শরৎচন্দ্রের মতো সাহিত্যিক ধর্ম বলতে কি বলতে চেয়েছেন, কোন ধর্ম সম্পর্কে বলতে চেয়েছেন সেটা আমাদের ভালো ক'রে পোষ্টে লেখা বিষয়ের আগে এবং পরে কি লিখেছেন, পথের দাবী গ্রন্থের কত নম্বর পাতায় তিনি একথা বলেছেন সেটা জানতে হবে, পড়তে হবে। আর, যদি তিনি ধর্মের মূল অর্থ জানা সত্ত্বেও একথা ব'লে থাকেন তাহ'লে বুঝতে হবে নিশ্চয়ই তিনি তাঁর ধর্ম সম্পর্কের বক্তব্যে তা ক্লিয়ার ক'রে দিয়েছেন। অথচ সুযোগসন্ধানীরা নিজেদের মতো ক'রে তাঁর বক্তব্যের মাথা আর ল্যাজ বাদ দিয়ে আম জনতাকে ধর্ম সম্পর্কে বিষ সেবন করাচ্ছে, লেখকের প্রতিষ্ঠা, সুনামকে বলাৎকার করছেন নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করার জন্য। আর যদি তিনি আনাড়ির মতন কিছু ব'লে থাকেন ধর্ম সম্পর্কে তাহ'লে তাঁর সম্পর্কে নোতুন ভাবে ভাবতে হবে।
যাই হ'ক, সাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় যখন শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে এসেছিলেন জীবনের পড়ন্ত বিকেলে তখন শ্রীশ্রীঠাকুরের সঙ্গে তাঁর বিয়োগান্তক সাহিত্য অপছন্দ, সাহিত্যে শুধু সমাজের সমস্যার কথা তুলে ধরা, বহুলোকের আত্ম স্বীকৃতি নিয়ে চিঠি, দুঃখের চিত্র, হতাশার
ছবি, বিকৃত মনস্তত্ত্বের অভিব্যক্তি লেখায় তুলে ধরা, ঈশ্বরে অবিশ্বাস, ঘোরতর নাস্তিক ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা চলাকালীন স্পষ্টতই শরৎচন্দ্র অপরাধের ভঙ্গিতে দুঃখের সঙ্গে স্বীকার করেছিলেন নিজের অসহায়তার কথা। তিনি শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে অনুসোচনার সঙ্গে আফসোস ক'রে ব্যথাহত কন্ঠে বলেছিলেন,
"এমন করে কখনও তো ভাবিনি ঠাকুর, এতদিন ভাবনার ধারাটাই ছিল
উল্টো রকমের। সমস্যাটা তুলে ধরেছি, ভেবেছি সমাজ সংস্কারক করবে তার সমাধান। এখন কি আর শেষ সময়ে অন্য ভাবের রচনা সৃষ্টি করতে পারব?"
"ঠাকুর আমার জীবনের প্রথম উপন্যাস লেখার আগে কেন আপনার কাছে এলাম না।"
এর থেকেই বুঝতে পারি শরৎচন্দ্র সম্পর্কে যে তিনি শ্রীশ্রীঠাকুরের কাছে তাঁর ধর্ম, ঈশ্বর, আস্তিক-নাস্তিক, লোকের আত্ম স্বীকৃতি নিয়ে সাহিত্য সৃষ্টি, দুঃখ, হতাশা, বিকৃত মনস্তত্ত্বের অভিব্যক্তি লেখায় তুলে ধরা ইত্যাদি ইত্যাদি সম্পর্কে নিজের ভুল স্বীকার ক'রে আত্মসমপর্ণ করেছিলেন। এবং জীবনের শেষ উপন্যাস 'বিল্বমঙ্গল' রচনা করেছিলেন তিনি শ্রীশ্রীঠাকুরের ভাবে ভাবিত হ'য়ে।
তাই, বালখিল্য এমন অসম্পূর্ণ জ্ঞান নিয়ে কোনও লেখকের কোনও লেখা পোষ্ট ক'রে মানবজীবনকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে যাওয়া ভয়ংকর সামাজিক অপরাধ ও পাপ।
(লেখা ২৯শে নভেম্বর, ২০২৩ )

No comments:
Post a Comment