফেলা হয়? ছাত্র আন্দোলন্র সফল হওয়ার পর মুজিবর রহমানের মূর্তির ওপর দাঁড়িয়ে মাথায় পেচ্ছাপ করা, বাচ্চাদের দিয়ে পেচ্ছাপ করানো, মন্দির ভাঙচুর, গণভবনে লুটপাট, মৃত্যু, হাসিনার উদ্দেশ্যে নোংরা অশ্লীল দেওয়াল লিখন ইত্যাদি কাজ কি ফ্যাসিবাদী কার্যকলাপের মধ্যে পড়ে? বাংলাদেশে আর রবীন্দ্র সঙ্গীত গাওয়া হবে না তো? কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের লেখা জাতীয় সঙ্গীত "আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি" আর আপনাদের নোতুন বাংলায় গাওয়া হবে না তো? এবং আপনাদের জাতীয় সঙ্গীত থাকবে না তো?

আপনারা বলেছিলেন,
"আমরা বৈষম্য দূর করার জন্য, সমাজের ন্যায় বিচার ও জীবনের নিরাপত্তার জন্যই আমরা আন্দোলন ঘোষণা করেছিলাম, সেই ঘোষণার প্রতি সবাই যেন শ্রদ্ধাশীল থাকে।"

আমার জিজ্ঞাস্যঃ এই যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতির পিতা মুজিবর রহমানের ওপর অপমানজনক কাজ করা হ'লো, মূর্তি ভেঙে ফেলা হ'লো, মাথায় প্রস্রাব করা হ'লো, গণভবনে লুটপাট করা হ'লো, নোংরা দেওয়াল লিখন, মৃত্যু তাহ'লে এই কাজ কি বৈষম্যের মধ্যে পড়ে? এই কাজ কি সামাজিক ন্যায় কাজ? এই কাজ কি আপনাদের ঘোষণার প্রতি শ্রদ্ধাশীল প্রমাণ করে?

বাংলাদেশে কি রবীন্দ্রসঙ্গীত ও রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী নিষিদ্ধ হবে? তাহ'লে কি সত্যি সত্যিই এবারে প্রকৃত বাংলা ও বাঙালি ভাগ হ'লো? বাংলাভাগের ষোলো আনা পূর্ণ হ'লো?

আর, রবীন্দ্রনাথের ওপর ছাত্রদের আক্রমণ কেন? রবীন্দ্রনাথ হিন্দু বলে? তাহ'লে ছাত্রদের আন্দোলনের ঝোলা থেকে অবশেষে সাম্প্রদায়িক কার্ড বেড়িয়ে এলো? বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ সাম্প্রদায়িক? তাহ'লে কি এটা প্রমাণ হ'লো এসব কাজে আপনাদের পূর্ণ সমথর্ণ আছে এবং এটাই আপনাদের আসল চেহারা নাকি বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতি আপনাদের নিয়ন্ত্রণে নেই আর? আপনারা ব্যর্থ?

তাহ'লে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভবিষ্যৎ বাণী ফলে গেল?
""নাগিনীরা চারি দিকে ফেলিতেছে বিষাক্ত নিশ্বাস,
শান্তির ললিত বাণী শোনাইবে ব্যর্থ পরিহাস--
বিদায় নেবার আগে তাই
ডাক দিয়ে যাই
দানবের সাথে যারা সংগ্রামের তরে
প্রস্তুত হতেছে ঘরে ঘরে।"

বাংলাদেশ ছাত্র নাগরিক আন্দোলন সমন্বয় কমিটির আহ্বানঃ
"আমরা শান্তিপূর্ণভাবে রাজপথে অবস্থান করবো।" এই অবস্থান তাঁর নমুনা???? শান্তিপূর্ণ ভাবে রাজপথে অবস্থানে নাগিনীরা চারি দিকে বিষাক্ত নিশ্বাস ফেলছে আর শান্তির ললিত বাণী শোনাচ্ছে ব্যর্থ পরিহাস????????
( লেখা ৭ই আগস্ট'২০২৫)